পৃথিবীর কোন উন্নত কল্যাণরাষ্ট্রে এমন অসংখ্য দিবস পালন আছে?

৯৫৮ পঠিত ... ১৭:২৮, অক্টোবর ১৭, ২০২৪

22 (18)

বাংলাদেশের ধর্মপ্রেম ও দেশপ্রেমের চাপাচাপির সমাজে বড় হয়েছি। এইখানে সমাজজীবনে সততা ও নৈতিকতার দেখা নেই; আছে শুধু মাথায় টুপি দিয়ে বড় দাড়ি রেখে ধর্মপ্রেম প্রদর্শনী ও ধর্ম ব্যবসা। রাষ্ট্রীয় জীবনে কল্যাণের দেখা নেই; আছে শুধু বড় বড় বুলি কপচে দেশপ্রেম প্রদর্শনী ও রাজনীতি ব্যবসা। গরীব মানুষের বড় লোক হবার দুটোই ব্যবসা এখানে। সতভাবে পরিশ্রম করে ধনী হবার সব পথ রুদ্ধ।

বেশ অল্প বয়সে ইউরোপে বসবাস করতে গিয়ে বিস্মিত হলাম। কে কোথায় কখন চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করছে; তা চোখে পড়ার উপায় নেই। কিন্তু সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ সৎ ও নৈতিক জীবন যাপন করছে। দেশপ্রেম চেতনা নিয়ে লম্বা লম্বা লেকচার নেই; বারো মাসে তেরো দিবস পালন করে থর থর করে কাঁপা নেই; অথচ কল্যাণরাষ্ট্রের মধ্যে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, চিকিতসা, শিক্ষার মৌলিক অধিকার পূর্ণ হয়েছে। টেলিভিশনে দেশপ্রেমিক পালোয়ানদের কুস্তি নেই; জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে কথায় কথায় দেশের জন্য কেঁদে ফেলা নেই; অথচ সুশাসন, সামাজিক সাম্য, সুবিচার আছে। দেশপ্রেমের পীর হিসেবে ভি আই পি রাজনীতিক নেই; আছে প্রতিটি নাগরিকের সমান মর্যাদা।

ইউরোপের কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোর কোন সচেতন নাগরিককে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশপ্রেম শিক্ষা দিতে দেখি না। নিজ নিজ দেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখিনি। কোন রাজনীতিকের ফেসবুক পোস্টে গিয়ে সহমত ভাই বলে গলে পড়তে দেখিনি। সে কারণেই হয়তো দেশগুলো থেকে সম্পদ ডাকাতি করে রাজনীতিকগুলোকে ভাতারের দেশে পালিয়ে যেতে দেখিনা। কারো সামান্য দুর্নীতি ধরা পড়লে সে জেলে যাবেই সেখানে। এংলো স্যাক্সন কালচারের অতীত কার্যকলাপের হাজারটা সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিয়ে তারা যে সমাজ উত্তরণ ঘটিয়েছে; তা প্রশংসার যোগ্য।

পৃথিবীর প্রতিটি দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির পথটি কঠিন ছিলো। অনেক রক্ত-ত্যাগ-ঘাম প্রতিটি দেশের ইতিহাসে মিশে রয়েছে। সেই রক্ত ত্যাগের মূল্য চুকাতে দ্রুততার সঙ্গে দেশগুলো কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যাতে স্বাধীনতার অর্থ প্রতিটি নাগরিকের জীবনে  অনূদিত হতে পারে।

আর আমাদের বাংলাদেশে ৫৩ বছর ধরে জাতীয় দিবসগুলোতে একদল ফ্রড এক জায়গায় হয়ে শহীদের জন্য কাঁদে; তাদের স্বপ্ন পূরণ এইবার এইবারই হবে এরকম লিপসার্ভিস দিয়ে লেগে পড়ে দেশডাকাতিতে।

গত সাড়ে পনেরো বছর ধরে যারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লিপসার্ভিস দিয়েছে; বঙ্গবন্ধুর জন্য হাপুস নয়নে কেঁদেছে; তারাই এর পরিবর্তে কমপক্ষে একহাজার কোটি টাকা লুন্ঠনের সুযোগ নিয়েছে। মনে করে দেখুন পুলিশ বেনজিরের দেশপ্রেমের হুংকারের কথা। এখন হিসাব করে দেখুন কত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সে। আওয়ামী বৃক্ষের শাখা প্রশাখায় অসংখ্য দুর্নীতির ফুল ফুটেছে; দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়ে তবে ভেগেছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি পৃথিবীর সেরা রাজনৈতিক ভাষণগুলোর একটি। এই ভাষণটি ইউটিউবে রয়েছে; গুগল করলে লেখ্য রুপ পাওয়া যায়। এই ভাষণ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক মুক্তির লড়াইয়ের প্রতীক। গত পনেরো বছর ধরে গণতন্ত্রকে কবরে শুইয়ে আওয়ামী লীগ ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলো। এরা ভারতের ক্ষমতা-কাঠামোর সহযোগিতায় ভোট হীন অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন বাকশাল টু পয়েন্ট ও'র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীর প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর আইকনটি বহু ব্যবহারে জীর্ণ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাকাত দলটির প্রতিটি সদস্য পকেটের ওপরে বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত পিন লাগিয়ে পকেটে পুরেছে জনগণের সম্পদ। কোথাও সামান্য ভিন্নমত দেখলে মাথায় হেলমেট পরে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কিশোর-তরুণ হত্যায়। আল্লাহু আকবর বা জয় শ্রী রামের মতো ধর্মীয় শ্লোগান কট্টর ইসলামপন্থী ও হিন্দুত্ববাদীদের মুখে যেমন ভীতিপ্রদ শ্লোগান হয়ে উঠেছে; আওয়ামী খুনেদের মুখে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান তেমনি এক ভয়ের সঞ্চার করে মানুষের মনে। মানবতাবিরোধী গুম খুন ক্রসফায়ার আয়নাঘরের প্রতীক হয়েছে আওয়ামী লীগ এর দোসরেরা।

সর্বশেষ ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট; নাতসিরা যেমন হেইল হি-ট-লা-র শ্লোগান দিয়ে মানুষ খুন করতো; ঠিক সেইভাবে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে হাজারের ওপর ছাত্রজনতাকে হত্যা করেছে; হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে গুরুতর আহত করেছে; প্রতিদিনই যাদের মৃত্যু সংবাদ আসে।  এই হামলায় অন্ধ হয়ে গেছে হাজারের বেশি তরুণ।

অথচ অনুতাপহীন এই মানবতাবিরোধী অপরাধীরা একই সুরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধু নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছে। দেশের ভবিষ্যত সহস্র সন্তানের জীবন কেড়ে নিয়েও তারা আশা করছে; তাদের ফ্যাসিজমের আইকনগুলো একই ভাবে গৃহীত হবে গণমানুষের মনোজগতে।

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষের স্বজন হারানোর স্মৃতি মিশে আছে। এরা কেউ কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পার্থিব কোন প্রাপ্তির সঙ্গে মেলাতে যায়নি। নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে পালনকেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো বলে মনে করে তারা। বঙ্গবন্ধুকে যারা ভালোবাসেন ; তারা কক্ষণো তাঁর আইকন ব্যবহার করে ব্যবসা করেনি। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু ঠিক ততদিন প্রাসঙ্গিক থাকবে।

২০০৪ সালে বাংলাদেশের টিভিগুলোতে যখন ব্যবসায়িক স্বার্থে বঙ্গবন্ধু বন্দনা ছিলো না; তখন বিবিসি শ্রোতা জরীপে জনপ্রিয় ভোটে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। তার ক্রেডিবিলিটি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরদিন থেকেই তারা বারো মাসে তের পার্বণ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি অংকিত প্যাকেটে বিরিয়ানি পরিবেশন করে চোরের খনির চাটার দলের চর্বি বাড়াতে শুরু করে। এই চর্বিওয়ালারা বাংলাদেশকে দোজখে পরিণত করে। সেই ওয়েস্ট ল্যান্ডে স্বৈরাচারী হাসিনা জনবিক্ষোভের মুখে; তার ক্ষমতার সহযোগী ভারতে পালিয়ে গেলে; হাসিনার ছাত্রগণহত্যার বিরুদ্ধে আক্রোশে সাধারণ মানুষ; হাসিনার আইকন হিসেবে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে। পুড়িয়ে দেয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম। এই ছাইগাদার মধ্যে থেকে বঙ্গবন্ধু ঠিকই ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে আসবেন। ছাইগাদাতে পড়ে থাকবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতার পরচুলা, আওয়ামী লীগের লিলিপুটগুলোর মিনি মুজিব কোটগুলো; বাকশাল টু পয়েন্ট ও'র মারণঘাতী অস্ত্রগুলো।

হাসিনার স্বৈরাচারের যে দোসরেরা জিভে চর্বি জমে যাওয়ায়; আজো ফেসবুকে ৫ অগাস্ট-এর আগের ফ্যাসিস্ট আমলের মতোই তর্জন গর্জন করে; এরা তো নরভোজি; ছাত্রগণহত্যাকে সমর্থন করে তারা মনুষ্যত্ব হারিয়েছে। তাদের মুখে স্বদেশ চেতনার কথা একেবারেই মানায় না। খুনীর আবার চেতনা কীসের!

৯৫৮ পঠিত ... ১৭:২৮, অক্টোবর ১৭, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top