রাহাত ফতেহ আলী খান কনসার্ট করতে আসছে শুনে তীব্র বিবমিষায় অজ্ঞান হয়ে যায় আনারকলি আপা। এর আগে অঞ্জন দত্ত যখন ঢাকায় কনসার্ট করতে এসেছিলেন, আনারকলি তখন গুণী এই শিল্পীকে ফুল দিয়ে বরণ করতে গিয়েছিলো এয়ারপোর্টে। অত্যন্ত বিনয়ী এই শিল্পী আনারকলির অনুরোধে একটি সেলফি তুলতে রাজি হলে; ওর মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেলো সে। বাসায় ফেরার সময় এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো হাওয়ায় ভাসতে থাকে। ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে বলে, আজ সাঁঝে সবাই আসছেন তো; সংগীতের জাদুকর এখন ঢাকায়। এরপর আমার বুইড়া বয়সের ক্রাশ বলে চোখ টিপ দেয় সে।
ললিতাদি তখন সংগীত বিশেষজ্ঞ হয়ে ফেসবুকে একটার পর একটা পোস্ট লিখতে থাকে, অঞ্জনের গানে রাগ বন্দীশের মাঝে যে গীতিকবিতা খেলা করে; তা আমাকে নিয়ে যায় অন্যলোকে। লাভ ইউ অঞ্জন। পোস্টের কমেন্টে এসে টিপ্পনী কাটে শেফালি-রুপালি-আল্পনা-কল্পনা, আনারকলি আপা তো আগেই প্রেমের জন্য বুকিং দিছে; দেইখো আবার দুইজন অঞ্জনরে লইয়া কাইজ্জা কইরো না।
সরকারি দপ্তরে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, বালিশ, পিন, পর্দা, তোয়ালে সরবরাহ করে ঠিকাদারিতে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত সহমত ভাই অতিউতসাহী হয়ে একটি শিভাস খুশিজলের বোতল কিনে অঞ্জনদা'র হোটেল রুমে গিয়ে বলে, দাদা বোতলে একটু গলাটা ভিজিয়ে নিন, এতে ত্রিতালটা জমবে আপনার কনসার্টে। অঞ্জনদা বিরক্তি লুকিয়ে সুটকেস খুলে বলেন, এই দ্যাখো, আমি যেখানেই যাই নিজের স্টক নিয়ে যাই।
অঞ্জনদার সঙ্গে দেখা করে বের হবার পর নিজেকে ইন্টেলেকচুয়াল ক্লাসের একজন মনে হয় সহমত ভাইয়ের। কিন্তু অঞ্জনের সঙ্গে দেখা না করেও অঞ্জন বিশেষজ্ঞ হয়ে বসে আছেন শিবব্রত দাদা। তিনি ফেসবুকে লিখেন, রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে কল্লোল যুগের কবিরা আমাদের নজর কেড়েছিলো; আর গৌরি প্রসন্ন মজুমদার ও পুলক বন্দোপাধ্যায়ের পরে নজর কেড়েছে অঞ্জন দত্তের গীতিকবিতা। আমি তার গীতিকবিতাকে বব ডিলানের চেয়ে এগিয়ে রাখবো। শিবব্রতদাদার পোস্টে এরকম রেফারেন্স দেখে অসহায় বোধ করে সহমত ভাই। তাই সে মন্তব্যে এসে লেখে, মঞ্চের মানুষটিকে তো সবাই দেখবে; আমি দেখে এলাম আসল মানুষটিকে, তিনি ঈশ্বরের মতোই কোমল; বাইরে গাম্ভীর্যের কঠোরতা।
অরিজিত সিং ও কৈলাস খের ঢাকায় এলে ছাএলীগের যে সংগীত পিপাসুরা হোটেলরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছিলো; তারপর তাদের কন্ঠে সুফি গান শুনে মগ্ন হয়েছিলো; তারা এবার যার যার অবস্থান থেকে লিখেছে, রাহাত ফতেহ আলী খানের গানতো কাওয়ালি, ইসলামপন্থীদের গান, জঙ্গীরা এইসব গান শোনে।
ছাত্রীলীগের মেয়েরা লেখে, যে কাওয়ালীকে টিএসসি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে; ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে জঙ্গীমুক্ত করেছিলাম; তা রাহাতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র চলছে।
শেখ হাসিনার চারশো কোটির পিয়ন হেলিকপ্টারে বসে লেখে, এই যে তিনকোটি টাকা দিয়ে রাহাতকে নিয়ে এলো, এই প্রতিটি পয়সার হিসাব একদিন দিতে হবে।
ভারতের আজতক টিভি ঢাকায় রাহাতের কনসার্ট নিয়ে বলে, পাকিস্তানের ফাঁদে বাংলাদেশ।
আজকাল ইন্ডিয়ান মিডিয়ার বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণার কারণে এন্টি ইন্ডিয়ান সেন্টিমেন্ট বেড়েছে; তাই কৌশলী মামা এসে বলে, পাকিস্তানি গায়কের কন্ঠে ভারতীয় গান শুনছি আমরা। দুর্ভাগ্য আমাদের, কেবল বাংলাদেশপন্থী নেই।
রুনা লায়লা, শাহনাজ রহমত উল্লাহ, বেবি নাজনীন, কনকচাঁপা, আসিফ আকবরকে ‘আমাদের লোক নয়’ বলে কালোতালিকা করা কালচারাল ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান বলে, দেশের শিল্পীদের ফেলে বিদেশি শিল্পী নিয়ে নাচানাচি আমাদের সংগীতকে মেরে ফেলছে।
টুকটাক সাহিত্য করা প্রগতিশীল মামা এসে হুমায়ুন আজাদকে উদ্ধৃত করে বলে, রাহাত যদি গোলাপ নিয়েও আসে আমি তাকে ঘৃণা করি।
ইতিহাস দাদা এসে বয়ান করে, লক্ষ্য করেছ, রাহাত মঞ্চে এসে নমস্কারের ভঙ্গি করছে, ইমরান খানও এ কাজ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে করেছিলো। কাজেই ওরা আমাদের মুসলমানের মর্যাদা দেয় না। তাহলে আর বংকিমচন্দ্র, শরতচন্দ্রের দোষ কি, যারা আমাদের বাঙ্গালির মর্যাদা দেয়নি।
একজন অতীত সম্পর্কে অনেক জানা ভাই এসে বলে, টিক্কা খান ও নুসরাত ফতেহ আলী খান একই ট্রাইবের লোক। যুদ্ধের সময় নুসরাত টেলিফোনে গান গেয়ে মনোরঞ্জন করতো টিক্কা খানের। তার ভাতিজা রাহাত খান আসছে নতুন টিক্কা খানেগো মনোরঞ্জন করতে, হাহাহা।
হাহাহা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে গ্রামাঞ্চল। ললিতাদি বলে, তোমরা হাসতেছো, আর আমার রাহাতের কথা মনে পড়লেই গা গুলাইতাছে; ইয়াক। আনারকলিকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ওঠো আনারকলি ওঠো, শাহবাগে যেতে হবে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন