টাবুর কাছে একটা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে, হামাস ইন রামনগর। ব্যাপারটা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সে টিভি অন করে। ব্রেকিং নিউজ ওটাই। তা নিয়ে টিভি টকশোতে আলোচনা চলছে। অগ্নিবীণা সিক্রি খ্যাসখেসে গলায় বলেন, আমি তো আগেই বলেছিলাম হাসিনা না থাকলেই হামাস। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জিঘাংসু মুখার্জি বলেন, ভিডিও ফুটেজে যে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে জঙ্গীদের; এই বিশেষ ধরনের অস্ত্র চীন ও পাকিস্তানে ব্যবহার হয়। আর জঙ্গীরা যে ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে ওটা হিজবুল্লাহ'র সিগনেচার।
বিজিত দোভালের ফোন আসে এসময়, টাবু তোমায় একবার যেতে হয় যে, সেদিন একবার ‘আওলাদে রসুল’ দর্শনে এসে একে ফরটি সেভেন উঁচিয়ে ছবি তুললো মহাজঙ্গী। আজ শুনছি হামাস ঢুকে পড়েছে যশোরের রামনগরে।
টাবু বিরক্ত হয়ে বলে, আমাকে তার চেয়ে ঢাকায় একটা চাকরি নিয়ে দিন; ওখানেই থাকি যতদিন না আবার কর্মচারিকে ক্ষমতায় বসানো যাচ্ছে।
বিজিত দোভাল হেসে বলেন, প্লিজ একটু ঘুরে এসো। বুঝতেই পারছো, রামনগর একটা স্পর্শকাতর নাম। টাবু এবার তোমার বেশভুষা হবে তাঁবু।
টাবু তাঁবু পরে বেনাপোলে পৌঁছালে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক এসে তাকে ঘিরে ধরে, কবে এসেছিলেন ভারতে।
টাবু উত্তর দেয়, একসপ্তাহ আগে ডাক্তার দেখাইতে আইছিলাম; অহন আবার ফিরা যাইতাছি গো বাজান।
--তা এখানে কেমন ব্যবহার পেলেন?
--মধু গো বাবা মধু; ডাক্তার-নার্স যখন হাসে, তখন সে হাসিতে মুক্তা ঝরে গো বাজান।
--শুনেছি ওখানে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে।
--নাগো বাজান, তোমরা এইখানে মুসলমানগো যতডা আদর কইরা রাখো; ঐখানে হিন্দুগো ওপর আদর তার চাইতে কম হয়।
এক সাংবাদিক বিরক্ত হয়ে বলে, যা বুড়ি যা, স্বর্গে ফিরে যা। --কে
টাবু বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। তাকে দেখেই তাঁবু পরা আর দুটি মেয়ে এসে তাকে বেহেশতের দাওয়াত দেয়। সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে মোরগা মুসাল্লাম খাওয়ায়। এরপর আয়েশ করে পায়েস খেয়ে টাবু রামনগরের দিকে যাত্রা করে। তাঁবু পরা মেয়ে দুটি ফোন করে সেখানে আরো দুটি তাঁবু পরা মেয়েকে বলে দেয় টাবুকে সাহায্য করতে।
তাদের বাসায় ঢুকতেই দেখে মেয়েরা হিন্দি গানের সঙ্গে নাচছে। টাবু বলে, নাউজুবিল্লাহ, এইসব কি বেশরিয়তি কাজ। মেয়েরা নাচ থামিয়ে জানায়, তাদের স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে।
টাবু বলে, আর কোন গান পাওনাই মামণিরা, তাইলে বয়কট ইণ্ডিয়া হবে কি করে!
--গান বয়কট করতে তো কেউ বলে নাই খালাম্মা।
টাবুর মনটা একটু খারাপ হয়, এতো বোটক্স করার পরেও সবাই যদি খালাম্মা বলে ডাকে, তাহলে এসথেটইকস সার্জারিগুলোর টেকাটুকাই নষ্ট হলো শুধু শুধু।
টাবু জিজ্ঞেস করে, রামনগরে মাদ্রাসায় সেদিন কি হয়েছিলো; বন্দুক হাতে কারা এসেছিল!
মেয়েগুলো হো হো করে হেসে ওঠে সে হাসি থামতেই চায় না। একটা মেয়ে হাসি থামিয়ে বলে, এতোদিন যেমন খুশি তেমনি সাজো আইটেমে হেলমেট পরে হাতুড়ি হাতে ছাত্রলীগ, জামদানি শাড়ি পরে নৌকার ব্রুস লাগিয়ে শেখ হাসিনা, পাইপ মুখে বঙ্গবন্ধু, আঙ্গুল উঁচিয়ে ৭ই মার্চের ভাষণের ভঙ্গিতে বঙ্গবন্ধু, ক্রিকেট ড্রেস পরে মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান সাজতে হতো। এইবার যেহেতু সেইরকম কোন আইটেম ঠিক করা নাই তাই পোলাপান ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধা সাজছে।
--ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে একটু দেখা করা যাবে!
মেয়েরা ফোন করে এক কমান্ডার ও দুই যোদ্ধাকে ডেকে পাঠায়। মেয়েদের ইমপ্রেস করতে তারা সেজেগুজে রেডি হয়ে আসে।
টাবু তাদের দেখে হেসে ফেলে। তাদের বানানো অস্ত্রগুলো আরো কৌতুককর। বোধহয় শোলা দিয়ে তৈরি করে তাতে কালো টেপ লাগানো, কালো রঙ মাখানো।
টাবু তাদের সঙ্গে ছবি তুলে বিজিত দোভালের কাছে পাঠায়। দোভাল বিরক্ত হয়ে বলে, টিভি চ্যানেলগুলোতে গঞ্জিকা সেবন নিষিদ্ধ করা দরকার টাবু।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে টাবু যশোর থেকে ঢাকায় রওনা হয়। ঢাকায় সেই আওলাদের রসুল দেখতে আসা জঙ্গির বাসার ঠিকানা জোগাড় করে সেখানে গিয়ে দেখে তার বোন সেই প্লাস্টিকের বন্দুক নিয়ে খেলছে। একটা ছবি তুলে দোভালের কাছে পাঠাতেই তিনি লেখেন, বাংলাদেশের বাচ্চা-কাচ্চাগুলো আমাদের সঙ্গে রসিকতা করছে নাকি! গদি মিডিয়াকে বুদ্ধু বানাতেই কি এসব দুষ্টুমি!
টাবু দেশে ফেরার আগে শাহবাগে যায়। সেখানে আজ আবার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন। ব্যানারে লেখা, জঙ্গী সংস্কৃতি জনপ্রিয় করা বন্ধ করো।
ললিতা তাঁবু পরা টাবুকে সন্দেহের চোখে দেখে। জিনস টিশার্ট পরা লম্বা চুলের পথিকৃত বাতেনকে জিজ্ঞেস করে, জঙ্গী হামলা করতে এসেছে নাকি!
পথিকৃত বাতেন সুনীল মিজান ও আকাশ মোকলেছকে মহিলা জঙ্গীর দিকে নজর রাখতে বলে। আনারকলি এসেই টাবুকে দেখে, জঙ্গী জঙ্গী বলে চেঁচিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
টাবু তার তাঁবু খুলে আনারকলিকে বলে, ওঠো আনারকলি ওঠো, এই দেখো আমি জঙ্গী নই।
ওদিকে ব্ল্যাক স্কার্টপরা ব্ল্যাক আই মেক আপ করা টাবুকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় পথিকৃত বাতেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন