আমাদের অতি বিশ্বাসী মন

৯৭ পঠিত ... ২১ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে

chinta-5

প্রেমিক প্রেমিকার কাছে প্রতারিত হলে মনটা পাগলা হয়ে যায় আমাদের। বিশ্বাসকে কাচের টুকরার সাথেও তুলনা করে থাকেন অনেকে। একবার ভেঙে গেলে নাকি জোড়া লাগানো যায় না। তবে বিশ্বাস নিয়ে একটা অবজারভেশন খুব মজার। মানুষ হিসেবে আমরা হয়তো অনেক বেশি বিশ্বাসী। কেন জানি না বিশ্বাস করতে আসলে ভালোই লাগে। 

মানুষের কথার উপর বিশ্বাস করে আমরা অনেকদিক থেকে একটু স্বস্থিতে থাকতে পছন্দ করি। নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের উপর বিশ্বাস রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যাই, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা সুরক্ষিত থাকবে ভেবে টাকা জমাই, কিংবা নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গাড়ি চালাবে ভেবে মোটরসাইকেল কিংবা বাসে উঠি। কোনো একটা কোম্পানি ভালো ওষুধ বানায় এটা বিশ্বাস করে যেমন ওষুধ কিনি তেমনি বিশ্বাস করেই রাস্তায় মাঝে মাঝে অসহায় মানুষকে সাহায্য করি আমরা। 

যেখানেই আমি ছাড়া অন্য কারও সাথে যে কোনোরকম আদান প্রধান কিংবা এক সাথে সহাবস্তানে থাকতে হয় তখনই বিশ্বাস বিষয়টা চলেই আসে। সেই ভাবে ভাবতে গেলে দেখা যাচ্ছে আসলে সব কিছুতেই বিশ্বাস বিষয়টা জড়িয়ে আছে। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যপারও আছে। আমাদের সামনে সবার প্রথম যে তথ্যটা আসে আমরা সেটাকেই বিশ্বাস করে ফেলি বলে মনে হয়। 

এক হাজার মানুষকে যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা চুরি করে ছাপিয়ে নোবেল পুরস্কার জেতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়, সেখানে অসংখ্য মানুষ পাওয়া যাবে যারা এই তথ্যকে বিশ্বাস করে। এখনও অনেক মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনাই আসলে ঠিকঠাক দেশ চালাচ্ছিলেন। আবার অনেকেই বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা জানুয়ারির শেষের দিকে দেশে এসে ক্ষমতা নিয়ে নেবেন। 

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় লজিককেও ছাড়িয়ে যাই বলে মনে হয়। সেটা মনে হয় রাজনীতিতে বিশ্বাসের বিষয়টা। শেখ হাসিনা পালায় না, শেখ হাসিনা পালায় নাই, কথায় বিশ্বাস করে অনেক আওয়ামী নেতা শেখ হাসিনার গদি বাঁচানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিল, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও অনেকেই বিশ্বাস করে বসে ছিল শেখ হাসিনা আশেপাশেই আছেন আর যেকোনো মুহূর্তে চট করে ঢুকে পড়বেন, অনেকে এখনও বিশ্বাস করেন জানুয়ারি মাসেই হয়তো শেখ হাসিনা কামব্যাক করবেন। 

ছাত্রদলের এক নেতা বিশ্বাস করেন তার দলের কেউ এক টাকাও চাঁদা নিচ্ছে না, শিবিরও বিশ্বাস করে তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষেই ছিল, অনেকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল আর যুদ্ধে নারী ধর্ষিত হয়েছিল মাত্র ২ জন। এই কথাগুলো যিনি বলেছেন তাকে যারা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন, তারা সবাই হয়তো এই স্ট্যাটিস্টিক্সকেই বিশ্বাস করেও ফেলেছে। কিন্তু অন্য পাশে মুক্তিযুদ্ধে আহত, নিহত ও বীরাঙ্গনার সংখ্যা নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন কিংবা এখনও করছেন তাদের কাছে ৩ লাখ শহীদ কিংবা ২ জন বীরাঙ্গনার হিসাব আসলে পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না। 

বিশ্বাসকে আসলে কোনোভাবেই কন্ট্রোল করা যায় না। জীবনে চলতে চলতে বিশ্বাস গড়ে ওঠে আর বিশ্বাস থেকে জন্ম নেয় সত্যের। সত্য যেমন একেক জনের চোখে একেক রকম, বিশ্বাসটাও এমনই। কিন্তু সবার বিশ্বাস যে সব সময় সত্য, সেটা কোনোভাবেই মিথ্য হতে পারে না, বিশেষ করে রাজনীতির ক্ষেত্রে,  এমন ধারণা করা অনেকটাই বোকামির হতে পারে। সেটার যদি প্রমাণ পেতে চান তাহলে, বাংলাদেশের গত ১৫ বছর ইতিহাস আরেকবার নতুন করে ভেবে দেখতে পারেন। কিংবা ভাবতে পারেন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসের কথা।

 

৯৭ পঠিত ... ২১ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top