সেই যে ভোরবেলা কলতলায় কলসি রেখে অপেক্ষার হাঁকডাক; লাইন ভেঙে কেউ একটু আগে কলসিটা ঠেলে দিলে যে কাইজ্জা, তারপর মিলমিশ হয়ে গেলে বাড়ুজ্যের গৃহে উঁকি দিয়ে দেখে আসা অন্দর মহলের ঘটনাতে রঙ চড়িয়ে ‘দৈনিক কইয়া দিমু’ সমাজের যে হাকালুকি; এসবেরই অস্থিধারণ করে তৈরি হয়েছে ট্রাইবাল জার্নালিজম।
রাঁচি বাংলা টিভি চ্যানেলে রিক্রুট করার সময় গোস্বামীর একটাই প্রশ্ন, কখনও প্রতিবেশীর গৃহে উঁকি দিয়েছ? তারপর কলতলায় এসে তারস্বরে চেঁচিয়ে রঙ চড়িয়ে গপ্পো দিয়েছ? ঐটেই ট্রাইবাল জার্নালিজমের সূতিকাগার।
চাকরি প্রার্থী ময়ূখরঞ্জন বলে, একদিন ভোরবেলা মুখুজ্যে বাড়িতে উঁকি দিয়ে দেখি; মুখুজ্যে বারান্দায় বসে এক দাড়ি টুপিওয়ালা লোকের সঙ্গে সকালের জল খাবার খাচ্ছেন। অমনি আমি কলতলায় এসে বললাম, ব্রেকিং নিউজ, মুখুজ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে প্রাতঃরাশে মিলিত হলেন।
: তোমার চাকরি পাকা ময়ূখ। যাও বাড়ি গিয়ে লাফালাফি প্র্যাকটিস করো।
চাকরি প্রার্থী বিশাখা বলে, একদিন ভট্টাচার্যিদের বাসায় উঁকি দিয়ে দেখি; স্বামী-স্ত্রী তুমুল ঝগড়া; একসময় রাগ করে বেরিয়ে গেলেন ভট্টাচার্যি মশয়। আমি কলতলায় এসে ব্রেকিং নিউজ দিলুম, ডিভোর্স হয়ে গেল ভট্টাচার্যি বাড়িতে।
: তুমি কালই জয়েন করো। অ্যাকাউন্টস থেকে টাকা নিয়ে বিলিতি মেমের মতো পোশাক কিনে নাও; যাতে আমাদের কলতলা থুক্কু স্টুডিওতে তোমায় দেখে ইন্টারন্যাশনাল লাগে। গ্লোবাল পোশাকের সঙ্গে লোকাল সাংবাদিকতা মিলিয়ে আমরা গ্লোকাল হতে চাই।
চাকরিপ্রার্থী অনির্বাণ বলে, একদিন দাশগুপ্তদের বাড়িতে উঁকি দিয়ে দেখি তারা সবাই নীরবে বসে আছে। আমি কলতলায় এসে খবর দিলাম, দাশগুপ্তরা বোবা হয়ে গেছে।
: বাহ বেশ; তোমাকেই খুঁজছে রাঁচি বাংলা। জয়েন করার আগে মৃণাল সেনের মতো একটা চশমা কিনে নিও; বেশ আঁতেল দেখাবে।
গোস্বামী তার ট্রাইবাল মিডিয়া হাউজ পলিসি পঁই পঁই করে বলে দেয়, মুসলমানদের জঙ্গী ও মৌলবাদি বলবে, সিরিয়া-আফঘানিস্তান আর পাকিস্তান শব্দগুলো তোতা পাখির মতো আওড়াবে। বাংলাদেশে হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আরাম, অন্য কেউ থাকলে হারাম। একটা কথা মনে রাখবে, তোমার দাদু পূর্ববঙ্গে একটা কুঁড়েঘর ফেলে এলেও তাকে জমিদারি বলে ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করবে। মোদিজীকে পোস্ট প্রোগ্রেসিভ নেতা হিসেবে তুলে ধরে; মোদী বিরোধীদের প্রগতিশীলতা মাপামাপি করে তাদের দেশদ্রোহী ও সন্ত্রাসবাদীর তকমা দিয়ে দেবে।
চাকরি পেয়ে খুশি ট্রাইবাল জার্নালিস্টরা পুলকে, ওয়াহ গোস্বামীজী ওয়াহ বলে ওঠে।
গালে একটা সুপোরি পুরে অনির্বাণ ভস ভস করে বলে, মার্শাল ম্যাকলুহান আর কী জানে সব জানেন আমাদের গোস্বামী দাদু।
রাঁচি বাংলার স্টুডিও তৈরি হয় কলতলার নক্সায়। সেইখানে দৌড়ে দৌড়ে ব্রেকিং নিউজ দেওয়া শুরু করে ময়ূখ। এর মধ্যে এক কেলোর কীর্তি হয়ে যায়। ছাত্রজনতার তাড়া খেয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে আসেন।
বাংলাদেশে সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি খ্যাসখ্যেসে কন্ঠে রায় দিয়ে দেন, মৌলবাদীরা ক্ষমতা দখল করেছে।
ন্যারেটিভের কিউ পেয়ে কলতলা কলিং ব্রেকিং নিউজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হিজবুত তাহরির বলে তকমা দিয়ে দেয় ট্রাইবাল জার্নালিস্টেরা। তারা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে মোদিজী বলে ডাকলেও বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ইউনূসকে শুধু ইউনূস ইউনূস ডেকে চেঁচাতে থাকে কলতলা কালচারের কলকলানিতে।
কলকাতার তরুণেরা ইউটিউবে ট্রাইবাল জার্নালিস্টদের গদি মিডিয়ার পোষ্য বলে অভিহিত করলে; রেগে টং হয়ে ময়ূখ তাদের ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাবার নির্দেশ দেয়।
এক মোদির গর্বেই মাটিতে পা পড়ে না; এর মধ্যে ট্রাম্প এমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাঁচি বাংলায় ট্রাম্প ঠাকুরের পূজা অর্চনা শুরু হয়।
কলতলা কলিং স্পেশাল ট্রান্সমিশনে বিপাশা চেঁচিয়ে ওঠে, ইউনুস ভ্যানিশ হয়ে গেল; যে প্যারিস থেকে এসে ক্ষমতায় বসেছিল, সেই প্যারিসে গেছে চিকিৎসার নামে। আর কী ফিরবে বাংলাদেশে।
মৃণাল সেনের চশমা পরে অনির্বাণ গালে সুপোরি পুরে ভসভস করে বিশ্লেষণ করে, ইউনূসের মার্কিন প্রভুর পতন ঘটেছে। ট্রাম্প জঙ্গীবাদ দমনে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের এই জঙ্গী সরকারের পতন অত্যাসন্ন। শীঘ্রই হাসিনা ফিরবেন বজরাঙ্গী সরকার গঠন করতে।
এই কলতলা কলিং ট্রান্সমিশান দেখে আশায় মরে চাষা; আওয়ামীলীগ, বিজেপির গোত্রনাচ শুরু হয় ট্রাম্পের বিজয়ে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতীক হাতি। সে হাতিকে গেরুয়া পতাকায় সজ্জিত করে স্টুডিওতে প্রবেশ করে ময়ূখ। চোখ দুটো মার্বেলের মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, এখন কোথায় ইউনূস।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন