একসময় রাজনীতির বাজারে চেতনার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। ন্যাশনাল ফ্যানের মতোই চেতনা এক সময় ছিলো পোক্ত আর এর চাহিদাও ছিল সর্বত্র। কোনো ভুল ভাল কাজ করে ধরা খেলে সেই ইস্যুতে একটু চেতনা ছুঁড়ে দিতেন, আর তা লুফে নিতে চারপাশের সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়তো। চেতনার বাজার এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সকাল দুপুর রাতে চেতনার ডোজ ছাড়া চলত না অনেকের জীবন।
চাহিদার সাথে সাথে চেতনার যোগানও আসতো সমানতালে। শুধু রাজনীতিই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চেতনার ব্যবসা রমরমা ছিল। এতো পরিমাণ যোগানের ফলে বাজার দ্রুত স্যাচুরেটেড হয়ে পড়তে থাকে। আর অর্থনীতির মাস্টাররা বলেন, চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হলে পণ্যের দাম কমে যায়। নকল পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। চেতনার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিলো।
অনেকেই বলেন সময়ের সাথে সাথে নকল চেতনায় বাজার অনেকটাই টালামাটাল হয়ে গিয়েছিলো। একই সাথে চেতনার উপর এক চেটিয়া দখলদারিত্ব দেখানোর কারণে এই বাজার ফেইল করে যায়, এবং উদ্যোক্তারা নতুন পথ খুঁজতে শুরু করেন।
অর্থনীতিতে কিছু একটার ফেইল করলে তার বিকল্প হিসেবে নতুন কিছু উঠে আসে। চেতনার বাজার ধসে পড়ার পর উদ্যোক্তাদের চোখে পড়ে স্পিরিট। নতুন এই পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস ক্রমশ বাড়ছে। তারা বলছেন স্পিরিট হলো এমন এক জিনিস যা যে কোনো জায়গায় কাজ করবে। আর মজার ব্যাপার বলো যখন যেখানে প্রয়োজন, স্পিরিট সরবরাহ করা যায় সেখানেই।
অনেক উদ্যোক্তা ইতোমধ্যেই স্পিরিট চাষ শুরু করেছেন। তারা তাদের বাজারে মনোপলি ধরে রাখবেন নাকি মুক্তবাজার অর্থনীতির হাতে ব্যবসা ছেড়ে দেবেন তা এখনো অস্পষ্ট। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট খেয়াল করছেন কেউ কেউ— ব্যবসার মূলনীতি নিয়ে আপত্তি জানালে তাকে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে বলছেন তারা।
দেশের অন্যতম পুরোনো প্রতিষ্ঠান কেরু ইতোমধ্যেই স্পিরিট ব্যবসার অফিসিয়াল পার্টনার হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কেরু, যারা দেশীয় পণ্য কিনে হোন ধন্য এই স্লোগানে পরিচিত, স্পিরিট ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তাদের সাথে কোলাবরেশন করতে চায়। তাদের যুক্তি, এই কোলাবরেশনে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। কেরুর স্পিরিটের অভিজ্ঞতা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে, আবার নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা কেরুর ব্যবসায়িক ক্ষেত্র প্রসারে ভূমিকা রাখবে।
চেতনার বাজার ধস এবং স্পিরিটের উত্থান উদ্যোক্তাদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। যারা একসময় চেতনাকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতেন, তারাও এখন স্পিরিটকে ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
স্পিরিট ব্যবসায় কি নতুন উদ্যোক্তারা সফল হতে পারবেন? তাদের ব্যবসার মডেল কি মনোপলি হয়ে থাকবে নাকি মুক্তবাজারের হাতে ন্যস্ত হবে? কেরুর সাথে যৌথ উদ্যোগ কি সত্যিই বাজারে নতুন উদ্দীপনা আনবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—স্পিরিটের ব্যবসা এখন উদ্যোক্তাদের নতুন আশার আলো।