রবির প্রেম BALএর প্রেম

২৮১ পঠিত ... ১৬:৪১, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫

22

আমি খেয়াল করে দেখেছি, যারাই জীবনে সত্যিকার অর্থে মন থেকে নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্তভাবে কাউকে ভালোবেসেছে, তারা সবসময়ই ঠকেছে, খুব বাজেভাবে ঠকেছে!

আমার এক ব্যাচমেট ছিল লেজেন্ডারি ধরনের বদমাইশ, নাম ছিল রবি (ছদ্মনাম)। মেয়েমানুষ বিষয়ক কর্মকাণ্ড বাদে হেন কোনো শয়তানি নাই, যেটা রবি করত না। তার যন্ত্রণায় তার বাবা মা, প্রতিবেশী, স্কুলের টিচার থেকে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত বিরক্ত। তাদের বাসায় এত লোকজন এত রকমের কমপ্লেইন নিয়ে আসত যে, আন্টি একসময় বিরক্ত হয়ে বাসায় চা এবং বিস্কুট রাখাই বন্ধ করে দিলেন। সবাই আসে, চা বিস্কুট খেয়ে কমপ্লেইন জানিয়ে যায়, আন্টির সবই লস।

সেই ছেলে ওয়ান ফাইন মর্নিং এক মেয়ের প্রেমে পড়ল। সিধাসাধা সাধারণ মেয়ে, দেখে আমাদের কাছে আহামরি সুন্দরী কিছু মনে হয় নাই। কিন্তু প্রেমে অন্ধ হয়ে রবি হয়ে গেল পুরোদস্তুর পাগল।

স্কুলে আমি ছিলাম ফার্স্ট বেঞ্চার, বেকুব টাইপের নার্ড। আমার কোনো ব্যাচমেটের এই ধরনের প্রেমে পড়ার ঘটনা আমার নলেজে আসার কথাই না। কিন্তু রবি একদিন আমাকে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে ধরে বসল, নিজেই কাহিনী বলে ফেলল। বিথিকে তার অনেক পছন্দ, অনেক ভালোবেসে ফেলেছে সে। এখন এই মেয়েকে তার লাগবেই। লাগলে বিথির জন্য জীবন দিয়ে দেবে সে। হাযাত যেহেতু ভালো স্টুডেন্ট, কাজেই সে হাযাতের কাছে এসেছে কী করলে বিথিকে পাওয়া যাবে, সেটা জানতে।

আমি ওর কথা শুনে বাকহারা হয়ে গেলাম। মেয়ে কীভাবে পটাইতে হয়, সেটা জানলে যে আমারই একটা গার্লফ্রেন্ড এবং আর দুইটা সাইডচিক থাকার কথা, এইটা ওর মাথায় কেন ঢুকছে না, সেটা ভেবেই আমি মূলত বাকহারা। তারপরও তাকে বললাম, বিথির বান্ধবীদের কাছে খোঁজ নিয়ে তার পছন্দ অপছন্দ জানতে, হয়তো হেল্প হতেও পারে।

বদমায়েশ হিসেবে নাম কামানো রবি একদিন হুট করে মাথার চুল আঁচড়ে শার্টের উপরের বোতাম লাগানো শুরু করল, কলোনির ডাব পাড়া বাদ দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়া শুরু করল, লোকজনের হাড় জ্বালানো বাদ দিয়ে মুরুব্বিদের সালাম দেওয়া শুরু করল। শুধু তা-ই না, সে পড়াশুনাও শুরু করল। কোনোদিন এ প্লাস না পাওয়া এই ছেলে সে বছর ২য় সাময়িক পরীক্ষায় কৃষিশিক্ষায় ৮৬ তুলে ফেলল, আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ৮১ পেয়ে নিজের খাতার দিকে আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, প্রেম তো দারুণ জিনিস!

অথচ এত কিছু করার পরেও রবি বিথিকে পেল না। সে ভালো ছেলে হয়ে যাওয়ায় বিথির বান্ধবীদের কাছে হয়ে গেল ভেড়া, তারা এটা নিয়ে করত হাসাহাসি। ফলাফল, একতরফা প্রেম হয়ে গেল বিথির কাছে দুর্বলতা। যেই রবি বাড়তি কিছুর প্রত্যাশা না করে শুধু বিথির মন পাওয়ার আশায় এত ডেডিকেটেডলি এত কিছু করল, সেই বিথি রবিকে তার মনে সামান্য জায়গাটুকুও দিল না।

এই যে ভালোবাসার মানুষের কাছে একটু রিকগনিশন, একটু ভ্যালিডেশন পাবার আশায় মানুষ এত কিছু হারায়, কেন হারায় সেটা তখন আমি জানতাম না। তবে এই যন্ত্রণাটা কেমন হতে পারে, সেটা এখন জানি।

এরকম একতরফা ভালোবেসে কষ্ট যে শুধু আমার ব্যাচমেট রবি পেয়েছে, তা না। কষ্ট পেয়েছে জননেত্রী, কওমী জননী, মাদার অফ হিউম্যানিটি, চ্যাম্পিয়ন অফ দি আর্থ শেখ হাসিনাও। ভারতকে নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্তভাবে ভালোবাসলেন, ভারতের জন্য এত সব চুক্তি করলেন, নিজের জন্য নিজেদের জন্য চাইলেন না কিছুই। দুহাত ভরে শুধু দিয়েই গেলেন। শুধু যে দিলেন, তা-ই না, ক্ষমতা হারিয়ে নিজে চলে পর্যন্ত গেলেন।

অথচ ভারত তাকে কী দিল? দিল একটা সিনেমা, যেখানে তার বাবাকে করা হলো চূড়ান্ত অপমান। দেখানো হলো, তার বাবা নাকি ৭১ এ স্বাধীনতার পরে বলেছিলেন, ভারতমাতা নিজের হাতে বাংলাদেশকে জন্ম দিয়ে আমাদেরকে উপহার দিয়েছে।

অপমান এখানেই শেষ না। আরও দেখানো হলো, শেখ মুজিবুর রহমান নাকি ৭৫ এ পালানোর সময় দরজা লাগাতে গিয়ে আর্মির গুলি খেয়ে কাপুরুষের মতো মৃত্যুবরণ করেছেন।

পৃথিবীতে অনেক রকমের কষ্ট আছে। কিন্তু নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে একতরফাভাবে ভালোবেসে যাওয়ার পর এরকম ঠক খাওয়ার কষ্ট, হৃদয়ভাঙার হাহাকার আর যন্ত্রণার কাছে বোধ হয় সব যন্ত্রণাই নস্যি!

I can feel you Apa, I can feel you!

২৮১ পঠিত ... ১৬:৪১, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top