মোদি-হাসিনা ল্যাবরেটরির আওয়ামী ও তৌহিদি জনতা

১১ পঠিত ... ২ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে

29

আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিক সমাজ সতত সরকার সমালোচনায় সক্রিয় থাকবে সেটাই প্রত্যাশিত। ৫ আগস্টের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর সেই সমালোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নাগরিকদের সক্রিয়তায় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

কিন্তু এই সমালোচনামুখর নাগরিক সমাজে মিশে থেকে ৫ আগস্টের পতিত ও পরাজিত শক্তির কলাকৈবল্য বেশ চোখে পড়ছে।

আওয়ামীলীগের নিকৃষ্ট ফ্যাসিজমকালে কেউ গ্রেফতার হলেই যে লোককে চেঁচাতে দেখেছি, অরে ডিম দেও, অরে নিয়া অস্ত্র উদ্ধারে যাও; তাকেই গতরাতে যুবদলের একজন কর্মীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে ফেসবুকে লিখতে দেখলাম, আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে! এই বাক্যটা আমরা শেখ হাসিনার সহস্র বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষাদ সিন্ধুতে সহস্রবার উচ্চারণ করেছি। তখন আওয়ামীলীগের একটু সংস্কৃতি করা লোকেরা ইনিয়ে বিনিয়ে বলত, বাগানের আগাছা পরিষ্কার তো করতেই হয়। যে মানুষ আওয়ামীলীগের চোখে আগাছা ছিল, সে ৫ আগস্টের পর মনের মানুষ হয়েছে। বিএনপি ও যুবদলের কর্মীদের ওপর যে ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামীলীগের বেআইনি সরকার; বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা কখনোই ঘটেনি। সেই কংস মামার ৫ আগস্টের পর যে কোনো রকম কুম্ভীরাশ্রু দেখলে তা সুরিয়াল মনে হয়।

সাম্প্রতিক যুবদল কর্মীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাঁতে যে রক্তের নেশা হাসিনা প্রশাসন তৈরি করে রেখে গেছে; সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীতে যে শুদ্ধিকরণ চালানো প্রয়োজন ছিল; তা সম্ভব হয়নি বলেই; আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে জেনারেল আজিজ ও বেনজির ভাইরাস রয়ে গেছে; যা মারণঘাতী।

সরকার যন্ত্র চলে যে প্রশাসন দিয়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে; তাতে ২০০৯ সালের পর যে রিক্রুটমেন্ট হয়েছে; তাতে রীতিমতো পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দেখে নেওয়া হয়েছে শরীরে আওয়ামী নাতসি রক্ত আছে কিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজির এর আগে কখনোই ছিল না। বেশিরভাগ রিক্রুটমেন্ট হতো মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। মেধা তালিকার শেষের দিকে অল্প কিছু প্রার্থী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি পেত। কিন্তু আওয়ামীলীগের শতভাগ রিক্রুটমেন্ট স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে হওয়ায়; শামীম ওসমান, আরাফাত, আসাদুজ্জামান কামাল, হারুন, মনির মনস্তত্বের রক্তপিপাসু নরভোজি লোকেদের খুঁজে খুঁজে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে।

সিনিয়র মেধাবী কর্মকর্তাদের ওএসডি করে কিংবা কমগুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে পিলখানায় মেধাবী কর্মকর্তাদের হত্যা করে আজিজ টাইপের লোকদের দ্রুত প্রোমোশন দিয়ে সামনের সারিতে আনা হয়েছে। বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো যে, ওয়াকার উজ জামানের মতো একজন সফিস্টিকেটেড লোক ঘটনাচক্রে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এত যৌক্তিক মানুষ যে, রাতারাতি সেনা-প্রশাসন না বদলে কাজটা ধীরে ধীরে করছেন। এতে করে আজিজ প্যাটার্নের যেসব আনসফিস্টিকেটেড লোক আছে; তারা সারাক্ষণ ওঁত পেতে আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটিকে ডিস ক্রেডিটেড করতে।

অন্তবর্তীকালীন সরকার সমালোচনার ভাষা দেখে অনায়াসে বোঝা যায়, কে দেশের ভালোর জন্য এই সমালোচনা করছেন আর কে হাসিনা বিরহে তেতো হয়ে অশালীন বিলাপ করছেন।

