লেখা: সাকিব বিন রশিদ
তৌহিদী জনতা বলেন, ইসলামিস্ট বলেন, খেলাফত বলেন; ওদের মিশন, ভিশন, কমিউনিকেশন কিন্তু খুব ক্লিয়ার। কেমন রাষ্ট্র চাই, মাজার-মুর্তি চাই কিনা, মেয়েদের খেলাধুলা চাই কিনা এই বিষয়ে অবস্থান বেশ ক্লিয়ার। রাষ্ট্রগঠনে তারা ইনফ্লুয়েন্স করছেন এবং করবেন। এটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চাই, তারা এইটা বলার সাহস পাই না। ভাবি আমরা ট্যাগ খাব। নাস্তিক, শাহবাগী, সেকুলাঙ্গার, সুশীল, বাম থেকে শুরু করে ভারতের দালাল, লীগের দালাল যেকোনো ট্যাগই আপনি খাইতে পারেন।
দেখেন ট্যাগ আপনি এমনিতেও খান। কিন্তু রাষ্ট্রের এই ট্রাঞ্জিশনের সময়ে যদি কেমন বাংলাদেশ চান এইটা মুখ ফুটে না বলেন, শুধু দূর থেকে হুম, এটা ঠিক হচ্ছে না বলে মুরুব্বিয়ানা করেন তাহলে তো হবে না। মুখ ফুটে বলতে হবে। আমরা তো ভাঙচুর করতে পারব না, কিন্তু নতুন রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক কাঠামোকে কালেক্টিভলি ইনফ্লুয়েন্স করতে পারবো। নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে আমাদের ম্যান্ডেট শোনাতে পারব। শক্ত কণ্ঠে বলতে হবে। লিখতে হবে।
ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চাই। আম্লীগের ভণ্ডামি, লোক দেখানো আর নিপীড়নের ধর্মনিরপেক্ষতা না। সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষতা।
সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার চাই। সংখ্যায় বেশি বলে এক ধর্মের মানুষ যাতে জুলুম করতে না পারে। সবার নিজ নিজ ধর্ম পালন, উৎসব পালনের অধিকার চাই। আমার বিশ্বাসের সাথে যায় না দেখে ভেঙে ফেলব, গুড়িয়ে ফেলব, করতে দেব না এই ধরনের মাস্তানি দেখতে চাই না। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, নাস্তিক, শিয়া, সুন্নি, সুফী, মারফতী সবার বাংলাদেশ চাই।
নারী-পুরুষের সমান অধিকার চাই। হ্যাঁ, চাই। আইনে, পলিসিতে, রাস্তায়, খেলার মাঠে কাউকে জোর করে বাদ দেওয়া বা গৃহবন্দী করার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
ছেলে-মেয়ে সবার খেলাধুলা, নাচ-গান, শিল্পচর্চার অধিকার চাই। মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধ করতে যদি ভাঙচুর হয়, আর রাষ্ট্র যদি সেটা থামাইতে না পারে তাহলে নারী ফুটবল টিমকে একুশে পদক দেওয়া গরু মেরে জুতা দান।
বাউল, ফকির, সাধক সবার নিরাপত্তা চাই। আখড়া ভাঙার, বাদ্যযন্ত্র পোড়ানোর, লালন উৎসব বন্ধ করার বাংলাদেশ চাই না।
পোশাকের স্বাধীনতা চাই। জোব্বা, টুপি, হিজাব, নিকাব দেখা মাত্রই জঙ্গি, জামাত, শিবির, রাজাকার, মৌলবাদী এসব ট্যাগ দেওয়া চলবে না। রাস্তায় মেয়েদের পোশাক দেখে ইভটিজিং, ক্যাটকলিং চাই না। ফেইথ পুলিশিং চাই না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা চাই।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। যদি সেই মত সাধারণ বিশ্বাসের পরিপন্থী হয় তবুও। বই, চলচ্চিত্রের উপর সরকার বা মবের সেন্সরশিপ চলবে না।
এগুলা বললে পাবলিক আপনাকে নাস্তিক ট্যাগ দিতে পারে। দিক। আপনার ধর্মের হিসাব আপনি আল্লাহর কাছে দেবেন। মেয়েদের ফুটবল বন্ধ করতে আসা ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন