স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতের নিয়োগ ছিলো গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে উপযোগী পদায়ন। তিনি মাত্র এক সপ্তাহে ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনী সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।
কিন্তু তার একটি বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে প্রতিবিপ্লবের কল্পনা বাদ দিয়ে দল গোছাতে বলায়; একদল উত্তেজিত জনতা তার পদত্যাগ দাবি করে। মি সাখাওয়াত কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট বা সংকট ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি পলাতক আওয়ামী লীগকে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের বিকল্প দেখিয়েছিলেন। অন্ধ এন্টি আওয়ামী লীগাররা এটা পছন্দ করেনি।
তার আরেকটি বক্তব্য ছিলো বিজিবির প্রতি, বিএসএফ-এর সঙ্গে পিট দেখাবেন না; বুক দেখাবেন। এর অর্থ ভয় না পেয়ে মুখোমুখি হবেন। এই বক্তব্যটি আরেকদল মানুষকে উত্তেজিত করে। অন্ধ ভারতপ্রেমীরা এটা পছন্দ করেনি।
ফলে দুটো ইন্টেরেস্ট গ্রুপ সাখাওয়াতকে থ্রেট মনে করে। বিপরীতমুখী দুটি গ্রুপ এক জায়গায় আসে তাকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে সরাতে। বাংলাদেশে একজন শিক্ষিত, যোগ্য, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন, প্রফেশনাল ও ইমপ্রেসিভ মানুষের শত্রু ঠিক এইভাবে প্রতিটি ইন্টেরেস্ট গ্রুপ।
সাখাওয়াতকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় ক্ষতি হলো দেশের। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করলো সাধারণ মানুষ। পতিত আওয়ামী লীগের কালচারাল সাব অল্টার্নরা জানে কি করে সুসংবাদ জড়ো করে এনে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সফল দেখাতে হয়; আর দুসংবাদ জড়ো করে এনে ইউনুসকে অসফল দেখাতে হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এইতো তারা করছে। ফলে বিএনপির শাসনামলের দুসংবাদগুলো আর্কাইভে রেখে তারা ৫০ বছর ধরে দেখাচ্ছে।
শেখ হাসিনার নির্দেশে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়ে পুলিশ মানসিক শক্তি হারিয়েছে। পুলিশের এই মানসিক দুর্বলতার সুযোগে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পুলিশ বাহিনীকে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজন ছিলো সাখাওয়াতের মতো অভিভাবক। যিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। যিনি জানেন কি করে সৈনিক ও ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হয়। আর ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতই উপদেষ্টাদের মধ্যে বিরলপ্রজদের একজন যিনি হাসিনার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে নিয়মিত পত্রিকায় লিখেছেন, টকশোতে কথা বলেছেন। জুলাই মাসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে না দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন সেনাবাহিনীকে। গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করেন তিনি।
‘হীরা ফেলে কাঁচ তুলে ভিখিরি’ হবার নিয়তি কথায় কথায় উত্তেজিত আর সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়া লোকজনের। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে সরানোর হঠকারিতা সেই ভিখিরি মানসিকতার প্রতিফলন।
যে কোন গণ অভ্যুত্থানের পর দুটো জিনিস জনমনস্তত্বে জায়গা করে নেয়। গণবিষাদ আর গণবিশৃংখলা। ৫ অগাস্টের পর দেশ কেন দ্রুত বেহেশত হয়ে যাচ্ছে না; এই ইউটোপিয়ায় কিছু মানুষ গণবিষাদে আক্রান্ত হলেন। আর সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদার আর্কাইভ তো আছেই। ফ্যাসিজমের পতনে বেকার হবার পর তাদের কাজ ঐ একটাই, ছিদ্রান্বেষণ ও ছিদ্রের মাঝে আঙ্গুল চালিয়ে তা বড় করে তোলা। আর প্রতিটি বিপ্লব বা গণ অভ্যুত্থানের সময় দায়িত্ববান হয়ে ওঠা চোর, ছিনতাইকারী, ধর্ষকরা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায়িত বোধ করে। কারণ তার হাতে রয়েছে অভ্যুত্থানকারীর কার্ড। তারা জানে পুলিশ বাহিনী এখনো নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে পারেনি। সুতরাং তারা দ্বিগুন উতসাহে অপরাধ করতে লেগে পড়ে। এইখানে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতের মতো প্রফেশনাল লোক থাকলে; তিনি অপরাধীদের সঙ্গে মাইন্ড গেম খেলতে পারতেন। সব সময় অপরাধীকে নিষ্ক্রিয় করতে অস্ত্র ও পেশী লাগে না। তার মধ্যে শাস্তির ভীতি তৈরি করতে পারলেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায়।
দায়িত্বরত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মূল দূর্বলতা উনার কথা বলার ভঙ্গির মাঝে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনিও প্রশিক্ষিত। সংকট ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ তারও আছে। কিন্তু তার বাক সক্রিয়তায় আত্মবিশ্বাস ও আস্থার অভাব আছে। কন্ঠস্বর কিংবা কথা বলার স্টাইল প্রকৃতি প্রদত্ত। এর ওপর মানুষের নিজের হাত থাকে না। তাই এসব বিষয়ে সমালোচনা করা অর্থহীন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সাধারণ মানুষের একটাই দাবি, জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ধর্ষক, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মাজার ভাঙ্গা গ্যাং, সাংস্কৃতিক আয়োজনে বাধা দেয়া গ্যাং এদের দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতার করে আইনানুগ পদ্ধতিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই কাজে কোন শৈথিল্য জনমানুষ সহ্য করবে না।
যে কোন গণ অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের দায়িত্ব ঐক্য ধরে রাখা। সামাজিক ও কম্যুনিটির ঐক্য ধরে রেখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। এইসময় বন্ধু সেজে যারা এসে কুঁচকুঁচ করে বলে, সামনের দিনগুলোতে সাবধানে বাঁচুন, সন্ধ্যা হতেই দরোজায় সিটকিনি দিয়ে কানে তুলা গুঁজে বসে থাকুন, বাচ্চারা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো নইলে ভুত আসবে; এরা বন্ধু নয়; কালচারাল সাব অল্টার্ন, এরা চায় মানুষ ভয়ে গুঁটি সুটি মেরে থাকলে আবার হেলমেট পরে ফিরে আসতে পারবে ফ্যাসিজমের রবার্ট মুগাবে। ওরা ভারতের মুখপানে চেয়ে আছে; মাদার অফ ফ্যাসিজমকে ফিরিয়ে এনে গদিনশীন করবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন