এলাকার সবাই তাকে সবজান্তা বল্টু হিসেবেই জানে। এমন কোনো প্রশ্ন নেই যার উত্তর সে জানে না। এক কথায়, এলাকার যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রধান আশ্রয় সে। আর এইজন্য বল্টু সবার প্রিয়।
কিন্তু আজ সকালে বল্টুকে সবাই দেখতে পেল অদ্ভুত অবস্থায়। খালি পায়ে রাস্তায় বসে আছে। পায়ের উপর পা তুলে রাস্তার ঠিক পাশেই বসা দেখে পাশ দিয়ে যাওয়া মানুষজন জিজ্ঞেস করতে শুরু করল, কী হয়েছে বল্টু? এভাবে বসে আছ কেন?
বল্টুর উত্তর শুনে সবার চমকে যাবার উপক্রম। সে উত্তরে বলল, জুতা খুঁজছি।
লোকেরা আরও অবাক হয়ে বলল, তোমার জুতা হারিয়েছে? তাহলে যেখানে হারিয়েছে সেখানে খুঁজছ না কেন? এখানে বসে কি খুঁজে পাবে?
বল্টু গম্ভীর মুখে বলল, আমার জুতা তো আমার আপন, আমাকে ছাড়া আর কোথায় যাবে? ফিরে আসবে, দেখ। তোমরা বরং ডিস্টার্ব করো না। আমাকে একটু শান্তিতে খুঁজতে দাও। তোমাদের জ্বালায় শান্তিতে খুঁজতেও পারব না?
এক প্রতিবেশী রসিকতা করে বলল, কুকুর নিয়ে যেতে পারে, একবার আশপাশ ঘুরে দেখো।
বল্টুর সোজা উত্তর, ভাই, কুকুর তো দুই পায়ে জুতা পরতে পারবে না। আর চার পায়ের জন্য আমার দুই পাটি জুতা তো যথেষ্ট না। নেবে কেন?
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, তোমার জুতা হারানো কী সংকেত দিচ্ছে, ভেবেছ?
বল্টু গভীর দর্শনের মতো বলল, এই হারানো জুতা আমায় বোঝাচ্ছে, আমার সব প্রতিবেশী আমার জুতার জন্য চিন্তিত, কিন্তু খুঁজতে কেউ ব্যাকুল নয়।
এদিকে বল্টুর মা চিন্তায় পড়ে গেলেন। সকাল থেকে বল্টু খালি পায়ে রাস্তায় বসে আছে। খেতে দিলেও বলল, জুতা ফিরে এলে আমাকে জানিও, তখন খাব।
দুপুরের খাবার দিতে গিয়ে মা বললেন, জুতা না পেলে নতুন জুতা কিনে নিস। এভাবে বসে থেকে লাভ কী?
বল্টুর উত্তর, মা, আমি যদি হারিয়ে যাই, তুমি কি আরেকটা বল্টু নিয়ে আসবে?
মা রেগে বললেন, তোকে সামলাতে গিয়ে আমার যে অবস্থা, আগে একবার সত্যি সত্যি হারিয়ে যা, তারপর সিদ্ধান্ত নেব!
বিকেল গড়িয়ে গেল। বল্টুর জুতা এল না, বল্টুও ঘরে ফিরল না। ঠিক তখন বল্টুর ছোটোবোন স্কুল থেকে ফিরে এল। বল্টুর অবস্থা শুনে বলল, ভাইয়া, তোর জুতা তো খাটের নিচে। সকালে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিলাম, তখন রেখে দিয়েছিলাম।
বল্টু জগতের সকল বিস্ময় নিয়ে এবার ছোটোবোনকে বলল, আসলেই? আমার তো মনে হচ্ছে জুতাটা পুরো দার্শনিক হয়ে গেছে। খাটের নিচ থেকে চাইলেই কিন্তু বের হয়ে আসতে পারত, কিন্তু ও আসলে চাচ্ছিল আমি আরেকটু ধৈর্যশীল হই। আসলে জুতাটা আমায় সহনশীল হইতে শিখাইল।
বল্টুর কথায় সবাই হেসে হাফ ছেড়ে বাঁচল সারাদিন পর। আর বল্টু? সে তার ‘দার্শনিক’ জুতা পরে চুপচাপ ঘরে ফিরে গেল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন