মধুখালি গ্রামে ডাকাত তাড়ানোর গল্প

২৮ পঠিত ... ৯ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে

মধুখালি গ্রামে কি পূর্ণিমা কি অমাবস্যা; ডাকাতেরা হানা দিত লোকালয়ে। হাটুরেদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতো মালামাল। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে স্বর্ণালংকার-টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যেতো। গ্রামের একমাত্র ব্যাংকেও ডাকাত পড়েছিলো। মহাজনের গদিঘর, সমবায় সমিতির অফিস; কোথাও ক্যাশবাক্সে টাকা-পয়সা জমা আছে; এমন জানলেই ডাকাতেরা এসে অস্ত্রের মুখে সব নিয়ে যেত।

ব্যাপারটা অসহ্য হয়ে গেলে গ্রামের তরুণেরা রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিতে শুরু করে। ডাকাতেরা তরুণদের ওপর চোরাগুপ্ত হামলা করতে শুরু করে। কয়েকজন তরুণ ডাকাতের গুলিতে মারা গেলে; বিক্ষুব্ধ হয়ে তরুণদের বাবা-মা যোগ দেয় গ্রাম পাহারায়। অমাবস্যা রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গ্রামে এলে সবাই মিলে তাদের ঘিরে ফেলে। ডাকাত সর্দার কিছু সঙ্গী সাথীসহ পালিয়ে গেলেও কিছু ডাকাত ধরা পড়ে যায়। ডাকাত ধরার ঐক্যে গ্রামের কিছু ছিঁচকে ও সিঁদেল চোর অংশ নেয়। গ্রামবাসী খুব খুশি হয়। ভাবে চোরগুলো হয়তো সাধু হয়ে গেছে।

ডাকাত ধরার কিংবদন্তীকে ঘিরে মধুখালী গ্রামে তৈরি হতে থাকে রুপকথা। গ্রামের হাটে মঞ্জু মিয়ার চায়ের দোকানে বসে আখতার শেখ বলতে থাকে, আমি একাই ডাকাত তাড়াইছি, এই দাবি করিনা; কিন্তু গ্রামবাসীরে একত্র করার ক্ষেত্রে আমার অবদান অস্বীকার করবো, এমন কি কেউ আছে। উপস্থিত লোকেরা মাথা নাড়ায়, হ আখতার ভাই; আমরা আপনের কাছে ঋণী।

আখতারের এই কৃতিত্ব দাবী করার খবর মজনু মিয়ার গদি ঘরে পৌঁছাতেই মজনু উত্তেজিত হয়ে পড়ে, অই মিয়ারা আমি যে পোলাপানরে  চা বিড়ির টেকাটুকা দিয়া এক কইরা রাখছিলাম, সেইডা ভুইলা গেলে কি চলবে! উপস্থিত লোকেরা বলে, হ মজনু মিয়া আপনেই সবকিছু করছেন।

আকতার ও মজনু ডাকাত ধরার সব কৃতিত্ব নিয়ে যাচ্ছে দেখে মসজিদের ইমাম আবু বকর খোতবার সময় বলে, মসজিদের মাইক থিকা ডাকাত আইছে ডাকাত আইছে ঘোষণা না দিলে; দেখতাম কে কত ডাকাত ধরে! উপস্থিত মুসল্লিরা বলে, হ হুজুর আমরা মাইকে ঘুষণা শুইনাই ডাকাত ধরছি।

আকতার, মজনু, বকর ডাকাত ধরার সব কৃতিত্ব নিয়ে ফেলছে দেখে গ্রামের গাছলা কবিরাজ বলে, আমি মধুখালির চাইরপাশে গাছের গোড়ায় তাবিজ পুঁইতা দিছিলাম। ডাকাত ধরা না পইড়া যাইবো কই!

