লেখা: হৃদি কবির
১৯/২০ সালের দিকে আমাকে একটা জাপানিজ ছেলে রিকুয়েস্ট পাঠায়। র্যামন কস্তা। নরমাল হাই/হ্যালো হয় ইনবক্সে তখন। এটুকুই। ১৯ সালের শেষের দিকে আমার মাথায় জাপানিজ শেখার ভূত চাপে। পরে ক্যাম্পাসের ল্যাংগুয়েজ কোর্সে ভর্তি হই। কোভিডের জন্য অফ হয়ে যায় সেটার ক্লাস। লকডাউনে আমি বাসায় একা একা জাপানিজ শেখার ট্রাই করি। যদিও বেশিদিন আগাইতে পারিনি। অনেক কঠিন লাগে দেখে ইস্তফা দিয়ে দিছি। তো যেসময় প্র্যাকটিস করতেছিলাম একা একা, ঐ সময় আমি র্যামনকে মাঝে মাঝে নক দিতাম এটা সেটার কারেক্ট প্রোনানসিয়েশন জানার জন্য আর ‘কানজি’ রাইটিঙে আঁটকায় গেলে। কিছুদিন পরেই আমাদের মধ্যে একটা মোটামুটি ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।
আমাকে ও একদিন জানায় ও হাফ বাঙালি। আমি খুবই অবাক হই ইনফোটা জেনে। যদিও ওর ছবিতে ওর ফেসে প্রবল বাঙালি ছাপ দেখেছিলাম। তারপরও অবাক হই। ও আমাকে জানায় ওর মা বাঙালি আর বাবা জাপানিজ। আর বাবার বাসা নাগাসাকিতে। কিন্তু ও থাকে কিয়োটোতে। আমি তারপর জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওর মায়ের বাড়ি বাংলাদেশের কোথায়। ও উত্তর দিয়েছিল, বাংলাদেশে ওর মায়ের কোনো বাড়ি নেই। আমি আরও কিউরিয়াস হয়ে জানতে চাইলাম, কেন?
তারপর ও যে অ্যান্সার দিয়েছিল সেটা শুনে আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। র্যামন বলে, My mom spent her early childhood at Holy Cross Girls' High School. She was born in 1971 without having a father. My mom is a War Child.
কথাটা বলে ও কিছুক্ষণ পজ নেয়। তারপর ও জানায় ওর মা ওখানকার সিস্টারদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে তার যিনি আসল মা, সে ঢাকায় অ্যাবর্ট করতেই এসেছিলেন। কিন্তু অনেক লেট হয়ে যাওয়ায় আর সেটা একেবারেই পসিবল হয়নি। তাই পরে হলিক্রস মিশনারির সিস্টাররা ওনাকে তাদের কাছেই রাখেন। তিনি ৭ বছর পর্যন্ত ওখানে ছিলেন। তার সাথে আরও অনেক যুদ্ধশিশু বড় হয়েছে। তারা সবাই হলিক্রস স্কুলে ফ্রিতে পড়তেন। তিনি যখন ক্লাস টুতে, তখন এক জাপানিজ ফ্যামিলি ওনাকে অ্যাডপ্ট করে। পরে জাপানেই বড় হন, পড়াশোনা করেন, গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন এবং কিয়োটোতে অনেক ভালো পজিশনে জব করেন।
র্যামন আমাকে বলেছিল, ওর মা খুব চান বাংলাদেশে একবার আসতে। তিনি হলিক্রসের দিনগুলো মিস করেন। তার সাথের যুদ্ধশিশুদের সাথে কাটানো দিনগুলো মিস করেন। সিস্টারদের মিস করেন। হলিক্রসের ক্লাসরুম মিস করেন। আর সবচেয়ে বেশি যেটা মিস করেন, সেটা তার কোনোদিন চোখে না দেখা, নাম পরিচয় না জানা বাংলাদেশি মাকে। আমি র্যামনকে বলেছিলাম, You know what? We call these bravest mothers with a great name. He said, What's that? And I replied, Since we got Bangladesh, as our country because of their priceless sacrifice and undescribable undergoing tortures, so we treat them no less than our freedom fighters. We call them বীরাঙ্গনা।
র্যামন পরে বলেছিল, So my grandma is a Viranghana? I said, No! It's not Viranghana. It's বীরাঙ্গনা। ও পরে ৫/৬ বার রিপিট করে মোটামুটি রাইট প্রোনাউন্স করেছিল। আর বলেছিল, I promise someday I can pronounce it right. Cause I don't know my grandma's real name. I can call her that. My mom also can call her real mom with that name since she sacrificed herself and her only child for Bangladesh! Could you please say it again for me?
I again said, বীরাঙ্গনা!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন