খালেক সাহেবের মুখে লক্ষণ ভালো নয়; কথাটা শুনলে মনে হবে; উনি ভীষণ শুভাকাঙ্ক্ষী; এ শহরের বিশৃঙ্খলা ওনাকে কষ্ট দিচ্ছে। অথচ ব্যাপারটা এর ঠিক উলটো। প্রতিদিন সকালে উঠে প্রেশারের ওষুধ খেয়ে উনি ফেসবুকে ঢোকেন; তন্ন তন্ন করে দেখেন; কোথাও গণ্ডগোল আছে কিনা, টিভি খুলে দেখেন, কোথাও মারামারি লাইভ দেখাচ্ছে কিনা! গণ্ডগোলের তাপমাত্রা কত; এই জ্বরে সরকার কতটুকু দুর্বল হবে; সে জ্বরের চিকিৎসা করতে দিল্লি থেকে চিকিৎসক আনা দরকার পড়বে কিনা! ইত্যাদি নানা উতকণ্ঠার মধ্যে আশার আলো ঝিলিক দেয় টানেলের শেষ প্রান্তে।
ফেসবুকে কোথাও দাড়ি টুপিওয়ালা লোকেদের ‘ইসলামি সরকার চাই’ স্লোগান দিয়ে ছোট্টো একটি মিছিল দেখে খালেক সাহেব বলেন, আগেই বলেছিলাম, ইরানের মতো হবে; বিপ্লব হাইজ্যাক হবে। তখন তো শুনলে না তোমরা; অযথা টোকাই দিয়ে অভ্যুত্থান করে আপাকে ফেলে দিলে। এখান থেকে পেঁয়াজ, ওখান থেকে আলু, সেখান থেকে মশলা এনে তিনি তো আঠারো কোটি মানুষকে ঠিকই খাইয়েছেন। ব্লাউজ পরিয়েছেন, স্যান্ডেল কিনে দিয়েছেন; এমনকি লিপস্টিকের সংস্থান করেছেন। তোমাদের তা সহ্য হলো না।
আনন্দের আতিশয্যে ফোন করে কেশব ভট্টাচার্য, ও খালেক দাদা কেমন বুঝছেন! ঢাকার বাইরে থেকে বাসে করে লোক আসছে ইউসুফ সরকারের কাছে ক্ষুদ্র ঋণ নিতে; ব্যাটারি রিকশাওয়ালারা স্থানে স্থানে বিক্ষোভ করছে; এরা দেশ চালাতে পারছে না; দরকার হলে দিল্লি গিয়ে লাল ঘোড়া উপহার এনে দাবড়ে দিয়ে ইলেকশন করুক। ফেয়ার ইলেকশন হলে আমরাই জিতব।
: আর বলবেন না, কেশবদা সেদিন ম্যাডামকে নিয়ে সেকি আদিখ্যেতা; এজ ইফ তিনি ক্ষমতায় এসে গিয়েছেন। আরে বাবা আরও কিছু সময় যেতে দাও; আমি লিখে দিচ্ছি, এদেশের মানুষ ‘বুবু আমার বুবুজান বলে’ কেঁদেকেটে সীমান্ত থেকে বরণমালা দিয়ে আপাকে ফিরিয়ে আনবে!
কেশব ভট্টাচার্য হাসিতে কুটিপাটি হয়ে বলে, ওদিকে কেলোর কীত্তি হয়েছে; ডেইলি স্টার ঘেরাও করতে গিয়ে পুলিশের বেদম লাঠিপেটা খেয়েছে জোনাকীর কথায় উন্মত্ত উম্মতেরা। এইবার বুঝলে তো বাছা, ভারত বিরোধিতা করলেই লাঠিপেটা।
খালেক অনেকদিন পর প্রাণখুলে হাসে। সেদিন ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিল করতে গিয়ে পেছনদিকে এমন দুটি লাঠির বাড়ি খেয়েছে; এখনও জ্যোৎস্না রাতে সে ব্যথা কনকন করে; তাই জোনাকী ভক্তদের লাঠির বাড়ি খেতে দেখে আনন্দে কুলুকুল করে সে। এই তো মে মাসেও সে গিয়েছিল প্রথম আলোর সামনে সিপি গ্যাং নিয়ে হল্লা করতে। কিন্তু আজ খালেক সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কাণ্ডারী হয়ে উঠেছে।
কেশব ভট্টাচার্য আরও একটু চুলবুল করে ওঠে, জোনাকী বোঝে নাই; বগুড়ার লোক চট্টগ্রাম-নোয়াখালীর কাবাডি খেলায় চান্স পাওয়া কঠিন। আমি হইতে পারি আফসোসলীগ, কিন্তু আমার দুইটা বদ্দা তো এই সরকারেও ঢুকছে। রাজনীতিতে এলাকা ম্যাটার করে।
ভূ-পৃষ্ঠ বিশ্লেষক ঝুমঝুম বাজনদার ফোন করলে, তাকে গ্রুপকলে যুক্ত করে নেয় খালেক। ঝুমঝুম নতুন খবর দেয়, সরকার চালাচ্ছে জামায়াত; বিএনপি পাত্তা পাচ্ছে না। পকেট থেকে নিয়োগ প্রাপ্তদের জামায়াত বানানোর ঠিকুজি বের করে গড় গড় করে বলে যায়, কার বাপ রোকন ছিল, কার শ্বশুর গাজী ছিল।
খালেক টিপ্পনি কেটে বলে, ও দাদা, কার বাপে ট্যাংকের উপর চইড়া নাচছিল, কার শ্বশুর কুড়াল হাতে দৌড়াইছিল; ঐসব লেখা আছে নাকি লিস্টিতে।
বাজনদার খুক খুক করে কেশে বলে, আমি লিখে দিচ্ছি, ভোটে জামায়াতকে জেতানো হবে; যদি তারা জিততে না পারে; দেশটাকে জঙ্গীদের হাতে ছেড়ে দেবে; এ দেশ তখন মায়ানমার হবে।
কেশব আশায় বুক বাঁধে, ময়ূখদা তাইলে ঠিকই বলছিল রাঁচি বাংলা টিভিতে। জঙ্গী এসে পড়লেই তখন আমার তুলসী গ্যাবার্ড দিদি এসে ওয়ার অন টেরর করে এক্স আই পান্না চুনিকে কেয়ারটেকার সরকার করে আবার ইলেকশন দেবে। তখন আর নৌকা ছাড়া আছে কী!
ফোনটা লাউড স্পিকারে ছিল। পাশের ঘর থেকে এসব আষাঢ়ে গল্প শুনে খালেক সাহেবের স্ত্রী সায়রা বানু বলে, তোমরা কী সকালে উঠেই গাঁজার নৌকা দিয়া পাহাড় ঠেলতেছ! তার চাইতে মাইনা নেও না কেন যে, তোমাগো বাকি জীবন কাইন্দা কাইটা যাইব। তোমাগো যা গেছে তা গেছে; কিছুই বাকিই নাই দিনের আলোয়, রাতের তারায়।
সায়রা বানুর ধমক খেয়ে ফোন কেটে দেয় কেশব ভট্টাচার্য ও ঝুমঝুম বাজনদার। খালেকের শিরদাঁড়ায় লাঠির বাড়ির ব্যথাটা কনকন করে ওঠে। একটা বালিশ বুকে নিয়ে কুঁকড়ে শুয়ে পড়ে সে।গুজব রয়েছে, নতুন সিজনটি নেটফ্লিক্সে রিলিজ হবে, এবং শুটিং লোকেশনের জন্য ঢাকার বিভিন্ন জায়গা, বিশেষ করে পুরান ঢাকা, হাতিরঝিল এবং ঢাকার বাইরের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল(উত্তরা) নির্বাচন করা হয়েছে।
তবে ঢাকার বর্তমান অ্যাডভেঞ্চারকে সিরিজে পুরোপুরি নিয়ে আসা সম্ভব হবে কিনা সেটি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রয়োজন হলে ক্রিস্টোফার নোলানকে যাতে এই সিজন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সে দাবিও জানিয়েছেন তারা।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন