মেয়ের বয়স তিন বছর। অন্য শিশুদের চেয়ে একটু দেরিতেই কথা বলা শিখেছে। বাবা ঘুমানোর আগে তাকে ঘুমানোর প্রার্থনা বলা শিখিয়েছেন। এমনই কোনো এক দিন মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে তাকে গল্প শোনানোর পর তার কাছ থেকে ঘুমানোর প্রার্থণা শুনতে চাইলেন বাবা। মেয়েটি তার প্রার্থনা শেষ করলো এভাবে, 'ঈশ্বর মার সহায় হউন, ঈশ্বর বাবার সহায় হউন, ঈশ্বর দাদীর সহায় হউন এবং শুভবিদায় দাদাজান।’
‘তুমি কেন তোমার দাদাজানকে শুভবিদায় জানালে?’ বাবা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন মেয়েকে।
মেয়ে জানালো, সে জানে না। শুধু তার কাছে কেন যেন মনে হলো এমনটা বলতে হবে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, পরের দিন সত্যি সত্যি মেয়েটির দাদা মারা গেলেন।
বাবা ভাবলেন, এটি হয়তো কাকতালীয় ব্যাপার।
কয়েক মাস পরে একইভাবে বাবা মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মেয়ের কাছে থেকে তার রাতে ঘুমানোর প্রার্থনা শুনছিলেন। মেয়েটি আবারও একইভাবে প্রার্থণা শেষ করল সেই আগেরবারের মত, ‘ঈশ্বর মার সহায় হউন, ঈশ্বর বাবার সহায় হউন, এবং শুভবিদায় দাদীজান।' পরের দিন ঠিকই মেয়েটির দাদী মারা গেলেন।
‘সর্বনাশ!’ বাবা ভাবলেন, 'মেয়ে যা বলছে তাই দেখি ঘটে যাচ্ছে।' মেয়ের রাতের প্রার্থনাকে তিনি ভয় পেতে শুরু করলেন। এরপর থেকে মেয়ের কাছে তিনি রাতের প্রার্থনা শোনা বন্ধ করে দিলেন।
কয়েক সপ্তাহ পরের কথা। বাবা মেয়ের ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দরজা থেকে মেয়ের ঘুমানোর আগের প্রার্থনাটি তিনি শুনতে পেলেন, সে বলছিলো, 'ঈশ্বর মার সহায় হউন, এবং শুভবিদায় বাবা।’ বাবা আতংকিত হয়ে পড়লেন! কী সর্বনাশ! রীতিমত মৃত্যুভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিলেন তিনি।
সারা রাত তিনি এক ফোঁটা ঘুমাতে পারলেন না। এক ফাঁকে উঠে উইল লিখে ড্রয়ারে রাখলেন। পরদিন সারাটা দিনই অসহায়ের মত আচরণ করতে থাকলেন! দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হবার পর ঘরে ফিরতেও ভয় লাগছিল তার। হঠাৎ তিনি ভেবে দেখলেন, তার এই অদ্ভুত ক্ষমতাধর মেয়ের এই ভবিষ্যদ্বানী আজকে সারাদিনের জন্য প্রযোজ্য হয়ে থাকতে পারে। মধ্যরাত অর্থাৎ মেয়ে আজ রাতে ঘুমানো পর্যন্ত তিনি যদি বেঁচে যান, তাহলে বেঁচে যেতেও তো পারেন!
ভদ্রলোক বাসায় ফিরলেন মধ্যরাতে। তার চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ। নিশ্চয়ই এখন আর বিশেষ কোনো বিপদ নেই। তিনি বুঝি বেঁচেই গেলেন!
বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী তাকে প্রশ্ন করল, ‘আমি তোমাকে কোনোদিন এত রাত পর্যন্ত কাজ করতে দেখি নি। কাহিনী কী বলো তো?’ তার উত্তর, ‘আমি আজ জীবনের সবচেয়ে বাজে সময় কাটিয়েছি। আমি আসলে এটি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না!
মুখ বেজার করে স্ত্রী তাকে বললেন, 'শুধু তোমার বাজে দিন গিয়েছে নাকি? তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না আমার সঙ্গে আজ কী হয়েছে! পাশের বাসার ভদ্রলোক আছে না? তিনি আজ বিকেলে আমাদের বাসায় এসে সোফায় বসে হার্ট এটাক করে মারা গেছেন...'
*বিদেশী গল্প থেকে অনুদিত
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন