রবীন্দ্রনাথের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ গানে তুই শব্দটি ব্যবহারে বিক্ষুব্ধ হন নারী অধিকার কর্মীরা। তারা মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ পুরুষদের নাহয় তুই বললেন, কিন্তু নারীদেরও তুই বলে হ্যারাস করেছেন। প্রেসক্লাবে এ নিয়ে সেমিনার হয়। সেখান থেকে দাবি জানানো হয়, রবীন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করতে হবে। তাকে আদালতের পাঁচতলায় হেঁটে ওঠাতে হবে লিফট বন্ধ রেখে।
সাড়ে চুয়াত্তর জার্নালে গলায় গামছা দিয়ে টেনে আনা হয় কবিকে। উপস্থাপক ‘ক’ মিট মিট করে হেসে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী মনে করেছেন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলেই তিনি মুখে যা আসবে তাই বলবেন। আমাদের সঙ্গে দুই অভিজ্ঞ সাংবাদিক খ ও গ রয়েছেন তাকে জেরা করতে।
নারী সাংবাদিক খ প্রশ্ন করেন, আপনি কি সবাইকে আপনার জমিদারীর প্রজা ভেবেছেন যে এমন তুই তোকারি করেছেন গানে গানে। এই জমিদার মানসের জন্য আপনাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
: আপনি শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে খোঁজ নিয়ে দেখুন। আমি কক্ষণো কোনো কৃষককে তুই বলিনি।
গ ঠেস দিয়ে বলেন, জানা আছে জানা আছে; আপনার ঘরে বাইরে উপন্যাস পড়েই বুঝেছি, আপনি কীভাবে জমিদারকে মহৎ দেখাতে চেষ্টা করেছেন। সেইখানে আপনি স্বদেশী চেতনার লোকেদের লুণ্ঠক ও প্রতারক হিসেবে দেখিয়েছেন। আপনাকে জবাব দিতেই হবে, আপনি আমাদের তুই তোকারি করেছেন কেন!
খ জিজ্ঞেস করে, আপনার এত বড় দাড়ি কেন! আপনি কি জামায়াতে ইসলামি পার্টির লোক; আলখাল্লা দেখে তো মনে হয় আপনি পেয়ারে পাকিস্তান।
: পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে আমি মারা যাবার পরে। অযথা আমাকে পাকিস্তানের সঙ্গে জড়াবেন না।
উপস্থাপিকা ক কটাক্ষ করে বলেন, উনি আসলে আফঘানিস্তানের তালেবান, কাবুলিওয়ালার প্রতি প্রেম দেখলেই বোঝা যায়। আপনি এত লম্বা কেন? আপনার পূর্ব পুরুষ কি আফঘানিস্তান থেকে এসেছিল।
সাংবাদিক খ বলেন, হতেও পারে; মুসলমান পীর প্রীতির কারণে উনার পূর্ব পুরুষকে হিন্দু একঘরে করেছিল। কেউ ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে মিশত না।
এইবার সাংবাদিক খ রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ‘মি টু’ প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে বলেন, আমাদের খুলনার মেয়ে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করে তারপর এত কষ্ট দিলেন কেন! ওদিকে কাদম্বিনী কেন মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই। আপনার বিচার হওয়া উচিত।
উপস্থাপক চেপে ধরেন, কী উত্তর দেননা কেন! এখন কথা বলছেন না কেন!
রবীন্দ্রনাথ বলেন, আমি ভাবছি, ভিত্তোরিয়া ওকাম্পোও নারী, আর আপনারাও নারী; অথচ বাক সক্রিয়তায় কত পার্থক্য!
সাংবাদিক গ বলেন, ভিত্তোরিয়া ওকাম্পো তো আপনার মিউজ; এখানেও আপনার মেল শভিনিজম খুব স্পষ্ট।
সাংবাদিক খ পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, আপনি আপনার ছেলে রথীন্দ্রনাথকে রাশিয়া থেকে কৃষিবিজ্ঞান পাশ করিয়ে এনে শাহজাদপুরে বেগুন চাষ করালেন কেন? আপনি জানতেন না, বেগুন খেলে ক্যানসার হতে পারে। আপনি তো ঝিঙ্গে চাষ করলেও পারতেন।
উপস্থাপক তল চোখে তাকিয়ে মিট মিট করে হেসে বলেন, নীরব কেন কবি; কোনো অভিযোগেরই তো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেন না!
রবীন্দ্রনাথ বলেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে। এই লাইনে আমি ছেলেদের তোর বলেছি; আর মেয়েদের চলো বলেছি।
উপস্থাপক ক বলেন, উঁহু এখন কথা ঘুরাবেন না।
(গল্পটি একটি মিম সম্প্রসারণ মাত্র)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন