তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম

১৮২ পঠিত ... ১৬:৪৫, অক্টোবর ২৮, ২০২৪

11

রাত বারোটা বাজলে ফেসবুকের এতিম পেজে ভূমি হোসেন একটা ভিডিও পাঠায়। সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস রুমে ঢুকে পড়েছে এক ক্ষ্যাপাটে যুবক। টিশার্ট ট্রাউজারের সঙ্গে পাগড়ি পরা যুবকটিকে ললিতা আপা জঙ্গী বলে পরিচয় করিয়ে দেয় ফেসবুকবাসীর সঙ্গে।

ললিতা আপা আহাজারি করে, বিপ্লবী ইসলামিক রিপাবলিক স্টেট অব বাংলাদেশ! লাঠি দিয়ে ভয় দেখানো হাউ ডু ইউ ফিল গাইজ!

অমনি সে পোস্টে এসে শিবব্রত দাদা মন্তব্য করে, খিলাফত এসে পড়েছে; নারী-পুরুষ একসঙ্গে ক্লাস হতে দেবে না এরা। নারী শিক্ষা বন্ধ।

খাওন বুবু এসে জিজ্ঞেস করে, জঙ্গীটা কি উর্দু গান গাইছে?

ললিতা আপা চোখ টিপ দিয়ে বলে, পেয়ারে পাকিস্তানের গান গাইছে।

ঐ ক্লাসে উপস্থিত এক জেন জি জানায়, তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, কী দোষ দিবি তাতে? গানটি গাইছে, ভালো করে শুনে দেখেন।

সহমত ভাই আক্ষেপ করে, ইউসুফ সরকার হইলো হামিদ কারজাই। আম্রিকা তারে পাঠাইছে। বাংলাদেশ আফঘানিস্তান হইব।

অনির্বাণ সরকার নামে এক অত্যন্ত মোদি প্রগতিশীল লোক এসে টিপ্পনি কাটে, লোকটা হয়ত সাইদির আশীর্বাদপ্রাপ্ত।

জেন জি বলে, সাইকিয়াট্রির ক্লাসে ঢুকে পড়েছিল ছেলেটি; ছাত্র ছাত্রীরা ভয় পেয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। পরে দায়িত্বরতরা ছেলেটিকে বের করে নিয়ে যায়। অযথা আপনারা ভারতীয় মিডিয়ার ‘বাংলাদেশ মৌলবাদের খপ্পরে’ প্রোপাগাণ্ডায় হাওয়া দিচ্ছেন!

অনির্বাণ রেগে যায়, ওসব কথা বলুনি; জঙ্গীরা মধুদার মন্দিরে গরু নিয়ে হাজির হয়েছে, ছ্যা ছ্যা ছ্যা আমি ভাবতে পারছি না; মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মধুদার এত বড় অপমান!

জেন জি উত্তর দেয়, ঐ মধুর ক্যান্টিনে বসে দিনমান ছাত্রলীগের গরুরা কাকে কোথায় ঢুঁশ মারতে হবে তার পরিকল্পনা করত। তাই ছাত্রলীগের পলাতক দুটো গরু এনেছিল সাধারণ ছাত্ররা; ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হবার খবর শুনেই।

মুকুল মালাকার এসে গর্জন করে, ইতরামিটা বেশি হয়ে গেল। 

: ইতরামিতে ছাত্রলীগের রেকর্ড ভাঙ্গার সাধ্য কারও নেই। ক্ষমতার গরু হারিয়ে আপনারা আসলে বেসামাল হয়ে পড়েছেন।

১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার ছাত্র-গণহত্যাকে সমর্থন করে নরভোজি হয়ে ওঠা ললিতা আপা, সহমত ভাই ও শিবব্রতদাদা; যখন মধুর ক্যান্টিনে দুটি ছাত্রলীগের প্রতীক গরু এনে মজা করার অ্যাসথেটিকসহীনতা নিয়ে আলাপ করে; ওয়াশিংটন পোস্টের ভুয়া ফটোশপ পেজ শেয়ার করে সেনাপ্রধান বিষয়ক গুজব ছড়ায়; সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস রুমে জঙ্গীর প্রোপাগান্ডা ছড়ায়; তখন তাদের মনের গোয়াল ঘরের গোবরের গন্ধ মৌ মৌ করে ফেসবুকে।

ফ্যাক্টচেকাররা ক্লান্ত হয়ে পড়ে প্রায়, প্রতি রাতে আই কিউ সেভেন্টি ফোর লীগ যখন ‘গু’জবের চিন্তাগোবর নিকিয়ে দিয়ে যায় ফেসবুকে। কখনও ডাকাত এসেছে ডাকাত এসেছে, কখনও ছিনতাইকারী এসেছে, কখনও আনসার এসেছে, কখনও ঐ তো বুবু দেশে ঢুকে পড়েছে ভাতারের দেশের সেনা নিয়ে, কখনও বা শুধু বেছে বেছে ভটভটি আপার হ্যারাসমেন্ট কেসের আদলে ‘যেই না তার চেহারা নাম রেখেছে পেয়ারা’র নতুন নতুন হ্যারাসমেন্ট কেস সাজানোর রুপকথা, কখনও বা ইউসুফ সরকারের হার্টে রিং পরানোর গল্প; এই সমস্ত প্রোপাগান্ডার থিম সং ঐ একটাই, তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, কী দোষ দিবি তাতে?

কোথায় গেল সে গণভবনের পিঠাপুলির আসরে বুবুর সঙ্গে সাদা সাদা কালো কালো গান গাওয়ার দিন, ফেসবুকে প্রথম প্রজন্মের পাহাড় প্রমাণ আত্মবিশ্বাসে সংস্কৃতি শেখানোর দিন, গেরুয়া বসন পরে কপালে চন্দনের ফোটা দিয়ে দাড়ি টুপি নিয়ে খিল্লি খেলে, নিজেদেরকে বড্ড ইউরোপীয় অ্যানলাইটেনমেন্টের ট্রেন্ডি লোক প্রমাণের দিন, কপালে সিঁদুর দিয়ে হিজাব নিয়ে হাহাহাহা করে কলতলায় ফ্যাশান প্যারেডের দিন। কি বিরাট সব কেইট উইন্সলেট এসে পড়েছেন জরিনা-সখিনা ও কল্পনা-আল্পনার উকুন তোলার আসরে।

জরিনা ও আল্পনার চোখে মুখে মিথ্যা বলার দক্ষতা; ললিতা-সহমত-শিবব্রত সেই ট্যালেন্ট হান্টিং করে; গুজব শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে।

রাত বারোটায় এতিমকে মিসডকল দিলে, সে একটা গুজব আইটেম দেয়; তারপর তা নিয়ে শুরু হয় ‘গেল গেল রবের শীতকার।‘ ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ফ্যাক্টচেকাররা সে গুজব চিহ্নিত করলে; নেতিয়ে পড়ে উত্তেজনা। প্রতিরাতের প্রোপাগান্ডা ফোরপ্লের এরকম ইনসোমনিক অপচয় হলে, কুঁ কুঁ করে ললিতা-সহমত-শিবব্রত বুকে বুবুর ছবি নিয়ে গাইতে থাকে, তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, কী দোষ দিবি তাতে?

১৮২ পঠিত ... ১৬:৪৫, অক্টোবর ২৮, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top