বছর দুয়েক হলো ডেটিং সাইটগুলোতে বড়শি ফেলে বসে আছি। নিয়মিত জিমে যাই, চুলে রঙ করি। ট্যাটুতে লিখেছি কিস মি। নানাভঙ্গিতে ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে হতচ্ছাড়া সাদ্দাম, আসাদ, ইদি আমিন, রবার্ট মুগাবে, প্রণব মুখার্জি, নরেন্দ্র মোদি এসে লেখে অসাম। বড় জোর মমতা মাসি এসে লিখে যায়, এপাং-ওপাং-ঝপাং। কিন্তু ঠিক যেজন্য ছবিগুলো দিচ্ছি, সেই আলোর দেখা নেই; সে কেবলই আলেয়া হয়ে রয়ে যায়। অনেক সময় ফেক অ্যাকাউন্টের আরোহী, অহনা মুম্বাই থেকে লাভ সাইন দিয়ে যায়। কিন্তু তাতে কী লাভ!
আসলে সময়টাই খারাপ। সারাদিন ফেক নিউজ ছড়িয়ে সময় কাটে। এতিমেরা সে নিউজ ছড়িয়ে এরপর রাঁচি রিপাবলিকান ময়ূখের হাতে দেয়। ময়ূখ হারপিক পান করে ডিগবাজি দিয়ে সে খবর প্রচার করেই ফ্যাক্ট চেকিঙের পাল্লায় পড়ে যায়।
আমি ঠিক খুঁজছিলাম এমন কাউকে যার মাধ্যমে রিপাবলিকান পার্টিতে একটু নেটওয়ার্কিং যদি করা যায়; সঙ্গে যদি এক আধটু প্রেম মিলে যায়। কিন্তু সেরকমটা হচ্ছে কই। ফেসবুকে পোস্ট দিলেই সেখানে হাহা ইমোর তুফান দেখেই হয়তো কেউ এসে বলছে না, উইল ইউ ডান্স উইদ মি।
ডেটিং সাইটে যে একটু ফোকাস করব সে উপায় নেই। শুধু এতিমখানা থেকে সহমত-শিবব্রতর ফোন আসে। অমুক গ্রেফতার হয়েছে, তমুক ধোলাই খেয়েছে। আরে বাবা আমি কী করব! কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছ; তা খরচ করে পুলিশ, রহমত, শরিয়তকে কিনে নাও। ভাত ছড়ালে ঐখানে কাকের অভাব হয় নাকি! তা না, শুধু গিলটি ফিলিংস দেয়, কথা শুরুই করে এভাবে, মামা আছেন তো ভালোই; আমরা একদম ভালো নাই মামা গো।
এই কথায় কথায় মামা ডাকাটা একদম ভালো লাগে না। কিন্তু কী করব এতিমখানা চালাতে গেলে সব সহ্য করে নিতে হয়।
হঠাতই ডেটিং সাইটে ম্যাচ শব্দটা নাচতে থাকে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না। ওহ মাই গড শিকাগো। গোপালগঞ্জের সঙ্গে গো'তে মিল আছে। মুখরা হবে না তো; মাইরধর করবে না! যা আছে কপালে, ইয়েস কার্ড নিয়ে নিই। লেক মিশিগানে জলকেলির আমন্ত্রণ জানিয়েছে মেয়েটি। একটু বেশি ইয়াং হয়ে গেল না তো। আমি তো চুলে রঙ করেছি; ওর চুল তো অরিজিনালি বাদামি মনে হচ্ছে। আরেহ জীবন হচ্ছে গলফ খেলার মতো, এভ্রিটাইম ইউ সুইং, ইটস আ নিউ লাইফ।
আমার ফক্সোয়াগেন গাড়িটা দেখেই হাত নাড়ে জলকেলি। গাড়ি থেকে নামতেই জিজ্ঞেস করে, তুমি তো টপ গান মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই বড় কোম্পানির সিইও তুমি। তোমার কোম্পানির নাম কী!
: মাম্মিজ বেবি ইনক।
মেয়েটি হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর চোখ গোল গোল করে বলে, তুমি ডেমোক্র্যাট না তো। আমি রিপাবলিকান, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি।
: ও তাই নাকি; আমার তো সাউথ এশিয়াতে একটা স্বাধীনতার স্বপক্ষের দোকান আছে।
মেয়েটা চিমটি কাটে, ম্যাচ-ম্যাচ। আমাদের কম্প্যাটিবিলিটি হান্ড্রেড পারসেন্ট। আমার কোম্পানির নাম ড্যাডস সুইটি ইনক। নতুন কোম্পানি। এখনও তাই গাড়ি কিনতে পারিনি।
: তোমার ক'টা গাড়ি লাগবে বলো!
: এই প্রথম দেখাতেই তুমি সুগার ড্যাডির মতো কথা বলছ কেন!
হঠাৎ এক সহসভাপতি ফোন করে, সে হাউ মাউ করে কাঁদছে, ও মামা আপনার নির্দেশ অনুযায়ী দেয়ালে জয় বাংলা স্প্রে করতে গিয়া মহল্লার লোকেগো ধোলাই খাইছি। গিটে গিটে ব্যথা গো মামা।
: পেইন কিলার খাও ঠিক হয়ে যাবে।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, কে ফোন করেছিল!
: আমার কোম্পানির এক এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার।
: ওকে পেইন কিলার খেতে বললে কেন।
: ওর মাসল পুল হয়েছে, তাই পেইন কিলার খেয়ে কাজ চালিয়ে যেতে বললাম।
: ও বাবা, তুমি দেখছি টাস্ক মাস্টার।
মেয়েটি তার ফ্লাস্ক থেকে গ্রিন-টি ঢেলে দেয় একটা মগে। তারপর বলে, আমার কোম্পানিটা নতুন তো। তাই বাসা থেকে স্ন্যাকস বানিয়ে এনেছি। ট্রাম্প আঙ্কেল দায়িত্ব নেবার পর উনাকে ডেভেলপমেন্ট অ্যাপস বানিয়ে দিয়ে মিলিওনিয়ার হয়ে যাব। তখন তোমাকে ট্রিট দেব ভালো করে।
অ্যাপসের কথা শুনেই বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে ওঠে। আমার বানানো অ্যাপসগুলো গুগল প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে দিয়েছিল।
: কই চুপ করে আছো কেন, তোমার কথা কিছু বলো।
: বললে তুমি তো বিশ্বাস করবে না।
: কেন বিশ্বাস করব না!
: বিল গেটস গুগল সার্চ ইঞ্জিন বানানোর আগেই আমি সার্চ ইঞ্জিন বানিয়েছিলাম, কিন্তু মার্কেটিং করার আগেই বিল্লু হিট করে যায়।
: সো স্যাড। তারপর।
: আমি সাউথ এশিয়ায় আমার দোকানে এমন এক ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি করেছি, যেখানে ইন্টারনেট প্রয়োজনে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়; আবার নিজেই চালু হয়। পলকে পলকে এটা হয়।
: এ যে ম্যাজিক্যাল ডিসকভারি। একটা পার্সোনাল কোয়েশ্চন করি, তুমি কি চুল রঙ করেছ নাকি; মাথাটা রংপুর হয়ে আছে।
বিব্রত হতেই মেয়েটা বলে, আমিও চুল রঙ করেছি। আম্মো যা তুম্মো তাই।
কয়েকজন ট্যাটুওয়ালা হাঁটতে হাঁটতে যায়, মেয়েটিকে দেখে হাত নাড়ে।
: চেন ওদের।
: চিনব না কেন, শিকাগো আমার বাপের দেশ।
মেয়েটির গোপালী স্পিরিট দেখে মুগ্ধতা বাড়ে। তোমাকেই তো খুঁজছিলাম।
মেয়েটা ফোনে ইকোনোমিস্টের খবর দেখে বলে, কনগ্র্যাটস, তোমার দেশ কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার হয়েছে। কী ব্রেভারি ওখানকার ইয়ুথের। আমি ফলো করেছি ওদের স্টোরি। ওদের রেভ্যুলুশনে ইনফ্যাচুয়েটেড হয়েই আমি তোমাকে পছন্দ করেছি। বাংলাদেশের ছেলে যখন, নিশ্চয়ই ব্রেভ হার্ট হবে।
আবার ফোন আসে। এমন এক লোক ফোন করেছে, যার অনেকগুলো দাঁত পড়ে যাওয়ায় কথা বলার সময় ফস ফস শব্দ হয়, বস দেখছেন, আমার ভিডিও ভাইরাল হইছে। জেনজি গো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিছি। অগো খুঁইজা খুঁইজা মারতে হইব।
: দিলেন তো জাতিসংঘ, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হাতে প্রমাণ তুলে, কী যে করেন না! সামলানো কঠিন হয়ে যায়। এখন রাখছি।
মেয়েটি বলে, তোমার কোম্পানির ম্যানেজার নিশ্চয়ই। তোমার সঙ্গে ডেট করা মুশকিল। বড় কোম্পানির ব্যস্ত সিইও।
: এবার ফোন একেবারে সুইচ অফ করে দিচ্ছি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন