[সৈয়দ আলী আহসান তাঁর 'জীবনের শিলান্যাস' গ্রন্থে লিখেছেন মুজতবা আলীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা। লেখক তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকেই কিছু অংশ তুলে দেয়া হলো।]
সেদিন রোববার একটি জীপগাড়ি আমার বাসায় এল। এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে বললেন, মুজতবা সাহেব চট্টগ্রামে এসেছেন। তিনি আপনাকে ধরে নিয়ে যেতে বললেন। তিনি গল্প বলার লোক খুঁজছেন। মুজতবা আলী অবস্থান করছিলেন দেবপাহাড়ের কাছে কার এক বাড়িতে। আমি গিয়ে দেখি তাঁর ঘরে স্কুল কলেজের অনেক মেয়ে স্বাক্ষর নেবার জন্য ভিড় করেছে। আমাকে দেখে মুজতবা আলী মেয়েগুলোকে তাড়িয়ে দিলেন। বললেন, 'তোরা এখন যা, আমি এখন এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কিছু অশ্লীল গল্প বলব।'
সেদিন মুজতবা আলী গল্পের হাট খুলে দিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে শ্লীল-অশ্লীল বহু ধরনের গল্প ছিল। একটি গল্প ছিল জনৈক শিখ সম্বন্ধে। বৃটিশ আমলে একজন শিখ সর্দার সন্ধ্যার সময় লাহোরে একটি হোটেলে উঠেছে। হোটেলের যে ঘরে উঠেছে সেই ঘরে একজন মৌলবী সাহেব অবস্থান করছিলেন। মৌলবী সাহেবের পরনে ছিল চোস্ত পায়জামা, কালো শেরোয়ানী এবং মাথায় লালটুপি। শিখ সর্দার হোটেলের বয়কে বলল, সকালে বেশ অন্ধকার থাকতে তাকে জাগিয়ে দিতে। সে ট্রেনে করে গুজরানওয়ালা যাবে। ঘরের মধ্যে কাপড় রাখবার একটিমাত্র আলনা ছিল, তার একদিকে মৌলবী সাহেব তার কাপড়-চোপড় রেখেছিলেন, অন্যদিকে শিখ তার কাপড়-চোপড় রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালের অন্ধকারে হাতড়িয়ে শিখ সরদার আলনার যে দিকে মৌলবী সাহেবের কাপড়চোপড় ছিল সেদিকে গিয়ে মৌলবী সাহেবের পায়জামা, শেরোয়ানী এবং মাথায় টুপি পড়ে রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে টিকেট কিনে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে ঢুকল। ট্রেন ছেড়ে দেবার পর কম্পার্টমেন্টের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে তো অবাক। এ কার চেহারা আয়নাতে দেখা যায়? সে ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে লাগলো, 'আমি এত করে হোটেল বয়কে বলে দিলাম সকাল বেলা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতে আর সে কিনা মৌলবী সাহেবকে জাগিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কী করি?'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন