তেত্রিশ দিন কেটে গেলো, টিকার মেসেজ আসেনি।
অনেকদিন আগে সুরক্ষা অ্যাপ বলেছিলো,
অপেক্ষা করো দাদাঠাকুর,
কিছুদিনের মধ্যেই মেসেজ পাবে।
এরপর তুমি কেন্দ্রে যাবে, লাইন ধরবে, বড়বড় মানুষের ধাক্কা খাবে।
বগলের গন্ধে অতিষ্ঠও হয়ে যেতে পারো।
অপেক্ষা করতে করতে
এক সময় ফুস করে
তোমার বাহুর ভেতর সুঁই ঢুকবে...
অনেকদিন কেটে গেলো।
সেই মেসেজ আর এলো না।
দীর্ঘ এক মাস প্রতীক্ষায় আছি।
পাশের বাসার ডাক্তার নরেশবাবু বলেছিলো,
ইয়ে মানে, মাঝেমধ্যে মেসেজ আসতে একটু আধটু লেট হয়, বুঝলেন?
চিন্তার কোনো কারণ নেই।
আমরা পাশে আছি ,
আস্তেধীরে সব্বাইকে টিকা দেয়া হবে।
নরেশবাবু, আমি আর কত অপেক্ষা করবো?
করোনায় মরে লাশ হয়ে শ্মশান পৌঁছুলে
তারপর আমার টিকার মেসেজ আসবে?
ভিখারির মতো কেন্দ্রের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভেতরে টিকা- উৎসব।
আবালবৃদ্ধবনিতা সুখী চেহারা নিয়ে ফিতার মতো
লাইনে দাঁড়িয়ে,
কেউ কেউ নগ্নবাহুর ঝপাঝপ ছবিও তুলছে।
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি।
টিকা দিয়েছে পাশের বাড়ির চিন্ময়, গৌরাঙ্গ, জামশেদরা,
পাকনা চুলের অঞ্জুশ্রীও বাদ যায়নি।
আমি জানালার ধারে বসে
কেবল তাদের যাওয়া আসা দেখতে দেখতে
মেসেজের জন্য অপেক্ষা করেছি।
রমলা আমার কাঁধ ছুয়ে বলেছিলো,
দেখো, একদিন আমরাও... (টিকা দেবো)
রমলা এখন মৃত।
কোভিড হয়েছিলো।
আমাদের দেওয়া হয়নি কোনো টিকা।
সেই প্রেমস্নাত রমলাকে, সেই টিকা উৎসবকে— আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না।
এখনো মেসেজ আসেনি।
কথা রাখেনি সুরক্ষা অ্যাপ,
তার গায়ে এখন শুধু ধোঁকাবাজির গন্ধ...!