রাজনীতিকের মেয়ে হিসেবে শেখ হাসিনা বৃটিশ কোলাবরেটর কলকাতার হিন্দু জমিদার ও পাকিস্তানি কোলাবরেটর লাহোরের মুসলিম জমিদারদের জীবন দেখেছেন। এই কোলাবরেটরদের জীবন তাকে আকৃষ্ট করেছিল। তাই তো আওয়ামী লীগের কোলাবরেটর তৈরির জন্য তিনি একটি নতুন জমিদার শ্রেণি সৃজনের চেষ্টা করেছেন।
কোলাবরেটর হতে গেলে একজন মানুষকে ভ্যাগাবন্ড হতে হয়, তেলাঞ্জলি দিতে পারঙ্গম হতে হয়; আর মানবতা বিরোধী অপরাধের অন্ধ সমর্থক হতে হয়। তাই তো হাসিনা গোপালগঞ্জের আমব্রেলা ইঞ্জিনিয়ার ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের টোকাই টুকিয়ে এনে এমপি বানিয়েছেন; পুলিশ-সেনাবাহিনী-প্রশাসনে প্রমোশন দিয়ে নতুন কোলাবরেটর জমিদার শ্রেণী তৈরির চেষ্টা করেছেন। বস্তিতে দুটো সেলাই মেশিন নিয়ে দর্জিগিরি করতে করতে শ্রম শোষণ করে যারা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক রাজদর্জি হয়েছেন; তাদের দলে নিয়ে এসে রাজদণ্ড তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে।
শেখ হাসিনা ছাত্রী হিসেবে দুর্বল ছিলেন। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের অপছন্দ করতে শুরু করেছেন। কেউ ইংরেজিতে ভালো হলে; তাকে তিনি অপছন্দ করতেন সবচেয়ে বেশি। এই জন্য বেছে বেছে ইংরেজি না জানা সাংবাদিকদের নিয়ে, প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছির আসর বসিয়েছেন।
বাংলাদেশের শীর্ষ মেধাবী পরমাণু বিজ্ঞানীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ায়; যাপিত জীবনে প্রতিদিন মেধার প্রতি প্রতিহিংসা তৈরি হয়েছে উনার মাঝে।
১৯৮১ সালে দিল্লির নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে তিনি একে একে মেধাবী মানুষদের আওয়ামী লীগ থেকে সরিয়েছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ও জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার দাবি করে চলা নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে বরেণ্য মেধাবীদের সঙ্গে মিশে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, মেধাবী মানুষেরা প্রশ্ন করে বেশি। প্রশংসা করতে জানে না।
এই কারণে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি, প্রশ্ন নয় প্রশংসা করার মতো বুদ্ধিজীবী তৈরি করতে শুরু করেন। শেখ হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরের শাসনকাল ছিল মূলত মেধাগণহত্যা প্রকল্প। এইসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে তিনি বেছে নেন, যুবলীগের প্রেসিডেন্ট হতে ইচ্ছুক কাতলা মাছের মতো আকর্ণ হাসিতে তেলাঞ্জলি দেওয়া লোকজন। ভুল বানানে বিবৃতি লিখতে সক্ষম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তিনি ক্ষমতার আলোতে নিয়ে আসতে শুরু করেন।
ভারতের প্রণব মুখার্জির সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসায় ও পরে নরেন্দ্র মোদির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তী পাওয়ার পর; তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে অমেধাবী হিন্দুদের নিয়োগ দিতে শুরু করেন। বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মাঝে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতো সেরা মেধাবী মানুষদের তিনি কখনোই পছন্দ করতে পারেননি।
শেখ হাসিনা তার আওয়ামী লীগের আদর্শটিকে ধর্মের আদলে সাজিয়েছিলেন। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিটি হাসিনার রাজনীতি-ধর্ম ব্যবসার লালসালুর মাজার হয়ে উঠেছিল। সেখানে বসে তিনি কোরআন পাঠ করে সে ছবি ভাইরাল করতেন প্রেস উইঙের খোকন সোনাদের দিয়ে। আবার সে পুন্যভূমি দর্শন শেষে নৌবাহিনীর জাহাজে, স্কুল খুইলাছে মওলা মাইজ ভাণ্ডারি গান গেয়ে ফিরত হাসিনার নবরত্ন সভার লোকেরা।
হাসিনা কট্টর হিন্দুত্ববাদ ও কট্টর ইসলামপন্থা; এ দুটোর চাষবাস করেছেন সমাজের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামি চেতনার ভয় দেখিয়ে শাসন করতে। কট্টর হিন্দুত্ববাদিদের দেবী ও কট্টর ইসলামপন্থীদের কওমি জননী হয়ে; একইসঙ্গে ভারত ও সৌদি আরব তোষণ করেছেন।
শেখ হাসিনার থিংক ট্যাংক হিসেবে জেনারেল তারেক সিদ্দিকের মতো যে সমরবিদ কাজ করেছেন, তার পড়াশোনা সানজুর যুদ্ধবিদ্যায় থেমে গেছে। এইচটি ইমাম, মশিউর রহমান, তৌফিক এলাহীদের পড়াশোনা ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স আর নিটশের আর্যরক্ত থিওরিতে আটকে গেছে। বস্তাপচা সব রাষ্ট্রশাসন পদ্ধতি ব্যবহার করে; আওয়ামী লীগকে সমূলে উতপাটিত করার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
হাসিনার ক্যানিবাল ডকট্রিন তার, স্বজন হারানোর কষ্ট চর্চাকারী প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার নীতি। ভারতে রাজিব গান্ধীর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে তার সন্তান রাহুল ও প্রিয়াংকা গান্ধী কংগ্রেসের নবজন্ম দিয়েছেন। আর হাসিনা একই প্রতিশোধ স্পৃহা লালন করতে করতে পিটিএসডি ও বাইপোলার ডিজ অর্ডারের রোগী হয়ে গেছেন। ফলে গুম, ক্রসফায়ার, কারাগারে নির্যাতন, আয়নাঘরে কসাইগিরি, অবশেষে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-গণহত্যার মাঝ দিয়ে বাংলাদেশকে ট্রমাটাইজড করেছেন।
হাসিনার এইসব অপরাধ সংঘটনের সময় ফেসবুকে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও বিজেপি সমর্থক সংস্কৃতি মামা ও খালারা যেভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সমর্থন করেছেন; স্বজন পালিয়ে যাবার বেদনা বা কষ্টে তারা যেভাবে ডিনাইয়াল ও রিভেঞ্জের আলাপ নির্লজ্জভাবে জারি রেখেছেন; এটা ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ।
সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক গতিশীলতাকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বের কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোতে সাম্যচিন্তার সমাজে মানুষ ধীরে ধীরে আর্থিক উন্নতি করে ও শিক্ষিত হয়ে ওঠে। কিন্তু হাসিনা দুর্নীতি বসন্তে এক পুরুষে উচ্চ বিত্ত হবার সুযোগ করে দিয়ে সামাজিক বিশৃখলা তৈরি করেছেন।
লক্ষ্য করুন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যতটুকু শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ অবশিষ্ট ছিল; তার বিনাশ সাধিত হয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন কালে।
এখান থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের শিক্ষা নেবার রয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার সমর্থকরা এমন একটি ইভিল হ্যান্ডবুক যে তারা ঠিক যে যে কাজ করেছেন; যেরকম আচার আচরণ তাদের; দেশ ডাকাতি ও বিদেশে টাকাপাচারের যে কালচার তাদের, কোনো পরিশ্রম না করে এক পুরুষে, কুঁড়ে ঘর থেকে পাঁচ তলা দালান, মহিষের পিঠ থেকে প্রাডো পাজেরো, পান্তা থেকে পাস্তা অর্জনের যে নির্লজ্জ সংস্কৃতি; ঠিক সেসব বর্জন করলেই কেবল একটি সুষম সমাজ গড়ে উঠতে পারে। হাসিনা ডকট্রিনের টেকাটুকা নির্ভর সমাজ থেকে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজে ফিরে আসাই মুক্তির একমাত্র পথ।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন