মাত্র ৪৫ হাজার টাকা বেতনে যেভাবে ছেলেকে ৪৫ লক্ষ টাকার গাড়ি কিনে দিলাম

১১৬ পঠিত ... ১৬:৪২, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

2

লেখা: হাজাত সাব্বির

৩০ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি জুটিয়েই বিয়ে করে ফেলব। এরপর ৩৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় উঠব, শালিসহ। ইন্টার পাশ শালিটাকে ভর্তি করাব নর্থ সাউথে।

ছেলেটাকে দিয়ে দেব পশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ক্লাস ওয়ানেই যার মাসিক বেতন ১৭ হাজার টাকা। ওর স্কুলে যাতায়াতের জন্য একটা টয়োটা প্রিমিও কিনে দেব, সাথে থাকবে পার্মানেন্ট ড্রাইভার।

বউ, ছেলে আর শালিকে নিয়ে উইকেন্ডে ফাইভ স্টারে যাব ব্যুফে খেতে, কলিগসহ। বেতনের টাকায় পোষাচ্ছে না মর্মে সবাই মিলে হা হুতাশ করব। এরমধ্যেই শালিটা আবদার ধরবে আইফোনের লেটেস্ট ভার্সনটার জন্য।

ছেলেটা ক্লাস ফাইভে উঠতে উঠতে আমি প্রমোশন পেয়ে যাব, বেতন হবে ঝাড়া ৪৫ হাজার। এবার ছেলের স্কুলে যাওয়ার জন্য কিনে দেব Lexus IS250, ৪৩ লাখ টাকা দাম। ওর বন্ধুরা অডিতে করে স্কুলে আসে, লেক্সাসে না চড়লে ওর মান সম্মান থাকে না আসলে। জন্মদিনে আমার বাবাটাকে গিফট দেব একটা আইফোন।

ততদিনে শালিটা পাশ করে মডেলিঙের নামে ফাত্রামি করে বেড়াবে। ওটাকে বিয়ে দিয়ে দেব আমার মতো ৩০ হাজার টাকা বেতনে ঢোকা কোনো ছোকরার কাছে। বিয়েতে খরচা হবে আড়াই কোটি টাকা।

ছেলেটা ক্লাস এইটে উঠলে ওকে একটা ইয়ামাহা R15 V4 কিনে দেব। এই বয়সে গার্লফ্রেন্ড হবে, এদিক সেদিক ঘুরতে যেতে মন চাবে। শখ আহ্লাদ বলে তো কিছু জিনিস আছে, নাকি?

ছেলেটার ও লেভেল পাশ করার খুশিতে ওকে একটা ফ্ল্যাট কিনে দেব, গুলশানে। ততদিনে আরেকটা প্রমোশনে আমার বেতন ৫৫ হাজার। দুই কোটি টাকার একটা ফ্ল্যাট তো ও ডিজার্ভ করে। ছেলের বয়স হচ্ছে, গার্লফ্রেন্ড বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসার জন্য, মাঝেমধ্যে পার্টি দেওয়ার জন্য একটা পার্সোনাল প্লেস তো লাগে! আমার দুই নয়নের মণিটার জন্য সব থাকা দরকার।

বাবাটা এ লেভেল পাশ করে ফেলবে চিল করতে করতেই। সেই খুশিতে একটা অডি কিনে দিয়ে জানতে চাইব ও কোথায় পড়তে চায়। আমেরিকা কানাডার সেরা সব ইউনিভার্সিটির মধ্যে যেটা ও পছন্দ করবে, ভর্তি করিয়ে দেব। কয় টাকা আর লাগবে? ৬০ হাজার বেতন পাই, আমার কি টাকার অভাব?

মাঝেমধ্যে ছেলেকে দেখতে কানাডা যাব, দেশ থেকে অনেক উপহার নিয়ে যাব। ততদিনে আমার লাস্ট প্রমোশন ডান। কানাডার সাসকেচুয়ানে বরফের মধ্যে বাপ ছেলে ওভারকোট পরে জড়াজড়ি করে হাসিমুখে ছবি তুলব। বাবা দিবসে ছেলে ইনস্টাগ্রামে আমার ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপশন দেবে, বেস্ট ড্যাড ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড!

যেদিন ছা-পোষা চাকরিটা থেকে অবসরে যাব, ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করার জন্য কানাডা থেকে আমার বাবুটা আসবে। হলভর্তি লোকের সামনে দাঁড়িয়ে আর্দ্র গলায় বলবে, পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একটা খারাপ বাবাও নেই। আই লাভ মাই ড্যাড, হি ইজ মাই হিরো!

সফল বাবা হওয়ার সুখে আমার চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে নামবে অশ্রু। এ অশ্রু সুখের, এ অশ্রু সার্থকতার, এ অশ্রু আনন্দের!

ওটাই হবে বাবা দিবসে আমার শ্রেষ্ঠ উপহার!

 

 

১১৬ পঠিত ... ১৬:৪২, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top