লেখা: রাজীব কান্তি রায়
পুরোনো কাজ, পুরোনো লেখা আর পুরোনো ঘটনা (১৪ বছর আগের) অথচ আজও প্রাসঙ্গিক।
মাধ্যম: ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক।
২০১১ থেকে ২০২১। আজ ৭ জানুয়ারি। ফেলানী হত্যার বিচার না পাওয়ার দশম বছর।
হালুয়া-রুটির ভাগাভাগিতে দেশটাকে যারা লাল রুটির মতো এখনও ছিঁড়েফুঁড়ে চিবিয়ে খাচ্ছে, যারা দেশভাগের নাম করে জমিনের মধ্যখানে কাঁটাতারের দেয়াল তুলেছে, তারপর সেই কাঁটাতারে দ্রুমদাম গুলি করে ঝুলিয়ে দিচ্ছে কুয়াশায় রক্ত জমে কালো হয়ে থাকা ফেলানীর লাল জবার মতো শরীর। ঝুলে থাকে পোশাকের মতো, ঝুলে থাকে ১৪ বছরের ছোট্টো কিশোরী । সেই গুলির ক্ষত চুয়ে রক্ত ঝরে সীমান্তের সবুজ জমিনে।
পোশাক ঝুলে থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু মানুষও কী!
বিশ্বায়নের নামে বাজার দখল করে অর্থনৈতিকভাবে, এদেশের মাটি কামড়ে বেঁচে থাকা মানুষকে যারা প্রতিনিয়ত ঝুলিয়ে দিচ্ছে, বন ধ্বংস করে প্রতিবেশীর জন্য রামপাল বানাচ্ছে, মায়ের মতো নদীগুলোর গলা টিপে ধরছে ,সীমান্তে কোনো মানুষকে নয় , চোরাকারবারী, বিনা ট্যাক্সে মাল আমদানিকার, গরু পাচারকারী কিংবা দেশভাগের বলি হয়ে দুদিকে আটকে পড়া, মা কিংবা ভাইকে দেখে কাঁটাতার পেরিয়ে বাড়ি ফিরে আসা ফেলানীদের শুন্য বুকে গুলি করে রাইফেল হালকা করছে, বরং কখনোই কোনো মানুষকে নয়! তাই শিল্পী কবীর সুমনের ধাঁর গলা ছিড়ে বের হয় জন্মের আত্মগ্লানি।
‘ওপার বাংলা এপার বাংলা মাঝখানে কাঁটাতার,
গুলি খেয়ে ঝুলে থাকলে ফেলানী বলত দোষটা কার!’
কিন্তু দুই পারের শাসকগোষ্ঠী কি জানে না, চোরাকারবারিরও বেঁচে থাকার কথা ছিল, ওই গরু পাচারকারী মাছ-মাংস নয়, ভরপেট ভাত আর কাপড় পরবার ইচ্ছা রেখেছিল, আর ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানী! ইচ্ছে রেখেছিল শীতের দিনে লাল সোয়েটার পরে প্রজাপতির মতোন অনেক ছোটাছুটি আর দুরন্তপনার, জমিন থেকে সীমাহীন আসমানে পাখি হয়ে ওড়ার কিংবা হিম কুয়াশায় ভোরের শান্ত দোয়েল হয়ে শিস দেবার প্রবল সাধ। কিছুই যে হলো না! কেবল রক্ত-মাংসের পাথর ঝুলে থাকল পাহাড় সমান নীরবতা নিয়ে, দেশ আর মানুষ ভাগ করে নেওয়া ভয়ংকর দুনিয়ায়!
বিভিন্ন অজুহাতে সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যার মিছিল বন্ধ হোক।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন