লেখা: এম হাসান
প্রত্যেকের কাছে জুলাই অভ্যুত্থানের গল্পের আলাদা আলাদা ভার্সন আছে।
এখানে এত মত আর এত পথের মানুষ এসে মিলছিল... যে প্রত্যেকেই এক একজন মাস্টারমাইন্ডের ভূমিকা পালন করছে।
ধরেন... নেট যখন বন্ধ ছিল, তখন বাংলাদেশে থাকা কাশ্মীরি/নেপালিসহ বিদেশি স্টুডেন্টরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছিল। এই সময় ওদের কাছে ভিডিও পেন ড্রাইভে করে বাইরে পৌঁছানোর ট্রাই করছিল অনেকেই। সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে। এই একই উদ্যোগ অনেকে আলাদা আলাদাভাবে নিছে।
কেউ কিন্ত কাউকে চিনত না।
একটা বার্তা সংস্থার নিজস্ব অবকাঠামো ব্যবহার করছিল কেউ কেউ।
যে বামদের গালিগালাজ করি আমরা, সে বামদের ছোট্টো একটা গ্রুপের উদ্যোগেও ভারত থেকে ভিডিও সারা পৃথিবীতে পাঠাবার চেষ্টা হইছে।
এটা গণঅভ্যুত্থান ছিল ভাই।
এইটা জাস্ট পাগলামি ছিল। পাগলামি না হইলে গণঅভ্যুত্থান হয় না।
এখানে শিবিরের স্ট্রাকচার ইউজ হইতেই পারে। ছাত্রদলের ম্যান পাওয়ার ইউজ হইতেই পারে। বামদের কালচারাল পাওয়ার ইউজ হইতেই পারে।
এই জন্যই তো এটা গণঅভ্যুত্থান।
এখানে সবার কন্ট্রিবিউশন আছে।
কিন্ত এই কন্ট্রিবিউশনের কারণে অভ্যুত্থান কারও বাপের সম্পত্তি হয়ে যায় না।
আপনাদের বুঝতে হবে,
মানুষ জাস্ট পাগল হয়ে গেছিল বাচ্চাদের লাশ দেইখা।
যে সারাজীবনে পলিটিক্স করে নাই এবং ভবিষ্যতেও করবে না, এরকম হাজার হাজার প্রবাসী ওই সময় রাত্রে ঘুমাইতে পারে নাই।
ওয়ান ফাইন মর্নিং বিদেশিরা হাঁটতে বের হয়ে দেখছে ভার্সিটি পড়ুয়া কিছু বাংলাদেশি পোলাপান ব্যানার নিয়ে দাঁড়াইয়া হাউ-মাউ করে কান্না করতেছে।
বাংলাদেশি প্রবাসী পোলাপান লিটারেলি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মেইল বক্স মেইল করতে করতে ফাটাইয়া ফেলছে। নিজ উদ্যোগে বিক্ষোভ করছে।
ওমানে শ্রমিকরা মিছিল করতে গিয়ে তো জেলেই ঢুকে গেল।
এইটা আপনি কোন মাস্টারপ্লান দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন?
ছাত্রদল-ছাত্র শিবির এর যে পোলাপান সো কল্ড মাস্টারমাইন্ডদের সাথে কানেক্টেড ছিল না, তারা তো ৪ তারিখেও জানত না ৫ তারিখ সরকার পরে যাবে।
ইসলামিক শাসনতন্ত্র বা হেফাজত বামের লোকদের সাথে দাঁড়াবার আগে একবারও জিজ্ঞাসা করেনি তাদের ধর্মি বিশ্বাস কি? তারা আস্তিক না নাস্তিক?
বামের যে পোলাপানগুলো নিজ উদ্যোগে মৌলবাদীদের দোসর হবার ট্যাগ খাবার রিস্ক নিয়ে জেনে-শুনে মিছিল করছে, তারাও তো জানত না আদৌ হাসিনা পড়বে নাকি?
দুই তারিখ বামদের দ্রোহ যাত্রা প্রোগ্রামের ইম্পাক্ট কি আপনি-আমি অস্বীকার করতে পারব?
কিংবা শিবির কারফিউয়ের মাঝে যে রোল প্লে করছে সেটা?
ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেরা যাত্রাবাড়ি সহ বিভিন্ন পয়েন্টে নামছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসার অনুরোধ করতেছে এক ছাত্রদল নেতা। এটার ইমপ্যাক্ট বুঝেন?
অস্বীকার করতে পারবেন?
প্রোফাইল পিকচার লাল করার চেয়ে কত বিশাল ইম্প্যাক্ট ছিল, এইটা আপনি-আমি অস্বীকার করতে পারব?
এইটা একটা অনিশ্চিত যাত্রা ছিল।
যেখানে সব দল-মত-পেশার মানুষ এক সাথে নেমে আসছিল হাসিনাকে নামাইতে।
আমি এমন লোককে চিনি যে পুরা মাসের বেতন তুলে দিছিল আন্দোলনের জন্য।
মোড়ের দোকানের যে ব্যবসায়ী সুযোগ পাইলে পানির দাম ১০ টাকা বাড়াইয়া দেয়, সেও ফ্রিতে কেসের পর কেস পানি দিছে পোলাপানের জন্য।
অনেকে বলেন সর্বহারা এবং হিজবুত তাহরীররা আন্দোলনে ছিল।
থাকতেই পারে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এরকম অনেক ঘটনা আছে যারা ডাকাতি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিছিল। পরে আবার ডাকাত হয়ে গেছে।
যখন আপনার দেশের মাটি ডাকবে,
যখন আপনার ভাই মরবে,
তখন আপনার দেখার সময় নাই কে ভালো, কে খারাপ, কে ডান, কে বাম...
When your motherland bleeds, there’s no time to choose allies—grab the hand beside you and stand together in the fight!
George Orwell-এর Homage to Catalonia থেকে বলতে গেলে:
There was no clear leadership, no single mastermind. Just men and women who had had enough. In the barricades, there was no difference between the anarchist, the socialist, or the man who had never thought of politics before. When the guns began to fire, when the state came down upon them with all its might, none of that mattered. What mattered was the fight itself, the refusal to kneel.
এইটারে জাতীয় ঐক্য বলে।
এইটারে দেশপ্রেম বলে।
এই রকম ঘটনা অনেক বছর পর একবার ঘটে।
এটা খুব স্বাভাবিক রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্রেডিট নিয়ে মারামারি করবে।
তারা যে আন্দোলনের সময়টুকু এগুলো বাদ দিয়ে এক সাথে ফাইট করছে এজন্য বরং আমি কৃতজ্ঞ।
এটা থাকবে।
কিন্ত এত কিছুর ভিড়ে আমরা যেনো সাধারণ মানুষের কথা ভুলে না যাই।
আমরা যেন ৬০ বছর বয়সী সেই ভদ্রলোকের কথা ভুলে না যাই, যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্লিয়ার করে আনছিল, জাস্ট নাতির বয়সী পোলাপানগুলার চিকিৎসার জন্য।
এইটারে গণঅভ্যুত্থান বলে।
এইটারেই গণঅভ্যুত্থান বলে।
নাথিং এলস।
আন্দোলনের ভেতরের-পেছনের অনেক ইস্যুই আমরা অনেকে কম বেশি জানি। জাস্ট আন্দোলনের স্পিরিট নষ্ট হবে দেখে মুখ বন্ধ রাখতে হয়।
কিন্ত যেভাবে কামড়া-কামড়ি চলতেছে, নিজেরই লজ্জা লাগতেছে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন