আওয়ামীলীগের নেতারা কারাগারে থেকে বিবর্ণ হয়ে গেছেন। কিন্তু ইনু ও মেনন যেন ঝকঝক করছেন। এই গুনটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারদের কাছ থেকে পাওয়া। জমিদারি চলে গেছে তো কী হয়েছে! ঠিকই ধোপদুরস্ত পাজামা পাঞ্জাবি পরে, পায়ের চটিটা একটু পালিশ করে, মুখে একটু স্নো মেখে, ঘাড়ে বুকে পাওডর দিয়ে আকাশ বাণী শুনতে বসে যাবেন রেডিও থাবড়ে। পরিপাটি করে চুল আঁচড়ানো, চোখ বন্ধ করে তিনি কানন বালাকে দেখতে পান, মাথায় একহাত রেখে আরেক হাতের আঙুলের মুদ্রায় দেবী পদ্ম এঁকে যান। এমন সময় পুলিশ এসে ইনু ও মেননের তন্দ্রা ভেঙে বলে, চলুন কত্তা আপনেদের কোটে যাবার সময় হয়িচে।
কয়েদিদের ভ্যানে চড়ে ইনু ও মেনন কুষ্টে ও বইশালের জমিদারের ভঙ্গিতে বসে থাকেন। পলকের কাঁধে হাত রেখে ইনু বলেন, এত ঘাবড়ে যেও না। ভারতবর্ষের ওপর আস্থা রাখো; ও লোগ কুচ কারেঙ্গে।
পলক বিড়বিড় করে বলেন, মহানায়ক শিখিয়েছেন লড়াই করে বাঁচতে হবে।
একটু দূরে বসে দরবেশ দোয়া ইউনুস পড়ছেন। জাকির নায়েক তাকে কতগুলো আমল লিখে দিয়েছিলেন, সেগুলো পড়ছেন দিনমান। চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে, আপা তাকে হেলিকপ্টার থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। তার পরিবর্তে তারেক সিদ্দিকীকে নিয়েছিলেন। এই দুঃখ দরবেশ জীবনেও ভুলতে পারবেন না।
ইনু এবার শাজাহানকে বলেন, সাজগোজ তোমার জমিদারের মতোই হয়েছে; কিন্তু হাসিটা গোমস্তার মতো; হাসিটা বদলাও। জমিদার বাবুর ঠোঁটের কোণে হাসি ঝিলিক দিয়ে আটকে যেতে হয়।
আমু, আনিসুল প্রথম দিকে একটু ঘাবড়ে গেলেও; প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ে পশ্চিম সীমান্তে আশার ঝিলিক দেখছেন; দুঃখ একটাই কারাগারে আনন্দবাজার পত্রিকা পাওয়া যায়না।
দীপুমণি বেশ মহীয়সী চাঁদপুরের জমিদার সেজে গুন গুন করে রবীন্দ্র সংগীত গাইছেন। মেনন ফ্যাসফেসে কন্ঠে তা অনুসরণ করেন।
দস্তগীর আর রাজ্জাক কোমল চিত্তের মানুষ; তারা ৫ আগস্টের শক এখনো হজম করে উঠতে পারেননি। তাই তো তাদের উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে।
আনিসুল তাদেরকে বোঝান, এই মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে। শাস্তির ভয় নাই। ইলেকশন পর্যন্ত সহ্য করুন। তারপর বেয়াইয়েরা ক্ষমতায় এসে গেলে দাদাবাবুরা তাদের ঘোড়া উপহার দিয়ে আমাদের জামিনের ব্যবস্থা করে দেবে। আর জামিন যদি না-ও দেয়; রাতে জেলার সাহেব গাড়িতে করে পদ্মা সেতুতে হাওয়া খেতে নিয়ে যেতে পারবে।
আনিসুলের নিজের মনের মধ্যে একটাই দুঃখ কুট কুট করে, ব্যাটা আসাদুজ্জামান কামাল একটা বোকা লোক; তবু ঠিকই সীমান্ত পার হতে পারলেন; কিন্তু এতো চালাক চতুর লোক হয়েও আইনের জালে আটকে গেলেন তিনি।
পত্রিকায় কুয়েটে সংঘর্ষের খবর পড়ে ইনু উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, এখন স্থানে স্থানে এমন অন্তর্দ্বন্দ্ব হবে। এরা দুর্বল হয়ে পড়বে; তখন ঠিকই যুবলীগ এসে একদিন ট্যাংকের উপর নেচে আমাদের ফুলের মালা দিয়ে জেলখানার গেটে বরণ করবে। স্বার্থপর হাছান মাহমুদ নয়, এবার আমি হবো চিরস্থায়ী তথ্যমন্ত্রী।
আদালতের হাজিরা থেকে ফিরে মেনন ঘোষণা করেন, আর দুঃখ তাপে ব্যথিত চিতে দিনযাপন নয়; এখন থেকে কাসিনো চলবে। আমি পুলিশকে দিয়ে তাস কিনিয়ে আনিয়েছি।
দরবেশ বলেন, টাকা-পয়সা নয়; আমি বলি কি খেজুর দিয়ে জুয়া খেলুন। খেজুর পবিত্র ফল, তাতে গুণাহ কিছুটা কমবে। এই নিন সৌদি আরবের খেজুর।
দীপুমণির সঙ্গে বসে লুডু খেলতে খেলতে পলক গুন গুন করে গান করেন, বুবু আমার বুবুজান, তুই যে আমার প্রাণের প্রাণ।
রাজ্জাক তাদের পেয়ারা দিয়ে বলেন, আমার বাগানের উন্নত ফলনশীল পেয়ারা। ছেলেটা দিয়ে গেলো দেখা করতে এসে।
মৃণাল ঘরের কোণে একটা গণেশের মূর্তি রেখে পূজা পাঠ শুরু করে। তার মন্ত্রপাঠ শুনে আবার ইনু ও মেননের মধ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারের ভাবটা প্রকট হয়ে ওঠে। তারা দু'হাত জোড় করে প্রার্থনায় অংশ নেন। চোখ বন্ধ করলে দেখেন, লাল টুকটুকে রং-এর মেঝের ওপর আলপনা আঁকা; দীঘল বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলে ঢাউস হেঁসেল ঘর; সেখানে ইয়া বড় এক রুইমাছ কাটা চলছে; মোড়ায় বসে জমিদার গিন্নী আঙ্গুল নাঁচিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন, মুড় মুড়ে করে ইলিশ মাছ ভাজতে হবে। উঠোন জুড়ে দৌড়াদৌড়ি করছে চাকর-বাকর। খাজাঞ্চি তার লালখাতা বাগিয়ে ধরে জমিদার বাবুকে দেখাচ্ছেন খরচের হিসাব।
কলকাতা থেকে রুপস্বিনী বাঈ এসেছেন নৃত্য গীতে বসন্ত বরণে। জলসা ঘরের ঝাড়বাতি পরিষ্কার করছে খগেন, বহু পুরাতন ভৃত্য।
নক্সী পাঞ্জাবি পরে জমিদার বাবু কানের লতিতে খুশবু মাখাচ্ছেন। তারপর রেশমী চাদর ঢাকা তক্তপোষে কোলবালিশে হেলান দিয়ে বেলিফুলের বাজুবন্ধের সুবাস নিচ্ছেন। সেতারের ঝালারে ঘরের পর্দাগুলো দুলছে। রুপস্বিনী বাঈ গান ধরেছেন,
পিয়া ভোলো অভিমান,
মধুরাতি বয়ে যায়, পিয়া, পিয়া।
পিয়া ভোলো অভিমান।
কেনো আঁখি ছলো ছলো ?
ওগো কথা কিছু বলো
দূরে থাকা কি গো সাজে
মায়া ভরা জোছোনায়..
পিয়া ভোলো অভিমান..
পুলিশ এসে তাদের তন্দ্রা ভেঙ্গে বলে, ও কত্তা, দস্তগীর সাহেব সালাম দিয়েছেন; উনার বাড়ি থেকে আজ রুই পোলাও এসেছে। উনি এই দাওয়াত পৌঁছে দিতে বলেছেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন