জীবনে একবার বিজয় সরণির জ্যামের স্বাদ নিলে সেই স্মৃতি কোনোভাবেই ভোলার নয়। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এই জ্যামের খ্যাতি পৌঁছে গেছে বিদেশেও। এমনকি আমেরিকায় বড় কোনো জ্যাম হলে সেটাকে কেউ কেউ ‘বিজয় সরণির জ্যাম’ বলেই নাকি ডেকে থাকে। তবে এবার সেই খ্যাতিকে পানি পানি করে দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের তৈরি করা জ্যাম।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তার যাত্রার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার্টার্ড ফ্লাইট অপেক্ষা করছে। খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে এবং তাকে দেখতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন।
গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ পথ ছিল নেতাকর্মী ও নিরাপত্তা সদস্যদের ভিড়ে ঠাসা। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ধীরগতিতে এগোতে বাধ্য হয়। হাঁটার গতিতে চলা গাড়িগুলোর সঙ্গে নেতাকর্মীরাও পায়ে হেঁটে পুরো পথ পাড়ি দিয়েছেন। ফলে নয় কিলোমিটার পথ পার হতে গাড়িবহরকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়।
বাংলার হাজার বছরের জ্যামের ইতিহাসের সাক্ষী বিজয় সরণির দীর্ঘকালের রেকর্ড একদিনেই ভেঙে দিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের এই জ্যাম। রাস্তায় আটকে থাকা সাধারণ মানুষ হয়তো এই ঘটনাকে ভবিষ্যতে রোমন্থন করবেন, এমনটাই ধারণা করছেন কেউ কেউ।
এদিকে এই রেকর্ড হারিয়ে বিজয় সরণির মন ভীষণ খারাপ। সকাল থেকেই সে ঠিকমতো জ্যাম তৈরির চেষ্টাও করেনি। হতাশায় ‘দেখো, তোমরা যা ভাল মনে করো’ মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগের রাতে নিজের ব্যর্থতার কথা চিন্তা করে হায় হুতাশ করেছে।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের তৈরি এই জ্যামে রাস্তার অনুভূতিটা ছিল একেবারে অন্যরকম। যেন রাস্তার প্রতিটা ইঞ্চি গর্বে ফুলে উঠেছে। এত গাড়ি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা—এটা রাস্তার জন্য এক ধরনের সম্মান। রাস্তার ভাষায় বললে, আমাদের জীবনে কত জ্যাম দেখেছি, কিন্তু এমন জ্যাম তো আর কোনোদিন হয়নি। এত নেতা, এত কর্মী, এত গাড়ি—এ যেন এক উৎসবের মতো!
এই জ্যামে আটকে থাকা গাড়িগুলোও যেন নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছিল। আমরা বিজয় সরণিতে আটকে থেকে বোর্ড ছিলাম এতদিন, কাল নতুন রেকর্ডের সাক্ষী হলাম। আমাদের শরীরে ধুলো জমেছে ঠিকই, কিন্তু এই ধুলোতে আছে গর্বের পরশ। এই ধুলো ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কোনো কোনো গাড়ি তো ইঞ্জিন বন্ধ করে বিশ্রাম নিতেও শুরু করেছিল, যেন দীর্ঘদিনের ক্লান্তি দূর করার সুযোগ পেয়েছে।