গ্রামের কাশেম মাস্টার অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে ধমক দেয়, রাখো মিয়া অগোর কথা; এই পোলাপানগুলি যারা ডাকাত ধরতে গিয়া জীবন দিলো, এগো এই ডাকাত ধরার শিক্ষাটা তো দিছি আমি। শিক্ষকের ওপর আর কেউ নাই; যে পোলাপানগো ভালো কামে ঠেইলা দিতে পারে।

মধুখালির একমাত্র বেতার শিল্পী মহব্বত আলী এসব শুনে হো হো করে হেসে দেয়, মধুখালিতে একমাত্র তারকা হইলাম আমি; পোলাপান যে কোন কাজে আমার মুখের দিকে চাইয়া থাকে। আমি  "ডাকাত ধইরা পকাত করো; ডাকাত মাইরা ভকাত করো", এই গান বাইন্ধা অগো শিখাইছিলাম আমি। মূল কামডা তো আমি করছি।

গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শ্যামা বাবু বলে, ডাকাত ধরতে গিয়া আহতদের চিকিতসা দিলাম আমি; আর তোমরা আমার নামডাও নিতেছো না; ব্যাপার কি! ডিসপেনসারিতে বসে থাকা রোগীরা কঁকাতে কঁকাতে বলে, আপনেই সব করছেন গো ডাক্তার বাবু।

গ্রামের ‘এসো সাইকেল চড়ি’-এনজিও আপা রুকাইয়া বানু বলে, এই ডাকাত ধরার জন্য মধুখালির মা বোনেদের জড়ো করছি তো আমি; তা ছাড়া আমার লাঠির বাড়িতে এক ডাকাত যে মাটিতে লুটাইয়া পড়লো; সেই ঘটনার সাক্ষী সবাই। শেফালি, জরিনা, কল্পনা, আলপনা চোখ বড় বড় করে বলে, হ আমরা হক্কলে দেখছি রুকাইয়া আপা ডাকাতরে লাঠির বাড়ি দিছে।

ডাকাত ধরার কৃতিত্বের গল্পের শাখা-প্রশাখা বাড়তে থাকে। ওদিকে ছিঁচকে চোরেরা আবার সিঁদকাটা শুরু করে। রাতের অন্ধকারে হাটুরের চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেবার কাজটাও তারা শুরু করে। কারণ পুরোনো ডাকাতেরা নেই; তাই ছিঁচকে চোরের মনোপলি কি থাকবে না!

ডাকাতদের যে ইনফর্মারেরা মধুখালিতে বসবাস করে; তাদের আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা স্থানে স্থানে বলে বেড়াতে শুরু করে, যেইহারে চুরি ছিনতাই বাড়তেছে; আগেই ভালা আছিলাম।

ডাকাতের ইনফর্মার কায়েস মিয়া মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়, সামনের দিনগুলিতে সাবধানে বাঁচেন গো সবাই। রাইতে বাড়ির বাইরে যাওয়ার দরকার নাই। সূর্য ডুবতেই খিল দিয়া ঘরে ঢুকেন। বাচ্চারা তাড়াতাড়ি ঘুমাইয়া পড়ো।

মধুখালির মানুষ ভয়ে জড়ো সড়ো হতে শুরু করে। একে তো ডাকাত ধরার কৃতিত্ব কার বেশি এই কলহে মধুখালি জুড়ে অশান্তি; তার ওপর ডাকাতের ইনফর্মারদের সারাক্ষণ ভীতি ছড়ানো। এরি মাঝে ইনফর্মার কায়েস গ্রামের পাশের গহীন অরণ্যে এক ভাঙ্গা মন্দিরে ঘাঁটি গাঁড়া ডাকাত সরদারকে বলে আসে, পরিস্থিতি যা দাঁড়াইতেছে; এইবার দেখবেন মধুখালির লোকেরা আপনেরে ফুলের মালা দিয়া গ্রামে ফিরাইয়া নিতে আইবো।

২৮ পঠিত ... ৯ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top