লেখা: ইশতিয়াক শিকদার
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনকে দেওয়া মেজর ডালিমের দুই ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎকারে দুঃখজনকভাবে যে কথাগুলো বাদ পড়ে গেছে:
১। শেখ কামালের সাথে তার বন্ধুত্ব এবং শেখ মুজিবের বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত। শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানার সাথে মেজর ডালিম ও তার স্ত্রী নিম্মির অন্তরঙ্গ আড্ডার পুরানো ফটোগ্রাফ অনলাইনে খুঁজলে পাওয়া যাবে। শেখ মুজিবের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসাকে মেজর ডালিম মা বলে ডাকতেন।
২। ৭১ পরবর্তী আওয়ামী দুঃশাসনের তুঙ্গে মেজর ডালিম তার স্ত্রী ও শালাবাবুকে নিয়ে আওয়ামী নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার পারিবারিক একটি বিয়ের নিমন্ত্রণে যান। এসময় বিয়ে বাড়িতে হাতাহাতির ঘটনায় উক্ত নেতার সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং এর কিছুদিন পরই সেনাবাহিনী থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
৩। মুজিব হত্যার প্রধান কুশীলব মেজর ফারুক রহমান এবং মেজর আব্দুর রশিদের অনুরোধে ১৫ই অগাস্টের অপারেশনে যোগদান করেন ডালিম। কিন্তু ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে মুজিবের বাড়িতে সে রাতে যে অ্যাম্বুশ হয় তাতে ডালিম যোগ দেননি। তিনি জানান যে মুজিব পরিবারের সাথে সখ্যতার দরুন তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়তে পারেন এবং তাতে করে অপারেশনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
খুব সংক্ষেপে এই হলেন তিনমাসের সূর্যসন্তান রেডিও জকি মেজর ডালিম। শেখ মুজিবের বিশিষ্ট অনুচর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে রেডিওতে মুজিব হত্যার ঘোষণাটা তিনিই দিছিলেন। অপারেশনের অন্যতম হোতা নব্য প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক দেশের উদ্দেশ্যে সম্প্রচারিত তার প্রথম সম্ভাষণে ডালিম, ফারুক, রশিদ সহ অপারেশনে যোগদানকারী সবাইকে সূর্যসন্তানের মর্যাদা দেন। এর মাত্র তিন মাসের মাথায় কর্নেল আবু তাহের এবং তৎকালীন জাসদের নেতৃত্বে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারের সম্পূর্ণ পতন ঘটে।
ক্ষমতা হস্তান্তরকালীন সময়ে ৩ নভেম্বর মোশতাকের আদেশে খুন করা হয় জেলবন্দী তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামরুজ্জমান এবং মোহাম্মাদ মনসুর আলীকে, যারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের প্রধান কর্ণধারদের অন্যতম এবং মোশতাকের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ডালিম। হাসিনা সরকারের আমলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত তার অপারেশন লিডারদের অন্তত একজন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণভিক্ষার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে নাকচ করে দেওয়া হয়। ডালিম তখনও পলাতক এবং সম্পূর্ণভাবে নিশ্চুপ।
তেলাপোকাও পাখি, আর মেজর ডালিমরাও আজকে বিপ্লবী। ক্ষমতা দখলের স্বার্থান্বেষী আঁতাত আর রাজনীতির নেংটা প্রতিহিংসাপরায়নতা কয়েক লাখ ভিউজ এর খোঁচায় গণবিপ্লব হয়ে যায় না। কোনো রকমের রাজনৈতিক/দার্শনিক আদর্শ বা গভীরতা বিবর্জিত এই লোক তার দুইঘণ্টার বিরক্তিকর সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে এটাও বলে বসলেন, দুইপক্ষের গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে মুজিব নাকি ক্রসফায়ারে মারা গেছিলেন তাকে খুন করা হয় নাই। এমন কাঁচা মিথ্যা কথা বলা কাপুরুষ ধ্বজসন্তানকে বিপ্লবী আইকন মানবার স্বার্থ কিংবা জড়বুদ্ধিহীনতা কি নিতান্তই সাময়িক, নাকি স্থায়ী নতুন কোন ন্যারেটিভ—এটা আগ্রহ ও আতঙ্ক নিয়ে দেখবার বিষয়। বাচ্চাদের যেমন খুশী তেমন সাজো প্রতিযোগিতার মতন একটা মজাদার সময় পার করতেছি বলে মনে হচ্ছে আপাতত। ইংলিশ এ যাকে বলে, Anything goes.
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনকে অনেকদিন থেকে ফলো করি। ক্যামেরার সামনে তার অনুগামী, লালায়িত স্যার-স্যার প্রলাপ দেখে নিজের অনিচ্ছাতেই নাকটা কুঁচকে আসলো। We all have our own biases apparently.
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন