দাতা খালিদ ভাই: দেশপ্রেমের ওয়ানস্টপ সলিউশান

১৫৯ পঠিত ... ১৭:২০, জানুয়ারি ০২, ২০২৫

40

আবহমান বাংলার খালিদ ভাই দাতা হাতেম তাই গোত্রের লোক। তিনি ভাসানীর জন্য ট্রেনের ফার্স্টক্লাসের টিকেট কেটে আনতেন, প্লেনের টিকেট কেটে দিতেন। আর বলতেন, দেশের ভালোর জন্য এটুকু করতে চাই। পরে ভাসানীর প্রভাব কমে এলে বঙ্গবন্ধুর জন্য নানান ব্র্যান্ডের পাইপ ও বেগম মুজিবের জন্য শাড়ি উপহার আনতেন। গাড়ি পাঠাতেন হাসিনা, রেহানা, জামাল-কামালকে একটু ঘুরিয়ে আনার জন্য। শেখ কামালের জীপটি খালিদ ভাই উপহার দিয়েছিলেন।

জিয়া অনেক কড়াকড়ি করার পরেও নাছোড়বান্দা খালিদ ভাই তারেক-কোকোর খেলার জন্য কেরামবোর্ড উপহার দিয়েছেন। পরে গুলশানে ক্রিকেট ম্যাচ তিনিই স্পন্সর করেছিলেন। হাওয়াভবনে কম্পিউটার উপহার পাঠিয়ে ভোটের অংক কাগজে না কষে পিসিতে কষার অনুরোধ করেছিলেন। আর ঢাকার বাইরে যেতে গাড়ি লাগলে বইলেন, এটা ছিলো খালিদ ভাইয়ের শাশ্বত সংলাপ।

এরশাদকে খালিদ ভাই উপহার দিতেন চশমার ফ্রেম ও ঘড়ি; আর মিসেস এরশাদকে শাড়ি। জিএম কাদেরকে বলতেন, গাড়ি লাগলে বলবেন জিএম ভাই।

এরপর খালিদ ভাই নব্বুই-এর গণ অভ্যুত্থানের নায়কদের চাইনিজ খেতে দাওয়াত দিতেন। তার সেট ডায়ালগ ছিলো, গাড়ি লাগলে কইয়েন অমুক ভাই।

রাজা যায় রাজা আসে; কিন্তু খালিদ ভাইয়ের গাড়ির শো রুম টিকে থাকে।

শাহবাগ মুভমেন্ট শুরু হতেই খালিদ ভাই বিরিয়ানির হাড়ি নিয়ে আসেন। রঙ বেরঙ্গের পাঞ্জাবি উপহার দেন আন্দোলনের তরুণ মুখদের। গাড়ি লাগলে বলবেন ভাই এই কথাটা তো খালিদ ভাইয়ের পাঞ্চলাইন।

বাঙ্গালির হৃদয়ে চারচাকার প্রতি যে দুর্বলতা বৃটিশ লাটের চার চাকার গাড়ি দেখে সৃষ্টি হয়েছিলো; খালিদ ভাই ঐ দুর্বলতার শল্য চিকিৎসক।

খালিদ ভাইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কেবল জীবিত বা জয়ী নেতাকে সাহায্য করা নয়; মৃত নেতার লাশ কবরস্থানে পৌঁছে দিতে; অথবা পতিত নেতাকে সীমান্তে পৌঁছে দিতেও গাড়ি পাঠান তিনি।

খালিদ ভাইয়ের মুখে কখনো বিরক্তির চিহ্ন নেই; সদাহাস্য তিনি। নেতার সঙ্গে সেলফি তোলার বদ অভ্যাস নেই তার। তিনি জায়গা করে নেন নেতার মন যেখানে হৃদয় সেখানেতে। সে কারণে কোন সরকার পতন কিংবা উত্থানে খালিদ ভাইয়ের কিছু এসে যায় না। তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। খাঁটি বাংলাদেশপন্থী খালিদ ভাই বাংলাদেশের গাড়ি যখন যখন চলে না চলে না রে; ঠিক তখন গাড়ি নিয়ে আসেন।

খালিদ ভাই টয়োটা, ফলক্সভাগেন, মের্সেডেস-বেঞ্জ, প্রাডো, আওডি, বিএমভি, লাশ টানা মাইক্রোবাস, সীমান্ত পার করে দিতে ভাঙ্গা গাড়ি; সবই রাখেন তার শো রুমে।

শেখ হাসিনার উন্নয়নকালে তার পিয়নের হেলিকপ্টার চড়ার শখ হলে; উন্নয়নের চাকর-বাকরদের রাজকীয় জীবনের স্বাদ দিতে হেলিকপ্টার আমদানি করেন খালিদ ভাই। এইসময় তাদের চুলের জেল, রোলেক্স ঘড়ি থেকে জন্মদিনের পেস্ট্রি এসব নানান উপহার পাঠাতে হয় খালিদ ভাইকে। এমনকি সুন্দরবন থেকে বাঘের বাচ্চা ধরে এনে জয় ও পুতুলকে সারপ্রাইজ উপহার দেন।

খালিদ ভাই জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবী তরুণদের জন্য নতুন আনা গাড়িগুলো দ্রুত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া কিংবা বিদেশের নির্বাসন থেকে ফেরা বিএনপির নেতাদের জন্য মোটর শোভাযাত্রার ব্যবস্থা করেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া কিংবা বিদেশ থেকে আসা শিবির নেতাদের জন্য গাড়ি ও মোটর সাইকেলের ব্যবস্থা করেন।

খালিদ ভাই শুধুই দেশের অভ্যন্তরে এই গাড়িদাতা হাতেম তাই হিসেবে কাজ করেন না। মন্ত্রী ও আমলার ছেলেদের বিদেশে স্পোর্টস কার উপহার দেন তিনি।

গাড়ি সরবরাহের ফরোয়ার্ড লিংকেজের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে বিরিয়ানি ও ফুলের ব্যবসা রয়েছে তার। আছে চিংড়ির ঘের, বাগানবাড়ি, শোবিজের মুরগীর খামার। কারণ খালিদ ভাই জানেন, বাঙ্গালির আবার জীবনে একটু সুখ এলে মৌরালা মাছের ঝোল আর যুবতী নারীর কোল ছাড়া চলে না। খালিদ ভাই নিজে অবশ্য সাধু পুরুষ। তিনি প্রতিটি তরুণীকে মা অথবা বোন বলে ডাকেন। বিভিন্ন মসজিদে জুম্মা নামাজ পড়েন। তার বসার ঘরে সাদাবসন পরে বসে থাকে বাউল ও ফকির। তিনি তাদের সঙ্গে আহার করেন। রাত জেগে গান করেন। এক আধটু খুশিজল পান করেন। পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা সিনিয়র সাংবাদিক এলে মৌরালা মাছের ঝোল খাইয়ে তাকে পাশের রুমে যুবতী নারীর কোলে পাঠান। খালিদ ভাই আসলে এ শহরের ওয়ান স্টপ সলিউশান। গাড়ি পাঠান পুলিশ কিংবা সাংবাদিকের গৃহে যাতে তার স্ত্রী শপিং-এর আনন্দে ব্যস্ত থাকেন। আর শপিং করার জন্য রয়েছে খালিদ ভাইয়ের শপিং মল।

অনেকেই প্রশ্ন করে, খালিদ ভাই, আপনি তো শুধু দিয়েই গেলেন, নিলেন না তো কিছুই!

খালিদ ভাই মিষ্টি হেসে উত্তর দেন, এদেশের কাছে সাড়ে তিনহাত মাটি ছাড়া আর কিছুই চাই না আমি।

১৫৯ পঠিত ... ১৭:২০, জানুয়ারি ০২, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top