আয়নাঘর নিয়ে ট্রল-সাইকি

৩০৯ পঠিত ... ১৭:৩৪, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

18

হিটলার জামানার নাতসি গ্যাসচেম্বারের মতো নৃশংসতা ঘটে গেছে হাসিনা আমলের দানবীয় আয়নাঘরে। সেই আয়নাঘর নিয়ে আওয়ামী নাতসিদের হাসি-ঠাট্টা, সাইবার ট্রল দেখে সবাই স্তম্ভিত হয়েছে।

হিটলারের নাতসি সমর্থকেরা ও আওয়ামীলীগের সমর্থকেরা; এরা উভয়েই এসেছে সমাজের অনগ্রসর অংশ থেকে। প্রবল হীনমন্যতা থেকে নাতসিরা ফ্রিডেরিশে নিটশের কল্পিত নীলরক্তের ধারণা দিয়ে নিজেদের উৎকৃষ্ট কল্পনা করেছে। আওয়ামী সমর্থকেরা হিন্দু ধর্মের শ্রেণি প্রথা অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে টুল বানিয়ে উতকৃষ্ট সাজতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু নাতসি কিংবা আওয়ামীলীগ উভয়েরই নিষ্ঠুরতা প্রকাশের মাঝে লুকিয়ে আছে এদের নিকৃষ্ট আত্মপরিচয়।

নাতসি কিংবা আওয়ামীলীগের সদস্যদের জীবনে শৈশবে ঘটে গেছে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। যা সাধারণ মায়াময় মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। আমাদের সমাজে সাধারণত শিশুদের আমরা অকুণ্ঠ ভালোবাসা দেই। কিন্তু কিছু কিছু শিশুর জীবন হয় অবহেলার ও বঞ্চনার। এই বঞ্চিত শিশুরাই বড় হয়ে কর্কশ শৈশবের প্রতিশোধ নেয়। কারও বাবা গায়ে হাত তুলেছে, মা সময় দিতে পারেনি, স্কুল-মাদ্রাসায় শিক্ষক বেত দিয়ে পিটিয়েছে। কেউ কেউ দারিদ্র্যের অগমে দুর্গমে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে চৌধুরীদের বাড়ির রাস উৎসব, ভাগ্যবান শিশুদের কাঠি লজেন্স চুষতে দেখেছে দূর থেকে। শিশুমনে যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে; তা তৈরি করেছে অনুতাপহীন নরখাদক।

আওয়ামীলীগের কিছু সমর্থক দেখবেন ফেসবুকে কিংবা ইউটিউবে কিংবা ভারতীয় টিভি চ্যানেলে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে। এ আসলে তার নিজের শৈশবের প্রতি ঘৃণা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মায়াময় ও শিশুবতসল মানুষের বসবাস। কিন্তু আওয়ামীলীগের সমর্থকেরা বেড়ে উঠছে ছোটো বড় শহরের নিম্ননগরীতে, বন্যা-খরা-বিশুষ্ক চরাঞ্চল ও জলোচ্ছ্বাস প্রবণ এলাকায়। অকথ্য জীবন সংগ্রামের কারণে অবজ্ঞা আর অবহেলায় বড় হয়েছে তারা।

এ কারণেই ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ও এইচ টি ইমাম এইসব অবহেলিত শৈশব থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের জড়ো করতে শুরু করেছেন ফ্যাসিজমের উঠোনে। এই ছেলেমেয়েরা নকশি পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, রোলেক্স ঘড়ি পরে কারণে অকারণে বিরিয়ানি ও পেস্ট্রি খেতে শুরু করেছেন। প্রতিপক্ষের লোকজনের গুম-ক্রসফায়ার ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে তারা মিষ্টি খেতে শুরু করেছেন। স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েরা বয়স অনুযায়ী এক্সপোজার পায়। কিন্তু আওয়ামীলীগের ছেলেমেয়েরা দেখবেন লেট ইয়ুথ লাভ করা লোকজন। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি কেটে গেছে অস্নাত-অতৃপ্ত-অভুক্ত। তাই ২০০৯ সালে অনেক দেরিতে যৌবন এসেছে তাদের। সে কারণে অনলাইন পরিসরকে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির না মেটা শখ ও সাধ মেটানোর জায়গা হিসেবে দেখেছে তারা। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে মনের যেসব অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষার কথা লুকিয়ে লুকিয়ে টয়লেটের দেয়ালে লিখে রাখত; ফেসবুকের দেয়ালে তা লিখতে শুরু করে।

আওয়ামীলীগের ছেলে-মেয়েদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইংরেজি ভাষাটা একেবারেই না জানা। এ কারণে বিশ্বসাহিত্য-দর্শন ও জ্ঞানের জগতের জানালা একেবারে বন্ধ তাদের সামনে। সে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে, বাবা-মা'র অবহেলা, শিক্ষকের বেতের বাড়ি, আর চৌধুরীদের বাড়ির রাস উৎসব, যেখানে তার প্রবেশাধিকার নাই। তাই সে চৌধুরী হবার স্বপ্ন লালন করে। চৌধুরী হবার গাইড বুক হিসেবে তার সামনে রয়েছে কলকাতার রায় চৌধুরী। তাই সে বেঙ্গল রেনেসাঁর নকশি পাঞ্জাবি, শাড়ি, চশমা, সাহিত্য ও ইতিহাসের সিলেবাসটাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এক সংস্কৃতির বাতিঘর বলে মনে করে। বেঙ্গল রেনেসাঁর শিক্ষা হচ্ছে পূর্ব বঙ্গের মানুষকে নিম্নবর্গের মানুষের তকমা দেওয়া। যেহেতু পূর্ব বঙ্গের কৃষক ও কারিগরের ধন-সম্পদ ডাকাতি করে বেঙ্গল রেনেসাঁর প্রাসাদ গড়ে উঠেছে; তাই আওয়ামীলীগের লোকেদেরও বাংলাদেশের মানুষকে নিম্নবর্গের ছাগু তকমা দিয়ে তাদেরই সম্পদ ডাকাতি করে ফ্যাসিজম রেনেসাঁ ঘটাতে হয়।

আর কলকাতার টিভি চ্যানেলে গিয়ে বলতে হয়, আপনি নিজেকে বাঙালি বলুন; আপনাকে আমি কুর্ণিশ করব, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কোনো ইতিহাস ও সংস্কৃতি নাই। এটা হচ্ছে সোশ্যাল ক্লাইম্বিং মেথড; গ্রামের কৃষকের ছেলে শহরের ঘুষখোর সরকারি কেরানি কিংবা কথিত অভিজাতের মেয়ে বিয়ে করে আত্মসমর্পণ, তোমরাই কালচার্ড, আর আমাদের কৃষক পরিবারে কোনো কালচার নাই বলে ওঠা। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকলে, পঠন-পাঠন থাকলে সে বুঝত, পশ্চিমা বিশ্বে এভাবে কোনো একটি শ্রেণিকে কালচারের ঠিকাদারি দেওয়া হয় না। নতুন ধনীদের সেখানে ফিলিস্টাইন্স বলা হয় বরং।

আওয়ামীলীগের ছেলে-মেয়েরা রায় চৌধুরী হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে কলকাতার পোশাক-কথা বলা ও খেলনা অভিজাত দেহভঙ্গি কপি করে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার যেরকম নির্দয় মনোভাব পোষণ করত পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতি; আওয়ামীলীগের বন্দোবস্তের জমিদারদের একইরকম নির্দয় মনোভাব আমরা তাই দেখতে পাই।

আওয়ামীলীগের সমর্থক, ফেসবুকার,ইউটিউবার, পুলিশ-প্রশাসন-সেনাবাহিনীর লোক; মোটাদাগে কর্কশ শৈশবে বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক মানবিক বোধ বিবর্জিত উপমানব বিশেষ।

কিন্তু দুঃশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে আওয়ামীলীগের জাতে ওঠার মডেল ছিল কলকাতার আউটডেটেড কালচার; আর আওয়ামীলীগ পতনের পর জাতে ওঠার মডেল হিসেবে রয়ে গেছে আওয়ামী ফ্যাসিজম কালচার। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা দেওয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী, বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে বাধা দেওয়া আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আর আওয়ামী উত্তর বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতির ভাষা, মনোভঙ্গি একই। সে একটু ওপর থেকে দেখে বাংলাদেশের মানুষকে; মানে সে নিজেই শুধু কালচার্ড আর সবাইকে কালচার শেখানোর দায়িত্বটি তার। আয়নাঘরের নিষ্ঠুরতা কিংবা শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের মানবতা বিরোধী অপরাধ নিয়ে দুটি কথা বলতে তার ঠোঁট সরে না, কিন্তু সে গরম পিঠাতে ফুঁ দেবার ঠোঁটভঙ্গি করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে ও বসন্ত উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে।

বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের নিয়ে জাতিসংঘ রিপোর্ট বিষয়ক খবরের শিরোনামে ‘মানবতা বিরোধী অপরাধ’ শব্দগুলোকে অবধারিতভাবে নিয়ে এলেও; বিবিসি বাংলা, ডয়চেভেলে বাংলা, ভয়েস অফ এমেরিকা বাংলা ও বাংলাদেশের হাসিনার অপরাধ লঘুকরণ প্রক্রিয়ার মিডিয়াগুলো ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মানবাধিকার লংঘন নিয়ে ভীষণ বিচলিত। আর ফেসবুকে আওয়ামীলীগের শিবব্রত দাদা ও ললিতা বান্ধবীগো'র ‘আয়নাঘর মিডিয়ার সৃষ্টি’ গপ্পোটা বলার সময় তাদের শরীরের কুন কুন জায়গায় ব্যথা, তা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 

৩০৯ পঠিত ... ১৭:৩৪, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top