একটি শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু করার জন্য যে জিনিসটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা হলো পাঠ্যবই। ফিগারেটিভলি, ব্যাপারটি এমন নয় যে পাঠ্যবই না পড়লে শিক্ষাজীবন অপূর্ণ থাকবে কিংবা পাঠ্যবই পড়লেই একজন মানুষ শিক্ষিত হবে। তবে সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকে। যেমন, ভাত খাবার আগে আপনি হাত ধোবেন। রাস্তায় লাল বাতি জ্বললে আপনি থামবেন। সিমিলারলি, পড়ালেখা শুরু করতে স্কুলে ভর্তি হবেন। মেরি শেলি, অগাথা ক্রিস্টি কিংবা থমাস এডিসনরা স্কুলে যাননি। এতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে ঘুরছে, সূর্য উদিত হয়েছে-অস্ত গিয়েছে। আমরাও পেয়েছি কালজয়ী লেখক-বিজ্ঞানী। এই লেখাটি তাদের নিয়ে নয়। অসাধারণের উদাহরণ টেনে সাধারণকে নিষ্পেষিত করা কারও উদ্দেশ্য নয়। আমরা বরং কথা বলব সাধারণ মানুষকে নিয়ে। আমরা কথা বলব বাংলাদেশের স্কুলে যাওয়া ২ কোটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে, তাদের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে।
মাওলানা রবিউল হাসান নামে একজন ভদ্রলোক ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন পাঠ্যবইয়ের ছবি নিয়ে। হাত আছে, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে—লিখতেই পারেন। তবে সমস্যা হলো তিনি যা বলতে চাচ্ছেন সেটাতে। প্রথম শ্রেণীর পাঠ্যবইতে ছোটো ছোটো ছোটো কিশোরীর ছবি, তাদের গলা-মুখে তিনি যৌনতা খুঁজে পান। প্রতি পৃষ্ঠায় মেয়ে শিশুর প্রতিকৃতি দেখে তিনি মস্তিষ্ক বিকৃতির কথা বলেছেন, কাম ইচ্ছা জাগ্রত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরচেয়ে ভয়ানক একটা শিশুর জন্য আর কী হতে পারে?
লক্ষ্য করলে দেখবেন, পাঠ্যবইতে ছবি সংযোগের হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণীর বইতে যে পরিমাণ রঙিন ছবি দেখবেন, ষষ্ঠ শ্রেণির বইতে দেখবেন না। আবার একাদশ দ্বাদশে উঠতে উঠতে ছবির সংখ্যা (ডায়াগ্রাম কিংবা চার্ট ছাড়া) হয়ে পড়ে শূণ্যের কোটায়। এর কারণ কী?
প্রায় ৬৫% মানুষই ভিজ্যুয়াল লার্নার। অর্থাৎ শেখার ক্ষেত্রে ছবি বা চিত্র একটি বড় ভূমিকা রাখে। অ্যালান পায়ভিও নামের এক ভদ্রলোক ১৯৭১ সালে তার ড্যুয়াল কোডিং থিওরিতে দেখান মানুষ ভিজ্যুয়াল এবং টেক্সট আলাদা পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া করে। ছবি এবং টেক্সট একত্রে থাকলে তা প্রসেস করতে বেগও পেতে হয় কম। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ছবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ রঙিন ছবিগুলো মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। একই কারণে প্রাপ্তবয়স্করাও সাদাকালো প্লেইন টেক্সটের চেয়ে রঙিন লেখা পছন্দ করে।
এছাড়া ৫-৬ বছর বয়সী শিশুদের অ্যাটেনশন স্প্যান সাধারণত ৮-১৫ মিনিটের মতো। মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব পরিণত হবার সাথে সাথে এই স্প্যানও বাড়তে থাকে। পড়ালেখা না করুক, শুধু অভ্যস্ত করতে হলেও বইয়ের সাথে সময় কাটানো জরুরি। আর এখানেই ছবির জয়।
এভারেজ বাংলাদেশি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক দৌড় এতটুকুই। এ নিয়ে হা-হুতাশ করাও অনর্থক। যাদের ছবির ফ্রক পড়া মেয়ে শিশুর পা দেখলে দাঁড়িয়ে যায়, যাদের ব্লাউজ পড়া মা দেখলে কামবাসনা জাগ্রত হয়, এদের শিক্ষা দেবার কিছু নেই। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন ছেলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোতেও যৌনতার ইঙ্গিত আসবে। আর আমরা টিনের চশমা পড়ে দেখেও না দেখার ভান করে থাকব। এভাবেই দিন কাটবে, বছর ঘুরবে, আর আমাদের সন্তানরা বড় হবে কিছু কামাতুর মানুষের মধ্যে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন