শিবির ও তার গোয়েন্দা কাহিনী

১৯১ পঠিত ... ১৬:৪৪, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪

26

সাল ২০২৬। শিবিরের এক গোপন এজেন্টকে পাঠানো হলো বামপন্থী একটা সংগঠনে। উদ্দেশ্য একটাই—ভেতরের ইনফরমেশন বের করে নিয়ে এসে শিবিরকে সার্ভ করা। ছেলেটা সেখানে গিয়ে বামপন্থী সবার সাথে মিশে গেল, তার আচার আচরণে পরিবর্তন ঘটল, ইসলামী খেলাফতের বদলে সমাজতন্ত্রের জন্য যুক্তি দেওয়া শুরু করল। কেউ বুঝতেই পারল না, সে আসলে শিবিরের এজেন্ট।

ছেলেটা আস্তে আস্তে কট্টর বাম হয়ে উঠল, বড়সড় সাংগঠনিক দায়িত্বও পেল। এরপর বামেরা চিন্তা করল, ছেলেটাকে বড় কাজে নিয়োজিত করা যাক। তারা ছেলেটাকে বামের গোপন এজেন্ট হিসেবে শিবিরে ‘ইন’ করানোর জন্য ভাবল। বামেদের পরামর্শে ছেলেটা বামের গোপন এজেন্ট হিসেবে শিবিরে ঢুকল। সে নিজেকে বামবিদ্বেষী প্রমাণ করার জন্য বামের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করল, সমাজতন্ত্র কেন খারাপ সেটা নিয়ে লেখালেখি শুরু করল, আরও অনেক কিছুই লিখল।

ছেলেটা এখন ডাবল এজেন্ট। প্রথমদিকে সে ‘শিবিরের গোপন এজেন্ট' ছিল। তখন নিজেকে বামপন্থী প্রমাণ করার জন্য শিবিরবিরোধী লেখালেখি করত। এখন সে বামদের ‘গোপন এজেন্ট’ হিসেবে শিবিরে ‘ইন’ হইছে এইটা বুঝানোর জন্য বামের বিরুদ্ধেও লিখে। আর, দুই সাইড থেকে ইনফরমেশন নিয়ে দুই সাইডেই সার্ভ করে।

ফলে দুই দলেই তার গুরুত্ব বেড়ে গেল। দুই দলেই সে পদোন্নতি পেয়ে বড় নেতা হয়ে গেল। কিন্তু যেহেতু সে গোপন এজেন্ট, তার পদোন্নতির বিষয়টা কেউই জানল না।

এদিকে, যেহেতু সে একইসাথে বাম এবং শিবিরের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেছে, সেহেতু সে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে পরিগণিত হলো। বাইরের সবাই ভাবল, সে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থী। কিন্তু সে যে আসলে একজন ডাবল এজেন্ট, তা কেউই জানল না।

বিষয়টা চোখে পড়ল ছাত্রদলের। তারা একইসাথে বামবিদ্বেষী এবং শিবিরবিদ্বেষী এরকম ক্রিয়েটিভ একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে নিজেদের দলে ভিড়ানোর প্রচেষ্টা চালাল। ছেলেটা ছাত্রদলে নাম লেখাল। এবার সে ছাত্রদলের ভেতরকার খবর বের করে এনে শিবির এবং বামদের সার্ভ করতে লাগল। এতে বামেরাও খুশি, শিবিরও খুশি, যেহেতু সে একসাথে দুই দুইটা দলের সিক্রেট ইনফরমেশন কালেক্ট করে দিচ্ছে। এতে করে সে হয়ে উঠল ‘ট্রিপল এজেন্ট’।

ধীরে ধীরে ছাত্রদলে তার গুরুত্ব বাড়ল। তাকে সবাই বিশ্বাস করতে লাগল। এবং তাকে দেওয়া হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব—শিবির এবং বামের ভেতরকার ইনফরমেশন বের করে ছাত্রদলকে সার্ভ করতে হবে। ছেলেটা এই কাজ সানন্দে করতে লাগল। যেহেতু তার কাছে ইনফরমেশন সোর্স আছে।

ছেলেটা এখন ছাত্রদলের সিক্রেট ইনফো শিবির ও বামকে সার্ভ করে, শিবিরের ইনফো বাম ও ছাত্রদলকে সার্ভ করে, এবং বামের ইনফো ছাত্রদল ও শিবিরকে সার্ভ করে।

এবার এল আত্মপ্রকাশের পালা। ততদিনে ছেলেটা তিন সংগঠনেই গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তি হয়ে উঠেছে। তিন সংগঠনেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি ক্যান্ডিডেট সে।

কিন্তু তারমধ্যেই ঘটে গেল একটা বিশাল দুর্ঘটনা। শিবির, বাম এবং ছাত্রদলের বেশকিছু সেন্সিটিভ ইনফরমেশন লিক হয়ে গেল। বেঁধে গেল গ্যাঞ্জাম। বটতলার তিন রাস্তার মোড়ে মুখোমুখি তিন সংগঠন। তিনদিকেই মুহুর্মুহু স্লোগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো ত্রিমুখী সংঘর্ষ। সবাই মেশিনপাতি নিয়ে সামনে। চলছে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। একেবারে রক্তারক্তি অবস্থা।

কিন্তু এসময় কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না তিন সংগঠনেরই সবচেয়ে ত্যাগী এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি ক্যান্ডিডেট ছেলেটিকে। কোথায় গেল ছেলেটি? সবাই তাদের দলনেতাকে খুঁজছে।

এই তীব্র সংঘর্ষের মধ্যেই হুট করে ফেসবুকে দেখা গেল সেই ছেলেটির একটি পোস্ট। সেই পোস্টে ট্রিপল এজেন্ট ছেলেটি লিখেছে—জয় বাংলা! মিশন সাকসেসফুল! প্রাউড টু বি অ্যা মেম্বার অফ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

১৯১ পঠিত ... ১৬:৪৪, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top