স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর আমার একটা জিনিস প্রায়ই মনে হতো—আহারে এমিরেটাস তৈলমর্দনকারী থেকে প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর নাইমুল ইসলাম খান সম্ভবত সবচেয়ে কম সময় পেলেন সরকারি সুবিধা ভোগ করার। জুনের প্রথম সপ্তাহে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন প্রেস সচিব হিসেবে। জুলাই মাসের ৭৮ হাজার টাকা বেতনটা কি তিনি তুলতে পেরেছিলেন? এ নিয়ে আমি প্রায়ই ভাবতাম। আহারে কপাল কতটা খারাপ উনার। উনি যার চাকরি করেন তার প্রথম (নাকি দ্বিতীয়) প্রেস কনফারেন্সেই এমন ধরা খেলেন!
উনার সাথে আমার প্রথম লম্বা আলাপ হয়েছিলে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। প্রথম আলোতে কাজ করি তখন। টার্কিশ এয়ারে আমি যাচ্ছিলাম হামবুর্গ। আর উনি টরন্টো যাচ্ছিলেন সম্ভবত পরিবারের সাথে দেখা করতে। আমরা বসেছিলাম ইকোনমির পাশাপাশি সিটে। বিমান টেকঅফের সময় আমার প্রায়ই প্রচণ্ড ঘুম পায়। সেদিনও পেয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে আমার কী হলো জানি না, সম্ভবত অক্সিজেন স্বল্পতায় স্মৃতিশক্তি একটু কমে গিয়েছিলে। উনি আলাপ শুরু করলেন। অনেক কথা। উনার বাবা যে রাজাকার ছিলেন এই তথ্য দিয়ে শুরুতেই আমাকে চমকে দিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই আমি উনার নামটা মনে করতে পারছিলাম না।
তখন টকশোতে উনি এবং নুরুল কবির প্রায়ই উপস্থিত থাকতেন। আমার ব্রেন কেন জানি উনাকে নুরুল কবির হিসেবে আইডেন্টিফাই করা শুরু করলে। আমি উনাকে—হ্যাঁ কবির ভাই, জ্বি কবির ভাই, ঠিক বলেছেন কবির ভাই বলে সম্বোধন করা শুরু করলাম। খুবই আলাপী মানুষ উনি। ফলে প্রায় আট ঘণ্টার যাত্রায় ৫ ঘণ্টাই উনার সাথে গল্প করে কাটল। ইস্তান্বুলের ট্রানজিটে নামার সময় উনি শুধু মুচকি হেসে বললেন, শোনেন আমার নাম কবির না, নাইমুল ইসলাম খান। আমি লজ্জায় লাল হয়ে জানালাম আমি চিনি উনাকে খুব ভালো করেই, একটু নামে গণ্ডগোল হয়ে গেছে, স্যরি কিছু মনে করবেন না। উনি—না ঠিক আছে কিছু মনে করিনি—বলে উনার টরন্টোগামী ফ্লাইট ধরতে চলে গেলেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর নাইমুল ইসলাম খানের এই স্বল্প মেয়াদী ক্ষমতার দুর্ভাগ্য আর মাসের বেতন না পাওয়া নিয়ে এই যে প্রচণ্ড সংশয় আমার মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সেটা নিয়ে আমি অনেকের সাথেই কথা বলেছি। সবাই বলেছে, আপনি জানেন উনার কত টাকা? কিন্তু আমার মনের মধ্যে কাজ করেছে, ইকোনমিতে চলাচল করা একটা লোক আর কত টাকাই বা বেতন পান, উনি এক মাস বেতন তুলতে না পারলে কীভাবে চলবেন?
গতকাল খবরে দেখলাম উনার এবং উনার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৮৬ কোটি টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে ৩৭৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এটা দেখার পর থেকে উনার প্রতি দুঃখবোধটা আমার একটু কমেছে। যাক প্রথম মাসেই বেতন না পাওয়ায় উনাকে সম্ভবত তেমন কোনো অর্থকষ্টে কাটাতে হয়নি, চাপ পড়েনি সংসার খরচ চালাতেও। এটা যে আমার জন্য কী একটা রিলিফ তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন