কুদ্দুস ড্রাইভিং শিখছে।
সে সৌদি যাবে, দুবাই যাবে। আরব দেশ দেখবে আর টাকা কামাবে। তার মন অত্যন্ত খুশি।
কুদ্দুসের বাড়ির সকলেও অত্যন্ত খুশি। তার মায়ের মনে আনন্দ। ছেলে সৌদি যাবে, টাকা কামাবে। তারপর দেশে এসে বোনের জন্য ভাবী আনবে। বাচ্চা কাচ্চা হবে। বাড়িতে ছোটাছুটি করবে, হাঁসের বাচ্চার লেজ হাতাবে।
কুদ্দুসের ড্রাইভিং শেখা কমপ্লিট।
আগে সে লেগুনা চালাতো, তাই গাড়ি চালানো শিখতে সময় লাগলো না। সময়মত সার্টিফিকেট চলে এলো। তারপর পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট। যাবার দিনে গাড়ি ভাড়া করে সবাই তাকে বিদায় দিলো। সেই গাড়ি কুদ্দুস নিজেই চালাতে চালাতে ঢাকা এয়ারপোর্টে নিয়ে গেলো।
সৌদি গিয়েই কুদ্দুস এক খেজুর ব্যবসায়ীর পারসোনাল গাড়ি চালানোর চাকরি পেলো।
সৌদির জনৈক সেই ভদ্রলোক আবার মানুষ ভালো। তারা তাদের ড্রাইভারকে ভালোবাসে। ভদ্রলোকের বউ আরও ভালো। সে কুদ্দুসকে আরও বেশি ভালোবাসে।
এদিকে দিন যায় মাস যায়, আর কুদ্দুস শুধু টাকা গোনে।
দেশে টাকা পাঠায়। তার মা সেই টাকা দিয়ে জমি কেনে, বাড়ি করে, ফকির মিসকিন খাওয়ায়।
বছর ঘুরতেই খেজুর ব্যবসায়ীর ঘর আলো করে ছেলে সন্তানের জন্ম হলো।
ছেলের মার মনে আনন্দ, বাবার মনে বেদনা। ছেলে দেখতে তার মতো হয় নাই। গায়ের চামড়া শ্যামলা শ্যামলা।
এদিকে ছেলে বাবার কোলে আসে না, শুধু কুদ্দুসের কোলে যেতে চায়।
কুদ্দুসকে দেখলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কুদ্দুসের লুঙ্গি ধরে টানে। ছেলের মা কুদ্দুসের দিকে লজ্জা লজ্জা দৃষ্টিতে তাকায়। মাঝেমধ্যে সেও ছেলের সাথে কুদ্দুসের লুঙ্গি ধরে টানে। কুদ্দুস কিছু বলে না। গরিব মানুষের জবান থাকে না।
সে শুধু চুপ করে অর্ডার ফলো করে। কখনও গাড়ি আস্তে চালায়, কখনও জোরে চালায়। সময়মত ব্রেক করে। নিজের হাতেই গাড়ি ওয়াশ করে দেয়। কুদ্দুসের হাত পড়ে বিদেশি গাড়ি সবসময় চকচক করতেই থাকে।
এদিকে ছেলের বয়স এক বছর হয়ে গেলো।
কিন্তু সে আরবি কথা শেখে না। সৌদির ভাষাও বোঝে না। তার আগ্রহ বাংলায়। সে কুদ্দুসের সাথে কুতকুত করে বাংলা বলে।
খেজুর ব্যবসায়ীর মনে অশান্তি। সে এসব আর মেনে নিতে পারছে না। সবকিছু তার কনট্রোলের বাইরে চলে যাচ্ছে। ড্রাইভারের সাথে বউ বাচ্চার এত ঘেঁষাঘেঁষি তার আর ভালো লাগছে না।
সেদিন বাচ্চাটার জ্বর এলো। তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। কিছুই মুখে দেয় না। আবার কুদ্দুসের ডাক পড়লো। কুদ্দুস শিশুটার জন্য পুষ্টিকর খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে গেলো। চামচ দিয়ে মুখে তুলে দিতেই বাচ্চাটা সেই খিচুড়ি গপগপ করে খাওয়া শুরু করলো। তার জ্বর ভালো হয়ে গেলো। আনন্দে কুদ্দুসের চোখে পানি চলে এলো!
কুদ্দুসের কাঁধে হাত রেখে খেজুর ব্যবসায়ী জিজ্ঞাসা করলো, 'কুদ্দুস! হোয়াট হ্যাপেন্ড?'
কুদ্দুস চোখ মুছতে মুছতে বললো, 'নাথিং স্যার। লুক স্যার, ইওর বিল্ডিং, মাই কান্ট্রি সিমেন্ট। আই অ্যাম ভেরি প্রাউড স্যার...'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন