সমুদ্রের পাশে খাসজমিতে নির্মিত শোকরানা এতিমখানার সুপার মোল্লা জগলুলের চোখে পড়ে একটি জাহাজ। সে প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। দৌড়ে গিয়ে সে পাশের কাঁচামালের গুদামের ম্যানেজার জগন্নাথকে ডাক দেয়, ও জগাই সব্বোনাশ হইয়ে গেছে।
জগন্নাথ ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে কাঁচামালের গুদাম থেকে বেরিয়ে আসে, ও বা জগলু এত সকাল সকাল কী হইল আবার!
জগলু জাহাজটা দেখায়; ভালো করে তাকিয়ে দেখে জগাই মাথায় হাত দিতে বসে পড়ে। রেগে কিড়মিড় করে বলে, আসমুদ্র হিমাচলের সমুদ্রবন্দরে এই জাহাজ; দাঁড়ারে জগলু ময়ূখদারে একটা ছবি তুইলে পাঠাই।
ময়ূখ জাহাজের ছবিটা পেয়েই দৌড়ে যায় রাঁচি বাংলার স্টুডিওতে, ব্রেকিং নিউজ ব্রেকিং নিউজ; পারমানবিক বোমা বহনকারী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। এই বোমা কী অশান্ত করে তুলবে সেভেন সিস্টারস! একি ভাবা যায়; গত জুলাইমাসেও যে বন্দরে গিজ গিজ করত গেরুয়া পতাকাবাহী জাহাজ; সেখানে এসে পৌঁছেছে একটি হরিত পতাকাবাহী জাহাজ। ইউসুফ সরকারের এত বড় সাহস যে সে মোদি সরকারের অনুমতি না নিয়ে এই জাহাজ নোঙ্গর করতে দিয়েছে! আমি আগেই বলেছিলাম, চট্টগ্রামটা আমাদের লাগবেই।
জগলু এতিমখানার ফটোশপ কর্মীদের কাজে লাগিয়ে দেয়। তারা ফেইক আইডি থেকে অস্ত্র বোঝাই জাহাজের ছবি বানিয়ে; তার পাশে ইউসুফ সরকারের উপদেষ্টাদের ছবি দিয়ে দেয়। জগাই এই ছবি দেখে বলে, ও জগলু উপদেষ্টাদের মাথায় জিন্নাহ টুপি পরাইয়া দিতে ক। বাকিটা আমি দেখতেছি।
ফেসবুকে এতিমখানা পেজে এই জাহাজের খবর ও ছবি দেখে সংস্কৃতি মামার পেটে মোচড় দেয়। সে এতক্ষণ উচ্চাঙ্গ সংগীত শুনছিল। কিন্তু জাহাজঘটিত নিম্নচাপে সে পেরেশান হয়ে পড়ে। দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়। কিন্তু সেখানে হারপিকের একটা বোতল দেখে রেগে বেরিয়ে আসে।
সংস্কৃতি খালা এসময় লিভিং রুমে বসে একটা হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজ করছিল,
শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা,
শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা-হাসা॥
শুধু দেখা পাওয়া, শুধু ছুঁয়ে যাওয়া,
শুধু দূরে যেতে যেতে কেঁদে চাওয়া,
শুধু নব দুরাশায় আগে চ'লে যায়--
পিছে ফেলে যায় মিছে আশা॥
সংস্কৃতি মামা জাহাজের খবর দিতেই সংস্কৃতি খালা ফেসবুকে জাহাজ বিষয়ক ভাবসম্প্রসারণ ঝেড়ে দেয়। একটি পণ্যবাহী জাহাজ কীভাবে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির আকাশ ভেঙ্গে দিয়েছে; তা বর্ণনা করে।
এই জাহাজের খবর দেখে, নিখিল বঙ্গ আদার ব্যাপারী সমিতি বিবৃতি দেয়, এই জাহাজের মাল খালাসের সময় যে কাস্টমস কর্মকর্তারা মালামাল পরীক্ষা করতে চেয়েছিল, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এতিমখানার সুপার জগলু তাদের একটি ফটোশপ করা অফিস অর্ডার দিয়ে যায়। যেখানে বরখাস্তের নির্দেশ লেখা। এই ফটোশপ করা বরখাস্ত আদেশ ফেসবুকে কপি পেস্ট করতে শুরু করে ‘আগেই ভালো ছিলাম হিতৈষী সংঘে’র প্রবীণেরা।
জাহাজের খবর শুনে আপা অজিত দোভালকে ফোন করেন, শুনেছেন চট্টগ্রামে পারমানবিক বোমা এসে পড়েছে পাকিস্তানের জাহাজে করে।
অজিত দোভালের হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। ফোনটা তুলে বলেন, আমার মনে হয় পণ্যবাহী জাহাজ; কেউ বাড়িয়ে বলেছে আপনাকে।
আপা বিরক্ত হয়ে ফোনের লাইন কেটে দিয়ে মোদিকে ফোন করেন। মোদি জাহাজের গপ্পো শুনে অভিমান করে বলেন, আপনার তো আজকাল ট্রাম্পের সঙ্গে অনেক খাতির, তাকেই ফোন করুন না কেন!
ওদিকে জয় শ্রীরাম অফ এমেরিকার সভাপতি পরিতোষ ফুলমাল্য নিয়ে তুলসি গ্যাবার্ডের বাসায় পৌঁছে যায়। গ্যাবার্ড তখন ঘুমাচ্ছিল। পরিতোষ তখন তুলসি তলায় বসে কীর্তন গাইতে শুরু করে।
আর ঘুমায়ো না মন
মায়াঘোরে কতদিন,
রবে অচেতন।
কে তুমি, কী হেতু এলে
বাংলাদেশরে ভুলে গেলে,
চাহ রে নয়ন মেলে
ত্যাজ গো সব।
রয়েছ অনিত্য ধ্যানে
জাহাজানন্দ হেরো প্রাণে,
চট্টগ্রামে মূর্ছা হেরো
অরুণ তপন।
তুলসি গ্যাবার্ড ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসতেই পরিতোষ তাকে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে দুঃসংবাদ জানায়। তুলসি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খ্রিস্টিনাকে ফোন করে। খ্রিস্টিনা তখন সমুদ্র স্নান করে সৈকতে রোদ চশমা পরে ড্রাই জিন পান করছিল ডাবের পানির সঙ্গে মিশিয়ে। তুলসি জানতে চায়, পাকিস্তানের জাহাজে কী কী এল!
খ্রিস্টিনা জাস্ট আ সেকেন্ড বলে ফোনটা হাতে নিয়ে পণ্য তালিকা পড়তে থাকে, তুলসি লাউড স্পিকার অন করে,
পেঁয়াজ ৪২টি কন্টেনার
আলু ১৪টি কন্টেনার
সোডা অ্যাশ ১১৫টি
খনিজ পদার্থ ডলোমাইট ৪৬টি
চুনাপাথর-৩৫,
ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট ৬টি
ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০টি
কাঁচামাল, কাপড়, রং ২৮টি।
তুলসি ফোন রেখে পরিতোষকে জল দিয়ে জ্যান্ত গিলে খাবার ভঙ্গিতে তাকায়। পরিতোষ জিভ কেটে রাধা গোবিন্দ রাধা গোবিন্দ বলতে বলতে দ্রুত পায়ে হেঁটে হাওয়া হয়ে যায়।
ওদিকে সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা জাহাজ আসার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করেছে। ললিতাদি দৌড়ে গিয়ে তার বান্ধবীর ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলে, ওঠো আনার কলি, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে যেতে হবে।
এমন সময় ফেসবুকে ভেসে ওঠে একটা তেজস্ক্রিয় বোমা বানানোর ফর্মূলা।
এক মণ পেয়াজের সঙ্গে একটি ডলোমাইট মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এক মণ আলুর সঙ্গে ৩টি চুনাপাথর মিশিয়ে ভর্তা বানান। উভয় পেস্ট ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উত্তপ্ত করুন। এরপর তাতে ১টি ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট মিশিয়ে ঘুটা দিন। ২টি ভাঙ্গা কাঁচ ইতস্তত ছড়িয়ে দিন চুল্লির উত্তপ্ত দ্রবণে। এরপর তাতে সোডা এশ মিশিয়ে একে ঘরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসুন। এরপর জিপসাম মিশিয়ে গোবরের ঘুঁটের মতো দেয়ালে লাগিয়ে শুকোতে দিন। কপার ওয়ার দিয়ে তেজস্ক্রিয় ঘুঁটেগুলো মজবুত করুন।
গেরিলা অপারেশনের জন্য প্রয়োজন মতো হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন পান করিয়ে কমান্ডোদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। কমান্ডোদের বুকে তেজস্ক্রিয় ঘুঁটে বেঁধে দিন। তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে দুটো করে হারপিকের বোতল। হারপিকের বোতল দেখে শত্রু জ্ঞান হারালে; তাদের পেছন বরাবর তেজস্ক্রিয় ঘুঁটে ছুঁড়ে মারুন।
এই ফর্মুলা দেখেই ভয় পেয়ে শিবব্রত দাদা কাঁপতে কাঁপতে সহমত ভাইকে ফোন করে, আজ নাহয় মোমবাতি প্রজ্জ্বলনটা থাক। যদি কেউ হারপিকের বোতল দেখিয়ে আমাদের অজ্ঞান করে দিয়ে পেছনটাতে তেজস্ক্রিয় ঘুঁটে ছুঁড়ে মারে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন