নিরক্ষর বাবারা, তোমরা মানুষ হবা কবে?

১৫৬ পঠিত ... ১৭:১৭, জানুয়ারি ০৫, ২০২৫

7 (3)

ধরুন, অফিসে নিজেদের রেগুলার কাজের পাশাপাশি একটা বাড়তি কাজের জন্য আপনারা দুজন দায়িত্বপ্রাপ্ত। এরমধ্যে আপনার সহকর্মী কিছুই করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল। পুরো কাজটির দায়িত্ব পড়ল আপনার ওপর। আপনি তেমন কোনো অভিযোগ না তুলেই কাজটি করতে শুরু করলেন। দুএকটা ভুল করলেন। এরপর আপনার ভুলগুলো অফিসের নোটিশবোর্ডে জ্বলজ্বল করে ঝুলিয়ে দেয়া হলো। পুরো অফিস মিলে বলতে শুরু করলো, আপনি কাজ পারেন না। আপনি ব্যর্থ। সকল দোষ আপনার। 

শুনতে অবাক লাগলেও বাংলাদেশের মায়েদের সাথে এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটেই। রান্নাবান্না, ঘরদোর দেখাশোনা, শ্বশুর, শাশুড়ির সেবা, দেবর ও ননদের দেখাশোনা, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেয়া, স্বামী সেবার পাশাপাশি সন্তান পালনের পুরো দায়িত্বটা এসে তাদের কাধেই পড়ে। সাথে সকল ভুল ও দোষের দায়ভারও চলে আসে মায়েদের কাধেই। আজকাল অবশ্য গবেষণা করেও মায়েদের কাঁধে দোষ চাপানোর ট্রেন্ড চালু হয়েছে।

৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে একটা গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আইসিডিডিআরবি-এর এই গবেষণায় বলা হয়েছে, মায়েরা জানে না কীভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হয়, শিশুকে খাওয়াতে হয়। ৩১ জন মায়ের ইন-ডেপথ ইন্টারভিউ নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এটা তো একটা প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা। মায়েদের নিয়ে সমাজে কিছু সামাজিক গবেষণাও প্রচলিত আছে। ছেলে-মেয়ের রেজাল্ট খারাপ, দোষটা শুধু মায়ের। মা সন্তানকে ঠিকঠাক লেখাপড়া করাতে পারেন না। সন্তানের ব্যবহার খারাপ, দোষ মায়ের। সন্তান অসুস্থ, দোষ মায়ের। মা ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারে না। সন্তানের শারীরিক অবস্থা খারাপ, দোষ একজনের। মায়ের। শেষমেষ আমরা এও জানলাম, সন্তানকে ঠিকঠাক খাবার স্যালাইন খাওয়ানো যাচ্ছে না, দোষ মায়ের।

এইসব দেখে মাঝে মাঝে এই দেশের বাবাদের জন্য আমার খুবই আফসোস হয়। এরা এতটাই নিরক্ষর যে, সন্তানের সব কাজ মাকেই করতে হয়। সামান্য স্যালাইন বানানোটাও এই নিরক্ষর বাবাদের দিয়ে হয় না। সন্তানকে লেখাপড়া করানোওটাও হয়ে ওঠে না। সন্তানের স্বাস্থ্য, শারীরিক ও মানসিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়ার জ্ঞান্টুকুও দেশের বাবাদের নেই। ডায়াপারটুকুও পরিবর্তন করতে পারে না। সন্তান কান্নাকাটি শুরু করলে ছুটে যেতে হয় মায়েদের কাছে, বাবাদের মধ্যে কান্না থামানোর স্কিলটুকুও নাই। সন্তানকে পছন্দের খাবার বানিয়ে খাওয়ানো তো দূর কি বাত!

আইসিডিডিআরবি বাবাদের নিয়ে কোনো ইন-ডেপথ গবেষণা করবে কি না আমার জানা নেই! করতেও পারে, নাও করতে পারে। সেটা তাদের বিষয়। আমি শুধু এদেশের বাবাদের বলতে চাই, হে নিরক্ষর বাবারা, তোমরা শিক্ষিত হবা কবে? স্যালাইনের গায়ে লেখা নিয়ম-কানুন দেখে স্যালাইন বানানোর কাজটুকু তোমরা আর কবে শিখবা? সন্তান বড় হয়ে তাদের নাতি-নাতনি হয়ে গেলে তখন?

১৫৬ পঠিত ... ১৭:১৭, জানুয়ারি ০৫, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top