প্রবীণকে লাঞ্ছিত করার বর্বরতা

২৫ পঠিত ... ৪ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে

24

গতকাল রাতে একটা ভিডিওতে একজন প্রবীণকে জুতার মালা পরাতে দেখে বিমর্ষ হয়ে গেলাম। পরে জানলাম উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ কর্মী। ঘটনাটি জামায়াত সমর্থকেরা ঘটিয়েছে। এর আগে একইরকম বিমর্ষ হয়েছিলাম, শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী লাঞ্ছিত হওয়ায়।  ঘটনাটি ঘটিয়েছিল আওয়ামীলীগ সমর্থিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা।

এই তো আমাদের দেশ; এখানে সুযোগ পেলেই সিনিয়র সিটিজেনদের লাঞ্চিত করা হয়। আর এই লাঞ্চিত করা একটা দেশপ্রেমমূলক ও সাংস্কৃতিক কাজ বলে প্রশংসিত হতে দেখেছি।

স্বৈরাচারি এরশাদের দোসর বলে, প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমানের পাজামা খুলে নেবার জন্য সংস্কৃতি কর্মীরা বেশ সাবাসি পেয়েছিল বিজ্ঞ প্রগতিশীল মহলে। এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন বলে কিংবদন্তীর কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহকে জাতীয় কবিতা উৎসবে ডেকে এনে অপমান করলে; হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি। এই কৃতিত্বে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন, কেউ কলকাতার সাহিত্যপাতায় কবিতা ছাপিয়েছেন। মুজিব শতবর্ষের আসরে তাদের কেশর ফুলিয়ে ঘুরতে দেখেছি।

প্রবীণদের অপমান করার সংস্কৃতি বাংলাদেশ সমাজে প্রচলন করে আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাংস্কৃতিক জোট। এরা শহীদ মিনার ও টিএসসিতে ওঁত পেতে থাকত। ভিন্নমতের কোনো প্রবীণকে দেখলেই সংস্কৃতি মামাদের কেউ শুধু ধর ধর বলত। অমনি কয়েকটি সাংস্কৃতিক শেয়াল গিয়ে কামড়ে ধরত প্রবীণকে। পুরুষের পাঞ্জাবি টেনে ছিঁড়ে ফেলত, নারীর আঁচল ধরে টানা হেঁচড়া করত। এরকম নির্লজ্জ শেয়ালেরা পদ-পদবী-পদক-প্লট সবই পেয়েছে তাদের হিংস্র শেয়ালতার গুণে।

এই বাকশিয়ালীপনার আরও নানা রকম কায়দা ছিল। কোনো প্রবীণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বাকশালের শপথ পাঠে রাজি না হলে, তাকে গলায় গামছা দিয়ে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো শহীদ মিনারের দিকে। অথবা কোনো দ্রোহী কবি ও লেখক চোখের সামনে পড়লে, সারমেয় ঘেউ ঘেউ করে বলত, ধর ছফা হারামজাদারে ধর।

বাকশাল টু পয়েন্ট ও-তে ব্লগে-ফেসবুকে ভিন্নমতের প্রবীণদের ছ বর্গীয় গালি দেবার প্রচলন হলে; মুখে যা আসে তাই বলা শুরু হয় প্রবীণ বুদ্ধিজীবীদের। বঙ্গবন্ধুকে ঈশ্বর আর শেখ হাসিনাকে পয়গম্বর মানতে রাজি না হলেই কট্টর হিন্দুত্ববাদীর ফেসবুক জলসায় গালাগাল করত কট্টর আওয়ামী গ্যাং।

তাই না দেখে গোয়েন্দা সংস্থারও শখ জাগে, প্রবীণ ফরহাদ মজহারকে নিয়ে নাটক করার। অমনি সহমত ও শিবব্রত নেমে আসে ভার্চুয়াল জুতার মালা দিতে। মা-খালাকে কলতলায় বসে যেমন কাল্পনিক কাসুন্দি নিয়ে খলবল করতে দেখেছে; ঠিক তার হুবহু মঞ্চায়ন করেছে ফেসবুকের কলতলায়।

সাড়ে চুয়াত্তর টিভির জার্নালে ভিন্নমতের প্রবীণ মানুষদের গলায় গামছা দিয়ে ধরে এনে হিজড়ে লাগিয়ে দিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গলায় জুতার মালা পরাতে দেখেছি। গণভবন বুয়া এতে অনেক খুশি হয়ে মইনুলকে জেলে ভরে দেয়।

কুমিল্লায় বর্ষীয়ান মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করেছে যারা; তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জামায়াতের শরীরে আওয়ামী কালচারের এই অপচর্চা এক্ষুণি বন্ধ করতে হবে। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট যদি ফ্রেশ স্টার্স্ট হয়; তবে সমাজ মননে ঢুকে পড়া ফ্যাসিবাদের ভাইরাস, পুঁতিগন্ধময় কালচার ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে।

পৃথিবীর প্রতিটি সিনিয়র সিটিজেন সম্মান প্রাপ্য হন। কোনো সিনিয়র সিটিজেন অপরাধ করলে, আইন অনুযায়ী তার বিচার হয়। সেক্ষেত্রে বয়স বিবেচ্য হয়। কারাগারেও প্রবীণকে বয়সোচিত সুবিধা দেওয়া হয়। নারী-শিশু ও বৃদ্ধের প্রতি এই প্রেফারেন্সশিয়াল ট্রিটমেন্ট সভ্যতার শিক্ষা।

বাংলাদেশকে দুটি মানবতা বিরোধী অপরাধের সমর্থক জামায়াত ও আওয়ামীলীগের ‘চোখের বদলে চোখ’ আদিমতা ও হিংস্রতা চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ১৯৭১ ও ২০০৯-২৪ কালে দাঁড়িয়ে যাওয়া এইদুটি প্রতিশোধন্মুখ ও আধিপত্যপরায়ণ গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সমাজ আর কখনোই গ্রহণ করবে না। বাংলাদেশের মানুষের কালেক্টিভ মেমোরিতে যে সন্তান হারানোর শোক রয়ে গেছে; তা ঐ দুটি গোষ্ঠী সম্পর্কে ভীতি জারি রেখেছে; সুযোগ পেলেই পুরাতন ও নতুন শকুন খামচে ধরতে পারে জাতীয় পতাকা।

আফ্রিকান একটি প্রবাদ রয়েছে; প্রবীণ শূণ্য গ্রাম, পাতাহীন বৃক্ষের মতো কিংবা গ্রন্থহীন গ্রন্থাগারের মতো। এক একজন প্রবীণ মানেই জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এক একজন মানুষ। প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ পুরোহিত, প্রবীণ মওলানা, প্রবীণ রিকশাচালক, প্রবীণ কৃষক, প্রবীণ শ্রমিক; এমনকি একজন প্রবীণ, যিনি অর্ধশতক ধরে জুতা সেলাই করছেন; তারা এক একজন এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তাদের স্মৃতিতে রয়েছে জনপদের ইতিহাসের নানা খুঁটিনাটি। তাদের কথা শুনুন। তারা চলে গেলে হারিয়ে যাবে অতীত ও ঐতিহ্য।

শীর্ণ শরীরে মুজিব কোট ঝুলিয়ে, জীর্ণ শরীরে ক'গাছা দাড়ি উড়িয়ে প্রবীনদের অপমান করে বেড়ানোর এই যে বাকশিয়াল ও পাকশিয়ালেরা; তাদেরকে এ সমাজ ও সংস্কৃতিতে দূষণ ছড়ানো থেকে বিরত করতে হবে। এদেশে আইন আদালত আছে। কোনো ব্যক্তি অপরাধী হলে আদালত তার বিচার করবে। চামচিকাদের আমরা কেউ মাতবর বানাইনি যে তারা প্রবীণদের লাঞ্ছিত করে শাস্তি দিয়ে বেড়াবে।

২৫ পঠিত ... ৪ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top