পৃথিবীটা কীভাবে একদিনে বেলুনের হয়ে গেল

৯৯ পঠিত ... ১৬:৫৯, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

Trendy-Column

ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়েছি, টিএসসির উদ্দেশ্যে। ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় মানুষ রাস্তার পাশে ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠা খাওয়ার বিরতি নেয় কিংবা জাগতিক সব চিন্তা ভুলে কপোত/কপোতির হাতে হাত রেখে রোজকার জীবনে একটা বিরতি টানে। এমন নিয়মমাফিক এক ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় আমি বরাবর অনিয়ম করে টিএসসিতে যাচ্ছি হাঁটার উদ্দেশ্যে। ঢাকা গেট থেকে সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত একটা লম্বা হাঁটা দেওয়াই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। এই লম্বা সময়ে দুই একবার বিরতিও নেওয়া যাবে, তবে সেটা পিঠা কিংবা কপোতের উষ্ণ হাতের বিরতি না, একটা চুরুট আর চিনি ছাড়া দুধ চায়ের কাপের বিরতি।

ঢাকা গেটে পৌঁছাতেই রিকশামামা জানালো আর যাওয়া যাবে না, সামনে রাস্তা বন্ধ। সামনে যে রাস্তা বন্ধ, এটা আমারও জানা কথা। তবে, জিগাতলা থেকে রিকশা ঠিক করার আগে মামা বলেছিল, একদম টিএসসির মোড়ে নামায় দেবে, সেই হিসাবে তার ভাড়া আসে ৮০ টাকা। এমন একটা প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে আমি জানতাম, মামা আমাকে ঢাকা গেটে নামিয়ে দেবে। ঢাকা গেটে নেমে মামাকে ১০০ টাকার একটা নোট দিলাম, ২০ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে মামা শান্তিই পেল। মামার শান্তির উপর এই শীতের সন্ধ্যায় আর পানি ঢালতে মন চাইলো না, ভাব করলাম একদম টিএসসির মোড়ে নামতে পেরে আমি খুবই খুশি।

ঢাকা গেট থেকে এবার আমার উদ্দেশ্যহীন হাঁটার যাত্রা শুরু। কপোত-কপোতিরা হাতে হাত রেখে হাঁটছে, বন্ধুরা ৪-৫ জন পাশাপাশি হাসাহাসি করতে করতে একজন আরেকজনের গায়ের ওপর পড়ে যাচ্ছে, সারাদিনের ক্লাসের পর কেউ কেউ মেসে ফিরছে কেউবা আমার মতোই, উদ্দেশ্যহীন, নিরাশ, রিকশামামাকে ২০ টাকা বেশি দিয়ে এসেছে। এইসব ছবিগুলো রোজকার, পরিচিত। কয়েক কদম আগানোর পর দেখলাম একটা অপরিচিত ছবি, কালারফুল অনেকগুলো বেলুন নিয়ে এক মামা দাঁড়িয়ে আছে, তার আশেপাশে জনসমুদ্র তৈরি হয়েছে। ঢাকা গেট থেকে সোহরাওয়ার্দী যাওয়ার পথে এমন ৭-৮টা জনসমুদ্রে চোখে পড়লো। নির্মলেন্দু গুণ হয়ে জন্মালে, বাড়ি ফিরে ‘কালারিং এই বেলুনটি কীভাবে আমাদের হলো’ একটা কবিতা লিখে ফেলতে পারতাম। কিন্তু, না আমি নির্মলেন্দু গুণ আর নাইবা মামা স্বাধীনতার ডাক দিচ্ছিলেন। অতঃপর বাসায় এসে, রোজকার নিয়মমাফিক মোবাইল স্ক্রল করতেই শুয়ে পড়লাম।

ওমা! এখানে আরেক দৃশ্য। ফ্রেন্ডলিস্টে মানুষের সংখ্যা ৪১৩, প্রতি স্ক্রলে ৫ জনের প্রোফাইল পিকচার বদলেছে। প্রোফাইলে দেখা যাচ্ছে, কালারিং বেলুন; হ্যাশট্যাগ ‘ঝিলিমিলি বেলুন’। ফেসবুক ছেড়ে ইনস্টাগ্রামে আসলাম, ঝিলিমিলি বেলুন থেকে একটা ছোট্টো বিরতি লাগবে। কিন্তু, এমন একটা দিনে, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের সবাই যেন ভাই-ভাই। ঝিলিমিলি বেলুনের সাথে প্রোফাইল পিকচার আপলোড করায় কেউই পিছিয়ে নাই। পরেরদিন সকাল হতে হতে আমার ফ্রেন্ডলিস্টের ৩০০+ মানুষের প্রোফাইলেই, ঝিলিমিলি বেলুন। বাকি গুটিকয়েক যে কয়জন আছেন, তাদের প্রোফাইলজুড়ে ঝিলিমিলি বেলুন কিনে দেওয়ার মানুষ না থাকার আর্তনাদ। ফোন দেখছি, নাকি একই ডিজাইনে হাজারটা ঝিলিমিলি বেলুন দেখছি বুঝে উঠতে পারছি না। এমন ডিলিউশন নিয়েই অফিসে এসে পৌঁছালাম। আগেরদিনের একটা ছোট্টো কাজ জমা দেওয়া বাকি, বসের ইমেইলে বসে আছে।

Subject: Sending a Jhilimili Balloon for your approval

চোখে শুধু ঝিলিমিলি বেলুন দেখছি, কেউ কথা বললে মনে হচ্ছে ৫ বার ঝিলিমিলি বেলুন বলেছে, শীতের সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে কড়াইতে ধোঁয়া ওঠা ঝিলিমিলি বেলুন বিক্রি হচ্ছে, কপোতের হাত ছেড়ে কপোতি ঝিলিমিলি বেলুনের সুতা ধরে হাঁটছে। পৃথিবীটা একদিনে ঝিলিমিলি বেলুনের হয়ে গেল।

৯৯ পঠিত ... ১৬:৫৯, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top