লেখা: তাহমিদুল জামি
মেয়েদের ফুটবলটা কেমনে বন্ধ করে দেওয়া হলো এটার গ্রামারটা খেয়াল করেন।
তৌহিদি মব যেটা করে সেটা হলো ‘ডেটারেন্স’ তৈরি করে। ডেটারেন্স কথার বাংলাটা কঠিন আছে; নিবৃত্তকরণ। তৌহিদি মব আপনাকে আপনার সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি থেকে নিবৃত্ত করে।
আপনি যেন মেয়ে হয়ে আউটডোর স্পোর্টস না খেলেন, গানপ্রেমী হয়ে কনসার্ট না করেন, আশেক হয়ে ওরশ না করেন। আপনাকে নিশ্চিহ্ন করা তাদের উদ্দেশ্য না, কিন্তু আপনাকে মাঠছাড়া করে ছাড়বে। তাদের গণ্ডগোলে ভীত-অতিষ্ঠ হয়ে আপনি ফুটবলের মাঠ ছাড়বেন, কনসার্টের স্টেজ ছাড়বেন, ওরশের আসর ছাড়বেন। আপনি অনেক ফোর্স নিয়ে নামলে আপনি হয়তো আয়োজন করতে পারবেন, কিন্তু কতদিন? আপনার মনোবল ভেঙে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।
কোল্ড ওয়ারের আমলে আমেরিকান আর সোভিয়েতদের মধ্যে ঢিষ্টিং-ঢিষ্টিংয়ের সময় রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ারের যুদ্ধনীতি ছিল ‘ম্যাসিভ রিট্যালিয়েশন’—মানে একেবারে পরমাণু বোম মেরে সব ফানা করে দেওয়া। কিন্তু পরে কেনেডি নীতি নিলেন ‘ফ্লেক্সিবল রেসপন্স’।
তৌহিদি মব হলো ফ্লেক্সিবল রেসপন্সের লোকজন। আপাতত।
তারা আইসা গ্যাঞ্জাম লাগাবে। এরপর তারা জিতলে জিতবে কিংবা মাইর খায়া পিছুও হটতে পারে। কিন্তু তারপর বাকি কাজ করবে প্রশাসন। প্রশাসন এসে বলবে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে সুতরাং খেলা বন্ধ, কনসার্ট বন্ধ, ওরশ বন্ধ।
অর্থাৎ তৌহিদি মবের হাতে-পায়ে জয়লাভ করতে হবে তা না, শত্রুনিকাশও করতে হবে না৷ স্রেফ গিট্টু লাগিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট, বাকিটা প্রশাসন করবে।
এই কৌশলকে এক কথায় বলতে পারেন ‘বিতর্কিতকরণ’।
তৌহিদি মব যেটা করে তা হলো মেয়েদের ফুটবল, গানের কনসার্ট, ওরশ মাহফিল ইত্যাদিতে গ্যাঞ্জাম করে এগুলোকে বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর ইস্যু বানিয়ে ফেলা। আর ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রশাসন বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর ইস্যুকে মোকাবিলা করে বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে।
অনাগত দিনে আরও অনেক কিছুর বিতর্কিতকরণ করা হবে। যেমন ক্যাম্পাসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেম। এ কাজে অবশ্য তৌহিদি মব, চিটাগং স্কুল অফ দার্শনিকদের সহায়তা পাবে।
বিতর্কিতকরণের দ্বারা নিবৃত্তকরণ, মব প্রশাসন ও দার্শনিক্সদের যুগলবন্দি—বড় এক্সাইটিং টাইমস।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন