গ্রেগর সামসা ঘুম থেকে উঠে প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়; এভাবে ঘরকুনো হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে চলবে না। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের যে অভিজাত জমিদার বাড়ি; সেইখানে লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বালিশ নিয়ে শুয়ে ন্যারেটিভ মামা ও খালা।
গ্রেগর সামসা এই জমিদারতন্ত্র বিলোপের জন্য কী ধরনের অ্যাক্টিভিজম হতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে। বিস্তর গবেষণা করে দেখে প্রথম আলোর জমিদার বাড়ির লোকেরা জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের লোকের মতো পোশাক-আশাক পরে লোকজনকে প্রগতিশীলতা শেখায়; মাঝে মাঝে ঘটা করে তাদের সার্টিফিকেট দেয়। আর ডেইলি স্টারের লোকেরা শেক্সপিয়ারের পরিবারের লোকের মতো করে পোশাক পরে; এংলো স্যাক্সন যুগের চসারীয় ইংরেজিতে এমন কঠিন করে ইংরেজি লেখে; যাতে পাঠক ভয় পেয়ে তাকে ইংরেজির জমিদার হিসেবে মেনে নেয়।
কভিডের পর অনেক যুবক ছেলে দাড়ি কাটা ছেড়ে দিয়েছে; তারা সেটাকে রবীন্দ্রনাথের দাড়ি বলে ঘোষণা দিয়ে প্রথম আলোতে ঘোরাঘুরি করে। আর শেভ করার আলস্যে সেটাকে শেক্সপিয়ারের দাড়ি বলে ঘোষণা দিয়ে ডেইলি স্টারে ঘোরাঘুরি করে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে অ্যাক্টিভিজমে দাড়ি দেখালে তারা ভয় পাবে না; এটা ধারণা করে গ্রেগর সামসা।
তাই ভাসানীর টুপিকে গ্রেগর বেছে নেয়। ভাসানী যেহেতু প্রতিবাদ সভায় বাধা পেলে রাস্তায় নামাজ পড়ে প্রার্থনার সময় দাবি-দাওয়ার কথা বলতেন; সুতরাং গ্রেগর প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সামনে দাড়িওয়ালা বন্ধুদের মাথায় টুপি পরিয়ে নিয়ে গিয়ে নামাজ পড়ে।
তারা নামাজের সময় আল্লাহু আকবর বলে উঠলে; জঙ্গী হামলার ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মীরা। গত দেড় দশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সৈনিকেরা ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সামনে পটকা ফুটিয়েছে, পত্রিকা পুড়িয়েছে, ভুল বানানে বয়কট লিখে দিয়ে গেছে তেজগাঁও কলেজের ছাএলীগ নেতা। তখনও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মীরা এভাবে অজ্ঞান হয়ে যেত। শেখ হাসিনা গণভবনের ‘প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি’-র আসরে যেদিন বলেন, আমি গণভবনে ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা ও এর সাংবাদিক ঢুকতে দেই না; অমনি আওয়ামীলীগের আলফাডাঙ্গা ও গোবরডাঙ্গার লোকেরা পত্রিকা দুটির সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই তো কিছুকাল আগে প্রথম আলোতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ‘মাছ-মাংসের স্বাধীনতা’ চাইলে হারপিক পান করে সাড়ে চুয়াত্তর টিভি নেমে পড়ে এটা প্রমাণে যে বাংলাদেশের মানুষ তিনবেলা মাছ-মাংস খায়। সুতরাং প্রথম আলো উন্নয়নকে হিংসা করে।
সাধারণ মানুষ হয়ত সাংবাদিককে গরিব চেহারায় দেখতে চায়, করুণা করতে চায়; সাংবাদিক নিয়মিত বেতন ভাতা পেয়ে সুখে কাজ করে; এই সুখটা আম্মিজনতা, বিম্পিজনতা কেউই সহ্য করতে পারে না।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পড়ে পড়ে যারা যথেষ্ট আধুনিকা হয়ে উঠেছেন; তারা এমনিতে ছাদে কিংবা লনে বার বি কিউ-এর ছবি দেয় সারাবছর। কিন্তু ঠিক কোরবানি ইদের আগে তারা শুরু করে ভিগান লাইফস্টাইলের গুরুত্ব বর্ণনা। ভারতের বিজেপি দলটিকে তাদের কাছে খুবই প্রগতিশীল মনে হয়; যেহেতু তারা কীর্তন গায়, পুজোর সময় নাচে। নাচ-গান করলেই যেহেতু প্রগতিশীল; সুতরাং তারা গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার অভিযোগে মানুষ হত্যা করলে; প্রচণ্ড গরুর মাংস বিরোধী সবজি প্রগতিশীল হয়ে পড়ে ফেসবুকের কিছু আপ্পি ও ভাইয়া।
গ্রেগর সামসা তাই ঠিক করে, ভাসানীর মতো দাড়ি-টুপি পরে নামাজ পড়া দেখে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মীরা যেখানে এত ভয় পেয়েছে; কাজেই গরু জবাই ও রান্না করতে দেখলে তারা পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যাবে।
কিন্তু ফল হয় উলটো। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ এক মুসলিম পীরের ভক্ত ছিল। সেই পীরের বাড়ির গরুর গোশত রান্নার সুগন্ধ ঠাকুর বাড়িতে এসে পৌঁছানোর অভিযোগে কলকাতার ব্রাহ্মণেরা ঠাকুর পরিবারের ব্রাহ্মণ মর্যাদা কেড়ে নেয়। ঠাকুর পরিবারে কলকাতার কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায়; খুলনা গিয়ে বিয়ে করতে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে। আর শেক্সপিয়ারের পরিবারে গরু, ভেড়া, শুকর কোনো মাংসেই অরুচি ছিল না। এ কারণে গরুর গোশত রান্নার মৌ মৌ গন্ধ এসে পৌঁছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে; কর্মীদের নাসারন্ধ্রে সুড়সুড়ি দেয় সে সুগন্ধ।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে সমঝোতা করতে আসা লোকেরা কোট-প্যান্ট পরা গ্রেগর সামসাকে বলে, ভাই তোমার যত প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হয় করো; কিন্তু গরুর গোশত আর খিঁচুড়ি আমাদের না দিয়ে খেও না। প্রথম আলোর জানালা দিয়ে একজন বলে, সামসা ভাই শুধু গোশত পাঠালেই হবে, নান আমরা স্টার-কাবাব রেস্তোরা থেকে আনিয়ে নিতে পারব।
ওদিকে কলকাতার অতিরঞ্জনবাজার পত্রিকায় শিরোনাম হয়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে জঙ্গী হামলা। রাঁচি বাংলা টিভির ময়ূখরঞ্জন দৌড়ে স্টুডিওতে ঢুকে ডিগবাজি দিয়ে বলে, ইউসুফ সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতা কই? মৌলবাদিরা জোর করে গো-মাংস খাওয়াচ্ছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে!ও তুলসি গ্যাবার্ড দিদি, গোমাতার অমর্যাদায় চুপ করে থেকো নাকো আর; কিছু একটা করো।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন