দূর পরবাসে মন খারাপ থাকলে আমি ঢাকায় ফোন করি। প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলি। এই প্রিয়জনের তালিকাটা দীর্ঘ। সিনিয়র জুনিয়র সমবয়েসী মিলিয়ে দীর্ঘ একটা লিস্ট। এক সকালে, ঢাকায় তখন সন্ধ্যা, ফোন করলাম গুণদাকে। নির্মলেন্দু গুণ। আমার প্রিয় কবি। প্রিয় মানুষ।
আমি যখন ফোন করেছি গুণদাকে, গুণদা তখন হাতিরপুল বাজার বা নিউমার্কেটে এক মুর্গি বিক্রেতার সঙ্গে দরদামে পেরেশান। সেলফোনে আমাকে পেয়ে কোনো রকম কুশল-টুশল জিজ্ঞেস না করেই বললেন—রিটন তুমি টাইমলি ফোনটা করেছো। একটা কালো মুর্গি কেনার চেষ্টা করছি কিন্তু বিক্রেতা কিছুতেই দাম কমাচ্ছে না। এখন তুমিই একমাত্র ভরসা। দেখো মুর্গিঅলারে বইলা দামটা রিজনেবল জায়গায় আইনা দিতে পারো কী না।
আমি হাসতে হাসতে বললাম—দ্যান দাদা মুর্গিঅলারে দ্যান।
আমি শুনতে পাচ্ছি গুণদা মুর্গি বিক্রেতাকে বলছেন—এই যে ন্যান কথা বলেন। আমেরিকা থিকা কল। রিটন সাহেব লাইনে আছেন। (গুণদা মুর্গি অলার বোঝার সুবিধার্থে কানাডাকে আমেরিকা বলেছেন।) অনুমান করি মুর্গি বিক্রেতা ইন্টারেস্টিং কাস্টমারের পাল্লায় পড়েছে ভেবে গুণদার হাত থেকে ফোনটা নিলো। নিয়ে বললো—হ্যালো।
লম্বা একটা সালাম দিলাম আমি—আসসালাআআআআমু আলাইকুম।
--ওয়ালিকুম সালাম স্যার।
--আপনি ভালো আছেন?
--জ্বে ভালো আছি স্যার।
--শোনেন আপনার সামনে লম্বা দাড়ি গোঁফ আর অতি সাধারণ পাজামা পাঞ্জাবি পরা যাকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি একজন বুজুর্গ আদমি। আপনি সেটা বুঝতে পারছেন?
--জ্বে স্যার। সেইডা তারে দেখলেই বুঝন যায়।
--এমন কাস্টমার পাওয়াও কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা সবাই তাঁকে খুবই সম্মান করি। তিনি একটা কালো মুর্গি আপনার কাছ থেকে কিনতে চাইছেন আর আপনি কী না বেশি দাম চাচ্ছেন! আশ্চর্য!
--স্যার আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি স্যার। হুজুররে মুর্গিটা আমি দিয়া দিতাছি স্যার।
--শোনেন বিনা পয়সায় দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। তাইলে তিনি নিবেন না। বুঝছেন? লাভ নিবেন তবে সামান্য।
--জ্বি স্যার বুঝছি। কিনা দামেই দিমু স্যার।
--থ্যাঙ্কিউ। ফোনটা তাঁরে দ্যান।
গুণদা ফোনটা ফেরৎ নিয়ে হাসতে হাসতে বললেন—আমি জানতাম তুমি পারবা। ঠিকাছে আমি মুর্গিটা আগে লইয়া লই। থ্যাঙ্কিউ।
টেলিফোনের এই প্রান্তে আমি হাসতে থাকি আপন মনে। মুর্গি বিক্রেতাকে আমি কী কোনো মিথ্যে কথা বলেছি? বলিনি।
কবি নির্মলেন্দু গুণ আসলেই একজন বুজুর্গ আদমি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন