আপনারা সবাই সিরাজুল আলম খানের নাম তো জানেন। তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা মনে করতেন তিনিই মুক্তিযুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড। সারা জীবন অভিমান করে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন তিনি। তিনি জাসদ গড়ে তুলে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েছিল।
ভারতে বসে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। তার ভক্তরা মনে করেন তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড। তার পরিণতিও আপনারা জানেন।
মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক ছিলেন আতাউল গনি ওসমানী। তিনিও ছিলেন মাস্টারমাইন্ড।
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মেজর জিয়া।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মনে করতেন তিনিই মাস্টারমাইন্ড। জেনারেল জ্যাকব মনে করতেন তিনি মাস্টারমাইন্ড। মানেকশ মনে করতেন তিনি মাস্টারমাইন্ড।
প্রবাসে বসে যারা বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন তারা মনে করতেন তারাই মাস্টারমাইন্ড।
এরকম অনেক মানুষ মনে করেন তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড।
তবে পাওয়ার গেমটা অন্যভাবে কাজ করে। যখন অসংখ্য মানুষ যখন কোনো বড় কাজের জন্য ক্রেডিট দাবি করে এবং শতাধিক মানুষ পরস্পরের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব কর্তৃত্ব ও অবদান নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন সেটা প্রশমিত হয় শেখ মুজিবের মতো চরিত্রের মধ্য দিয়ে। বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে প্রশমিত করতে একজন সকলের ক্রেডিট নিয়ে নেয়। একজন ব্যক্তি একটি পরিবার তখন সবকিছুর কেন্দ্রে চলে আসে। নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে সংঘাতের ফলেই শেখ মুজিবের মতো কর্তৃত্ববাদীর জন্ম হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমি শত শত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের গল্প শোনার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব একটা গল্প আছে। এবং অধিকাংশ মানুষই মনে করেন তিনি জুলাই ঘটনাবলীর কেন্দ্রীয় চরিত্র। বড় কোন ঘটনা ঘটলে এমনই হওয়ার কথা। আমার কাছে মনে হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ যারা করেছেন তারা প্রত্যেকে ব্লাইন্ড গেম খেলেছেন। তাদের সামনে ছিল শেখ হাসিনার মতো একটা পাগলা হাতি। প্রত্যেকে অন্ধের মতো সেই হাতিটিকে সরানোর চেষ্টা করেছেন। কেউ লেজ ধরে টেনেছেন কেউ পা ধরে টেনেছেন কেউ কান ধরে টেনেছেন। কারো কাছে তার ভূমিকা লেজ ধরে টানার। কারো কাছে পা ধরে টানার। কারো কাছে কান ধরে টানার। কারো কাছে দেহ ধরে টানার। কারো কাছে শুঁড় ধরে টানার।
কারও গল্পই মিথ্যা নয়। এত বড় একটা ঘটনা একজন ব্যক্তি একটি গোষ্ঠী একটি শ্রেণী একটি মতাদর্শের কারণে ঘটে না।
এই সত্যটা না বুঝলে আমরা আসলে কিছুই বুঝবো না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন