মানবতাবিরোধী জমজ ভাই

১৪৯ পঠিত ... ১৭:৩০, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫

20

গত কয়েকদিনে অন্তত দুবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা দেখলাম। প্রথমে দেখলাম ভারতের বিজেপির নেত্রী কঙ্গনা রানাউত তার নির্দেশিত ও অভিনীত চলচ্চিত্র ইমার্জেন্সিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটালেন। এরপর ছাত্রশিবিরের একটি প্রকাশনায় আফগানি নামের এক লেখকের বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হলো। জানি না এদের কোনো যৌথতা আছে কিনা; মুক্তিযুদ্ধকে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বর্ণনা করার মাঝে।

কঙ্গনার চোখে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ভারত মাতার একটি সন্তান জন্ম দেওয়া; যে সন্তানের নাম বাংলাদেশ। এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে; তা তার অনমনীয় ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত। কঙ্গনার মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ ভারতের সেই আদি ও অকৃত্রিম ন্যারেটিভ ‘লিখে রেখ এক ফোঁটা দিলেম শিশির’ সুতরাং ভারত মাতার নামে শপথ নিয়ে অধীনে থাকো; এরই স্থূল চিত্রায়ন।

আফঘানির চোখে ‘ভুল করে মুসলমানেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল’, মুক্তিযুদ্ধ ইসলামের ক্ষতি করেছে; ইত্যাদি বহু ব্যবহারে জীর্ণ জামায়াতি প্রচারণার স্থূল প্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল; ফলে তারা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে তৌহিদি জনতার ধর্মীয় জোশে সুড়সুড়ি দিতে চেষ্টা করে। জাতির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্তে ইতিহাসের ভুল দিকে দাঁড়িয়ে থাকলে ৫৪ বছর পরেও যে অস্বীকার ও যৌক্তিকতা দেবার ভূত থেকে যায়; ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এই বয়ান; তারই প্রমাণ।

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, সংস্কৃতি ব্রিগেড ইতিহাসের ভুল দিকে অবস্থান নিয়ে; বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়ে; মোদি সমর্থিত হাসিনার দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করে গত ছয়মাস যেভাবে অস্বীকার ও যৌক্তিকতা দেবার চেষ্টা করেছে; আগামী অর্ধশতক ধরে ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস বিকৃতিতে জামায়াতীয় কায়দায় আওয়ামীলীগ সক্রিয় থাকবে; এটা শিবিরের সাম্প্রতিক ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা দেখে ধারণা করা যায়।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। এ কারণে কঙ্গনা ও আফগানির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পতিত শক্তি আওয়ামীলীগের সমর্থক ও সংস্কৃতি বলয়; কঙ্গনার ইতিহাস বিকৃতিতে স্পিকটি নট থেকে আফগানির ইতিহাস বিকৃতিকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোকান’-এ আগরবাতি জ্বেলে। সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা, ললিতাদি আবার তার বয়ানের ঝাল মুড়ি বিক্রিতে চলে এসেছে।

এমনকি সাড়ে পনেরো বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুকে চিহ্ন হিসেবে অপব্যবহার করে নিকৃষ্টতম ফ্যাসিজম চালানোর পরিণতিতে ৫ আগস্ট পতিত হয়েও এখন কল্পনা করছে, যদি জামায়াত ব্যাশিং-এর ভিড়ের মধ্যে মিশে আবার ফিরে আসা যায় সভ্যতার জগতে।

বাংলাদেশের মানুষের জীবনে মুক্তিযুদ্ধ তো আওয়ামীলীগের লিপ সার্ভিস নয়। মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে তার স্বজন হারানোর স্মৃতি আর সার্বভৌমত্বের আকাঙ্ক্ষার মিনার। যে কারণে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা কখনও তাদের রক্ত-ত্যাগের মূল্য আওয়ামীলীগের স্বঘোষিত মুক্তিযুদ্ধের বয়ানযোদ্ধাদের মতো সম্পদ পাচার ও ক্ষমতা দখলের মুদ্রায় ফেরত চাননি। বরং তারা পাকিস্তান উপনিবেশ সরিয়ে ভারতের ছায়া উপনিবেশ বিস্তারের বিরুদ্ধে সতত সক্রিয় জীবনব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রয়ে গেছেন।

জুলাই বিপ্লব সেই মুক্তিকামী বাংলাদেশ মানসের জাতিস্মরের রেজারেকশান। বৃটিশ-পাকিস্তান উপনিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রাণ দিয়ে যারা মহত্তম মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন; তারাই সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মুক্তি রিক্লেইম করতে বার বার ফিরে আসেন।

অখণ্ড পাকিস্তানের স্বপ্নে বিভোর জামায়াত ও অখণ্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর আওয়ামীলীগ দুটি যুগক্ষণে বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে পেরেছে বাংলাদেশের সতত মুক্তিকামী মানুষের স্পিরিটকে ধারণ করতে না পারায়। তাই তো জামায়াত মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছে; আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-মাতার কোলে সারাজীবন দুলবার অঙ্গীকার হিসেবে উদযাপন করেছে। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিতে এই দুটি দল সবসময় সক্রিয়। রাজনীতিতে এরা একে অপরের লিপ সার্ভিসের ইস্যু এগিয়ে দিয়ে ৫৪ বছর দেশের মানুষকে ব্যস্ত রেখেছে চর্বিত চর্বন ও পুনরাবৃত্তিকর কচলাকচলিতে। এরা দুই মানবতাবিরোধী জমজ ভাই। বাংলাদেশ সমাজের উত্তরণকে পেছন থেকে টেনে ধরে রাখতে এরা সদাসক্রিয়।

১৪৯ পঠিত ... ১৭:৩০, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top