যুগে যুগে সমাজ আমাদের জন্য অনেক ভালো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে বাল্যবিবাহ অন্যতম! আধুনিক সমাজের তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ মানুষদের চোখে এটা সমস্যা মনে হলেও, আসুন দেখি কীভাবে এটি আসলে এক অভূতপূর্ব আশীর্বাদ!
১#
অনেক বাবা-মাই আছেন যারা দুশ্চিন্তাপ্রিয়। দুশ্চিন্তা না করলে তাদের ভালো লাগে না। সপ্তাহে একবার হাইপ্রেশার, দুইবার স্ট্রোক আর একবার ডায়াবেটস হাই করে না ফেললে অশান্তি লাগে। তাদের জন্য মেয়ের বাল্যবিবাহ দেওয়া হতে পারে দারুণ সমাধান। বাল্যবিবাহের শিকার মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিনা? বাচ্চা নিতে গিয়ে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে কিনা? শ্বশুরবাড়িতে ফলমূল কম পাঠানোয় মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিনা?—এইসব নানান বিষয়ে টেনশন করার একমাত্র উপায় মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিয়ে দেওয়া।
২#
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চিন্তার বোঝা বাড়ে। মনের মধ্যেই কোথায় পড়ালেখা করবে, ক্যারিয়ার কী হবে, ড্রিম জব কেমন হবে? চাকরি করবে নাকি ব্যবসা? জীবনটাকে কতটা সুন্দর করে সাজাবে! বাবা-মা আর নিজের পছন্দের মানুষ নিয়ে কতটা সুখে থাকবে। এমন নানান চিন্তা মেয়েদেরকে পেয়ে বসতে পারে। মেয়েদেরকে এইসব চিন্তা একদমই করতে দেওয়া যাবে না। ঘাড় চেপে ধরে বাল্যবিবাহ দিয়ে দিলে এইসব চিন্তার সুযোগ আর পাবে না তারা।
৩#
বাল্যবিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার মেয়ের শৈশব-কৈশরের সুন্দর সময়টাকে মেরে মাটিচাপা দিয়ে দিতে পারবেন। এতে মাটির উর্বরতা বাড়বে। শুধু শৈশব-কৈশর না—বাল্যবিবাহ দেওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত শারীরিক চাপের কারণে আপনার মেয়ে মারাও যেতে পারে। মারা গেল তো আরও, এনে মাটি দিয়ে দেবেন। কবরস্থানের আশেপাশে ফলন ভালো হবে।
৪#
বাল্যবিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নানা জটিলতায় আপনার শরীর দ্রুতই বুড়িয়ে যাবে। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দিলে বয়স ১৮ হতে হতেই তাকে দেখাবে ৪৮ বছর বয়সীদের মতো। এভাবে একসময় আপনার মেয়েকে ধীরে ধীরে আপনার সমবয়সী লাগবে। এই সুযোগ একদমই মিস করা যাবে না।
৫#
প্রতিবছর বাল্যবিবাহের ফলে গর্ভধারণে জটিলতা ও মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা হয় অনেক। আশার কথা হলো, এতে কষ্ট পাবার কিছু নেই। বাংলাদেশে আয়তনের চেয়ে বেশি জনসংখ্যার বাস। একটি বিশেষ সংখ্যক মাতৃমৃত্যুর ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনাই বেশি। এতে করে মেয়ের বাবা মায়ের কষ্ট হলেও দেশ ও দশের উপকারই বেশি।
৬#
অপ্রাপ্তবয়স্ক বয়সে সন্তান জন্ম দিলে রোগা-অপুষ্টিতে ভোগা শিশু জন্ম নেবার সম্ভাবনাই বেশি।
এই অপুষ্টিতে ভোগা কঙ্কালসার শিশুরা আমাদের জন্য একপ্রকার আশীর্বাদ। এরাই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অল্প জায়গা নিয়ে বসে, যার ফলে মোটাসোটা মানুষরা জায়গা করে নিতে পারেন। প্রকৃতির কী চমৎকার ভারসাম্য!
৭#
আপনার যদি ফার্মেসি থাকে তাহলে আজই আপনার মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিয়ে দিন। বাল্যবিবাহ দেওয়ার মাধ্যমে সে সারাবছর অসুস্থ থাকবে, তার কাছে ঔষধ বিক্রি করবেন। ফার্মেসির ব্যবসা বাড়বে। নিজের ফার্মেসি না থাকলেও বাজারে ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে আজই মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিতেই পারেন।
৮#
বর্তমান সময়ে গৃহপরিচারিকা কিংবা বুয়া পাওয়া যায় না বললেই চলে। এই সংকটের সময়ে বাল্যবিবাহ হতে পারে চমৎকার একটি সমাধান।