হেফাজতের শাফি হুজুরের ‘নাস্তিক কতল ওয়াজিব’ ফতোয়াকে কওমি জননী হাসিনা কোনো বেআইনি বয়ান হিসেবে বিচার না করে উলটো শোকরানা মেহেফিলে মিলিত হন। ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাকাণ্ড হাসিনার গোয়েন্দা সংস্থার ‘চলো জঙ্গি জঙ্গি খেলি’ নাটকের অংশ ছিল। হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইসলামাইজেশন ঘটেছে। হাসিনা ২০১৪ সালের পরে ভারতের নরেন্দ্র মোদির মন পেতে সমান্তরাল হিন্দুফিকেশন ঘটতে দিয়েছেন। দুটি বিষাক্ত গোষ্ঠীকে মোদি ও হাসিনার ল্যাবরেটরিতে মোটাতাজা করা হয়েছে। হাসিনা স্থানে স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণ করে কথিত তৌহিদি জনতার সংঘবদ্ধ হবার জায়গা তৈরি করেছেন। আওয়ামীলীগের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মাদ্রাসা ও ইসকনের মন্দির যুগপত তৈরি হয়েছে। ধর্ম থেকে বিষ উদগীরন করে কী করে ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে হয়; তা যেন হাসিনার কাছ থেকে শেখে ভবিষ্যতের ফ্যাসিস্টেরা।

আপনি যে তৌহিদি জনতাকে তার উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য কড়া সমালোচনা করবেন; আপনাকে সে সুযোগ কে দিচ্ছে! কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা প্রগতিশীলতার সুপোরি গালে পুরে এসে পড়ে তৌহিদি জনতার কট্টর আচরণকে গালি দিয়ে ছোটো করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এই রাজনীতিটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ভারতের মৌলবাদি মিডিয়া ঠিক যে ভাষায় বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদিদের গালাগাল করে; ঠিক একই ভাষায় কট্টর আওয়ামী ও বিজেপি পন্থীরা কট্টর ইসলামপন্থীদের গালাগাল করে।

আমার লেখক জীবনের শুরু থেকে ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেবল কট্টর ইসলামপন্থার সমালোচনা করেছি। কারণ আমার মনে হয়েছে, ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি না পেলে সমাজ বসবাস অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্লগ ও ফেসবুক প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও এক শ্রেণির প্রথম প্রজন্মের কট্টর লিবেরেল মুসলমান কট্টর ইসলামপন্থীদের গালি দিয়ে হিন্দুত্ববাদী প্রগতিশীলতা প্রসারের অপচেষ্টা চালালো। লক্ষ্য করলাম, একদল দলান্ধ ও ধর্মান্ধ লোক আরেকদল ধর্মান্ধ লোকের চেয়ে সুপিরিয়র সাজার চেষ্টা করছে।

কিন্তু এক্ষেত্রে আইরনিটা হলো বিজেপির শুভেন্দু টাইপ কিংবা আওয়ামীলীগের খোকন সোনা টাইপের ইনফেরিয়র লোকজন ফর্সা কাপড় পরে প্রগতিশীলতার সুপিরিয়রিটির দাবি করছে। মালয়েশিয়া ও তুরস্কের পক্ষে সহনশীল মুসলিম জনগোষ্ঠী তৈরি সহজ হয়েছে; এর কারণ তাদের ভারতের মতো কংস- প্রতিবেশি ছিল না। যেখানে ইনফেরিয়র হিন্দু মৌলবাদি লোকেরা এসে মুসলমানদের প্রগতিশীলতা শেখাবে।

বাংলাদেশের সামনে এখন দুটি জনগোষ্ঠী নানারকম সংকট তৈরি করবে। হিন্দুত্ববাদ প্রভাবিত আওয়ামী জনতা ও ইসলামপন্থা প্রভাবিত তৌহিদি জনতা। মোদি ও হাসিনার ল্যাবরেটরিতে মোটাতাজা করা এই দুই জাতীয় ধেড়ে ইঁদুর সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করতে সদা সক্রিয়। এই উভয় গোষ্ঠীকে নিষ্ক্রিয় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রতিমুহূর্তে সজাগ থাকতে হবে। আইনের শাসন হচ্ছে, যে কোনো বেআইনি কাজের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা; আর অপরাধীর সংশোধনমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

 

১১ পঠিত ... ২ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top