জীবনের মূল্যবান দেড়টা ঘণ্টা যেভাবে অপচয় করলাম

৫৭৩ পঠিত ... ১৫:৪৬, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২

Mulloban-der-ghonta

ব্যাংকে গেছিলাম একটা কাজে। সকাল ১০টায় ঢুকেছি। টোকেন নিয়ে বসে আছি। আমার সিরিয়াল ১১৩। কাউন্টার নম্বর ১৯ এর ভদ্রমহিলা হেসে হেসে কথা বলছেন। ফোনে।

ফোন শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার চেহারা গম্ভীর হয়ে গেল। এখন সামনে বসা লোকের সাথে চিবিয়ে কথা বলছেন। ওই লোকের সিরিয়াল ৯২। ভাবলাম মুড সুইং। হতেই পারে৷

ওয়েটিং রুম না থাকায় সামনের বেঞ্চেই বসার ব্যবস্থা। সব কথা শোনা যায়। মহিলা সেই কাস্টমারকে নানাবিধ প্রশ্ন করছেন। এটা সেটা। আমি এমনিতে মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। তবে আজ শুনতে ইচ্ছা করছিল না। একদিকে করোনার টেনশন, আরেকদিকে অফিসে যাবার তাড়া।

মোবাইল বের করে গতরাতে দেখা 'এনকাউন্টার' মুভির রিভিউ পড়তে লাগলাম। রিজওয়ান আহমেদ মুভির নায়ক। ব্রিটিশ এই অভিনেতা আমার খুব পছন্দের। এনকাউন্টার মুভিতে তিনি একজন ইউএস মেরিন সোলজার। কিন্তু ফোর্স থেকে ছাঁটাইকৃত। এতিমখানায় বড় হওয়ার কারণে তার নিজের ছেলেদের প্রতি ওভার পজেসিভ।  

সে ডিল্যুশনে ভুগছে যে পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়া একটা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে সবাই এক অদৃশ্য মাইক্রোঅর্গানিজমের দ্বারা সবাই আক্রান্ত। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এলিয়েন মানুষকে শেষ করে দিচ্ছে। যদিও পুরোটা তার কল্পনা। আসলে এরকম কিছু ঘটছে না।

এ পর্যন্ত পড়ার পরে কাউন্টারের দিকে তাকালাম। ১৫ মিনিট পার হয়েছে। সিরিয়াল নম্বর ৯৩ চলছে। কাউন্টারের মহিলা এখন আগের চেয়েও বেশি বিরক্ত মুখে সামনের একজন মহিলার সাথে কথা বলছেন। দেখলাম তিনি মাউসে কি যেন ক্লিক করতে গিয়েও করলেন না। হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন৷ অথবা ইচ্ছা করে করছেন। আমি খেয়াল করে দেখেছি যখন সার্ভিসের লোকজন কাউকে ঘোলা খাওয়াতে চান, কাঁদিয়ে ছাড়তে পারেন। তখন তাদের উপরে আইনস্টাইনের টাইম ডাইলেশনের থিওরি ভর করে৷ তাদের ঘড়ির সময় আমাদের চেয়ে ধীরে চলে। আমাদের ঘড়ি চলে দ্রুত।

যাই হোক, রিভিউ পড়তে থাকলাম আবার। রিজ আহমেদের বয়স আমার সমান। রনবীর কাপুর ও আমাদের বয়সী। ছেলেটা অনেক দিন মুভি করছে না। আলিয়ার সাথে বিয়েটা কবে হবে?

ঘড়ি দেখলাম পৌনে এক ঘণ্টা চলে গেছে। সিরিয়াল চলছে ৯৫।  

কাউন্টারের ভদ্রমহিলা অট্টহাসি দিল দেখলাম। আবার তার কানে মোবাইল। উনি গতকাল মাওয়া গিয়ে ইলিশ মাছ খেয়েছেন। আরও অনেকেই ছিলেন সাথে, সবার পেট খারাপ হলেও তার হয়নি, এটাই বলছেন।

বলছিলাম রিজ আহমেদের কথা। সে কিন্তু টমাস হার্ডির সাথে ভেনোম সিরিজের প্রথম মুভিতে মেইন এন্টাগোনিস্টের রোল প্লে করেছিল। এনকাউন্টারে দেখা যায়, চন্দ্রাহত মালিক খান (রিজ আহমেদ) তার ছেলেদের ওদের মায়ের কাছ থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। তাদেরকে বলে গভর্নমেন্টের একটা গোপন সামরিক ফ্যাসিলিটিতে সে তাদের নিয়ে যাচ্ছে। আসলে এরকম কিছু নেই। রিজ একজন মানসিক রোগী। সেনাবাহিনী থেকে ছাঁটাই হওয়ার পরে তাকে মানসিক রোগীদের এসাইলামে রাখা হয় ট্রিটমেন্টের জন্য। সে ওখান থেকে পালিয়ে আসে। এই নিয়েই কাহিনি।

আরো অনেক কিছুই পড়ে ফেলেছি এর মধ্যে। সোয়া ১১টা বাজে। সিরিয়াল ৯৮।

সাড়ে ১২টায় আমার মিটিং আছে। কাউন্টার যেভাবে চলছে তাতে লাঞ্চের পরে ছাড়া আগে আমার সিরিয়াল আসার কোনো সম্ভাবনা নাই।  

অথচ এদের কার্ড ব্যবহার করার কারণে আমাকে যেখানে সেখানে বেইজ্জত হতে হয়। গত সপ্তাহে ৯০০ টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ভুল করে কেটে নিলেও আজও রিটার্ন করেনি। আমার ধারণা তারা দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  

অভিযোগ জানাতে হলে একেকজন কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি ১০ মিনিট ধরে একই কথা শোনে, বারবার রিপিট করে আর ধন্যবাদ দিতে থাকে। বারো ডিজিটের কমপ্লেইন নাম্বার লিখে রাখতে বলে। আমি তাদের সবিনয়ে বলি, ‘ভাই এই মুহুর্তে আমি গাড়িতে আছি, কোলে বাচ্চা, আরেক হাতে ফোন, কিভাবে লিখব? আপনারা এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দিন না!’  

অনেক তথ্য প্রমাণ তাদেরকে দিতে হয়েছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। ভাবলাম আমার কার্ডের দোষ। হয়তো চিপটা পুরান হয়ে গেছে ঘষা খেতে খেতে। তাই কার্ডটা বদলাতে আসছিলাম। এই কার্ড আবার তাদের এটিএম বুথেও জমা দেয়া যাবে না। যেতে হবে আমার নির্দিষ্ট ব্র্যাঞ্চে। কেন ভাই? এই ডিজিটাল যুগে আমি অনলাইনে অ্যাপ্লাই করলেই তো কার্ড আমার বাসায় দিয়ে যাওয়া উচিত।

কিন্তু ১৯-এর মুড সুইংওয়ালা মহিলার কার্যক্রম দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম বেরিয়ে যাওয়ার। আবার আরেকদিন আসতে হবে। চিল্লাফাল্লাও করা যাবে না, কারণ কেউ তো কিছু বলছে না। শুধু সরকারি অফিসে সার্ভিস পেতে মানুষের হয়রানি হয় কথাটা বোধহয় ঠিক না। ‘সার্ভিস পাওয়া’ ব্যাপারটাই তো বাংলাদেশের মানুষের কাছে অপরিচিত, তারা এটা ভুলেই গেছে।

৫৭৩ পঠিত ... ১৫:৪৬, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top