যেভাবে খরগোশ শেয়াল এবং নেকড়ের ওপর খরগোশের শ্রেষ্ঠত্ব সংক্রান্ত থিসিস সম্পন্ন করলো

২৩৯২ পঠিত ... ১৮:৪৩, জুন ২২, ২০১৭

কোন এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে একটি খরগোশ তার গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে পৃথিবীর সুন্দর আবহাওয়া উপভোগ করছিল।

দিনটি এতই উপভোগ্য ছিল যে, তা উপভোগ করতে করতে খরগোশ সব কিছু ভুলে গিয়েছিল। একদম বেহুশ অবস্থা যাকে বলে! তার এই বেখেয়ালিপনার সুযোগ নিয়ে পেছন থেকে একটি শিয়াল তাকে ধরে ফেলল।
শিয়াল খরগোশকে ধরেই বলতে লাগল, 'আহ! আজ দুপুরের খাবারটা বেশ ভালোই হবে মনে হচ্ছে...'
‘থামো’, বলে উঠল খরগোশটি। ‘তোমার আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা উচিৎ আমাকে খাওয়ার জন্যে।’
‘তাই বুঝি? তো আমাকে কেন অপেক্ষা করতে হবে শুনি।’
‘আসলে আমার শিয়াল এবং নেকড়ের উপরে খরগোশের শ্রেষ্ঠত্ব নামক গবেষণাপত্রটি শেষের পথে।’
‘তুমি কি পাগল? তোমাকে আমার এই মূহুর্তে খেয়ে ফেলা উচিৎ! সবাই জানে শিয়াল সব সময় খরগোশের সাথে জয়ী হয়।’
‘আমার গবেষণা অনুযায়ী তোমার কথা সত্য নয়। তুমি যদি চাও তাহলে আমার গর্তে এসে আমার গবেষণাপত্র গুলো পড়ে দেখতে পারো। আমার গবেষণা তোমার মন মতো না হলে, তুমি আমাকে তোমার দুপুরের খাবার হিসাবে গ্রহণ করতে পারো।’

‘তুমি সত্যি পাগল।’ শিয়াল চিৎকার করে এ কথা বললেও সে আসলে মনে মনে খরগোশের গবেষণা নিয়ে আগ্রহী ছিল। যেহেতু তার কিছুই হারানোর নেই, তাই সে খরগোশের প্রস্তাব গ্রহণ করে খরগোশের গর্তে ঢুকে পড়ল। এরপর সেই শিয়াল আর কখনো গর্ত থেকে বের হয়ে আসে নি। 
এর কিছুদিন পর খরগোশ আবার তার গবেষণা থেকে বিরতি নিল। গর্ত থেকে বেরিয়ে আবার সে প্রকৃতি দেখতে দেখতে বেখেয়ালি হয়ে পড়লো। এবার সে পরিণত হলো একটি নেকড়ের শিকারে।
‘থামো! তোমার আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা উচিৎ আমাকে খাওয়ার জন্যে।’ এবারো খরগোশটি চিৎকার করে উঠল।
‘কেন?’ তাচ্ছিল্যের স্বরে প্রশ্ন করল নেকড়ে।
‘কারণ, আমার শিয়াল এবং নেকড়ের উপরে খরগোশের শ্রেষ্ঠত্ব নামক গবেষণাপত্র শেষের পথে।’
নেকড়ে খরগোশের কথা শুনে এত জোরে হাসা শুরু করল যে, সে প্রায় তার থাবা থেকে খরগোশ কে ছেড়েই দিয়েছিল।
‘হয়তো আমার তোমাকে খাওয়াই উচিৎ না। তোমার মাথায় মনে হচ্ছে বিশাল সমস্যা আছে, কিংবা তুমি কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত।’
‘তুমি যদি চাও তাহলে আমার গর্তে এসে আমার গবেষণার পেপারগুলো পড়ে দেখতে পারো। আমার গবেষণা তোমার মন মতো না হলে, তুমি আমাকে তোমার দুপুরের খাবার হিসাবে গ্রহণ করলে আমার কোনো আপত্তি নেই!’

শিয়ালের মত নেকড়েকেও খরগোশ একই আহ্ববান জানালো। নেকড়েও শিয়ালের মত কৌতুহলী হয়ে সেই যে গর্তে ঢুকলো, এরপর আর কোনোদিন ফিরে এলো না।

এর কিছুদিন পর খরগোশ তার গবেষণাপত্র শেষ করল এবং এক স্হানীয় বারে গিয়ে  সে তার এই সাফল্য উদযাপন করতে লাগল। তাকে দেখে আর একটি খরগোশ এগিয়ে এসে বলল, ‘হে, কী খবর তোমার? বেশ আনন্দিত মনে হচ্ছে।’
‘হ্যাঁ, আমি আমার গবেষণা আজই শেষ করলাম।’
‘অভিনন্দন! তো কিসের উপর গবেষণা করলে?’
‘শিয়াল এবং নেকড়ের উপরে খরগোশের শ্রেষ্ঠত্ব।’
‘তুমি শিওর? আমার কাছে ঠিকঠাক লাগছে না।’
‘হ্যাঁ! আমার সাথে চল। নিজেই গিয়ে না হয় পড়বে আমার গবেষণাপত্রটি।’
এরপর দু’জন একসাথে খরগোশের গর্তে গেল। খরগোশের বন্ধুটি প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল করল, তার দশটি গবেষকের মত খরগোশের ঘরটিতে গবেষণা পত্রগুলো এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘরের এক কোণে একটি কম্পিউটার রাখা। সে আরো দেখতে পেল মাঝখানে একটি সিংহ এবং তার দুই পাশে শিয়াল এবং নেকড়ের হাড়গুলো জমিয়ে রাখা।

আঁকা: সালমান সাকিব

মোরাল অফ দ্যা স্টোরি:

আপনার গবেষণাপত্রের শিরোনাম কোনো ব্যাপার না।
আপনার বিষয় কোনো ব্যাপার না। 
আপনার গবেষণা কোনো ব্যাপার না।
আসল ব্যাপার হচ্ছে, আপনার গবেষণার উপদেষ্টা কে!

২৩৯২ পঠিত ... ১৮:৪৩, জুন ২২, ২০১৭

আরও

 

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top