খুলনা থেকে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো চলাচল শুরু করেছে আজ। ট্রেনটি শত শত যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত সময়েই খুলনা থেকে যাত্রা শুরু করে। পদ্মাসেতুর পিলার, নাট-বল্টু, রেলপথ—সবাই যেন আজ খুশিতে উদ্বেলিত। কিন্তু একমাত্র জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নিজেই খুশি হতে পারে নি। খুশি হবার জায়গায় মুখ ম্লান করে, মন খারাপ করে চলেছে পুরোটা পথ।
পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মত চলছে, এতে যে আনন্দ হবার কথা সেই জায়গাতে, আপা নেই—এই উপলব্ধি যেন ট্রেনটির যাত্রা-আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। আপা, যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এই পদ্মাসেতুর, যিনি নিজে এর উদ্বোধনে অংশ নিয়েছিলেন, যিনি একসময় নিজের টোল দিয়ে এই সেতু পার হয়েছিলেন, সেই আপার অনুপস্থিতি যেন জাহানাবাদ এক্সপ্রেসের জন্য এক বড় শূন্যতা।
ট্রেন চলতে চলতে পদ্মাসেতুর নিকট আসতেই তাজ্জব এক ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঠিক সেতুর মুখে এসে হঠাৎ থেমে যায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। তারা জানান, ট্রেনটি স্বল্প বিরতিতে ধোঁয়া ছেড়ে নিজের বিষণ্ণতার কথা জানান দিচ্ছিল। কিন্তু সেতুতে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। আপাকে ছাড়া সেতুতে উঠলে এই প্রকল্পে আপার অবদানকে অস্বীকার করা হবে—এমন এক গভীর অনুভব যেন ট্রেনটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। সে কিছুতেই পদ্মা সেতুতে উঠবে না বলে ঠিকও করে নিয়েছিলো যেন।
ট্রেন চালকসহ রেল কর্মকর্তারা তখন বিপাকে পড়েন। সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম যাত্রার ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সফল করতে ট্রেনটি চালানো জরুরি, কিন্তু জাহানাবাদ এক্সপ্রেস একপ্রকার বেঁকে বসেছে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় চালক অনেক অনুরোধ-উপরোধ করেন ট্রেনটিকে। তোমার চলার মাধ্যমেই আপা খুশি হবেন—এমন আশ্বাসে অবশেষে কিছুটা শান্ত হয় ট্রেনটি।
পরবর্তীতে যাত্রা আবার শুরু করলেও, ট্রেনটি পদ্মাসেতু পাড়ি দেওয়ার সময় ধোঁয়ার মধ্যে যেন তার মনের কথাগুলো প্রকাশ করছিল। এক ধোয়াবিজ্ঞানীর মাধ্যমে ডিকোড করা হলে অর্থ খুঁজে পাই আমরা। এই ধোঁয়ার ভাষায় ট্রেনটি যেন বলছিল—এই সেতুতে তোমাকে ছাড়া প্রথম যাত্রা আপা, তুমি কোথায় আছো? কেমন আছো? পত্র দিয়ো।
পদ্মাসেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। দেশের বানিজ্যের গতি বাড়িয়েছে। আপার হাত ধরেই এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। সাথে লোপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সত্যিকার অর্থেই দেশের বাইরে থাকা আপাকে ছাড়া পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনের এই প্রথম যাত্রা যেন এক গভীর কষ্টের গাঁথা।