এখন দেশটা মূলত সমন্বয়কদের, আমরা কেবল ভাড়াটিয়া। এখানে সমন্বয়করা যা বলবে, সেটাই আইন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সমন্বয়কদের চাপে পুলিশ এক ডাক্তারকে গ্রেফতার করে অবহেলার কোনো ধরনের প্রমান ছাড়া। গ্রীনলাইফ হাসপাতালের এই হতভাগা ডাক্তারের নাম সজীব নজরুল হৃদয়।
হাসপাতালে কোনো রোগী নিয়ে আসলে তাকে সমস্যার উপর ভিত্তি করে সাধারণত ওয়ার্ড, আইসিইউ বা সিসিউতে রাখা হয়। রোগীর ইচ্ছেমতো আইসিইউ বা সিসিউ এর কোনো ফ্রি ট্যুরিস্ট ভিসা এখানে নেই। আইসিইউ এর মতো ইমার্জেন্সি জায়গায় রেফার করতে হলে এর আগে অবশ্যই কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে রোগীটি আইসিইউতে পাঠানোর মতো অবস্থায় আছে কিনা। এর কারণ হলো, আইসিইউ কোনো অপশন নয়। এটি একটি রেফারাল ইউনিট। যে রোগীর চিকিৎসা সাধারণ ওয়ার্ড বা কেবিনে সম্ভব নয়, কিংবা যিনি চলমান চিকিৎসায় রেসপন্স করছেন না কিংবা ক্রমশ খারাপ হচ্ছেন অথবা যিনি গ্লাসগো কোমা স্কেলে (GCS) ৮ এর নিচে আছেন, সেসব রোগীকে শুধুমাত্র আইসিইউতে পাঠানোর নিয়ম। রোগীর লোকের সুরে সুর মিলিয়ে 'আগে আসলে আগে পাইবেন' নীতি অনুসরণ করলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর রোগী আইসিইউতে এবং মুমূর্ষু রোগী ওয়ার্ডে ধুকে মরবে।
এজন্য কোন রোগী আইসিউতে যাবে এবং যাবে না এ সিদ্ধান্ত নেবে ডাক্তার, এবং তা অবশ্যই বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর।
এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো খরচ। বেসরকারি হাসপাতালের প্রটোকল অনুযায়ী আইসিইউতে পাঠানোর আগে অবশ্যই রোগীর লোককে পরিষ্কার করে আইসিইউ এর খরচ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। কারণ হলো, বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগীই চিকিৎসার পর টাকা পয়সা দিতে পারেন না। এ কারণেই আগে থেকে স্পষ্টত জানিয়ে রাখার বিধান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এখন আমরা ঘটনায় ফিরে আসি।
ডা. হৃদয়ের গ্রেফতার।
তার অপরাধ কী ছিল? তিনি রোগীর লোকদের বলেছিলেন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি আইসিইউতে কেমন খরচ হতে পারে সে সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছিলেন। অথচ তাকে প্রটোকল মানার জন্য গালাগালিসহ হেনস্তা করল রোগীর লোক। তাদের দাবি, আইসিইউ এর খরচ নিয়ে কথাবার্তা এবং বাকবিতণ্ডায় চিকিৎসার দেরি হয় রোগীর।
এরপরের ঘটনাটি মজার।
রোগীর ছেলের শ্যালক ও তার দুইজন সহ-সমন্বয়ক বন্ধু হাসপাতালে এসে পুলিশকে চাপ প্রয়োগ করে হৃদয়কে আটক করায়। পুলিশের কি নিজস্ব চিন্তা চেতনা হারিয়ে গেছে? না। এর কারণ হলো 'সমন্বয়ক' সম্প্রতি একটি ধর্মে পরিণত হয়েছে এবং এ ধর্মকে অস্বীকার করা বর্তমানে পাপ।
এরপর রোগীর ছেলের শ্যালক ডা. হৃদয়কে প্রথম আসামি করে ওই হাসপাতালের আরও ১৬ জন বিশিষ্ট ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষের নামেও মামলা করে।
এসময় গ্রিন লাইফ হাসপাতাল মমতাময়ী মায়ের ভঙ্গিতে তাকে বলে, কোনো চিন্তা না করতে। বিষয়টি তারা 'দেখছে'। কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি দেখেছে বটে, কেবল ১ম আসামি ডা. হৃদয় ছাড়া।
এক অদৃশ্য শক্তি বলে গ্রীন লাইফ কর্তৃপক্ষ বাকি ১৬ জন এর উপর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করল। ফাইনাল চার্জশীটে আসামি রইল শুধু ডা. হৃদয়।
তবে দুঃখজনক হলো গ্রীন লাইফ হাসপাতালও ডা. হৃদয়কে চাকরিচ্যুত করে। তা তো করাই উচিত। বোধ করি চাকরিচ্যুত না করলে সমন্বয়ক ধর্মের যথাযথ সম্মান রক্ষা হতো না।
বিনা প্রমাণে সাব্যস্ত এই আসামি ডাক্তারকে কোনো প্রমান ছাড়া কোর্টে চালান করা হয়েছে। কেস ফাইল হয়েছে। জামিনের আবেদন করলেও তা মঞ্জুর হয়নি। অপরাধের কোনো প্রমান ছাড়াই জেল খাটছে এই হতভাগা ডাক্তার।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে দেশটা যদি সিন্দুক হয়, সিন্দুকের চাবি সমন্বয়কের কোমড়ে। এই আঁচলবন্দী হওয়া থেকে আমাদের বাঁচতে হবে।
Say No To ‘সমন্বয়ক যিডা কবে সিডাই’
তথ্যসূত্র: সকালসন্ধ্যা ডট কম
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন