গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনের মুখে অবশেষে সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা থেকে তারা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে নেচে গেয়ে রং মেখে উল্লাস শুরু করেন।
তবে শুধু কি উল্লাস করলেই চলবে? এতদিনের এত 'স্মৃতি' রেখে গেলেন যে ভিসি, নানান দুর্নীতি ও অপকর্মের পরও যাকে সরাতে এতগুলো দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হয়, তাকে তো ঠিকঠাক বিদায়ও বলতে হবে, নাকি? গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্স-ভিসি নাসির উদ্দিনের উদ্দেশে তাই একটি বিদায়ী মানপত্র তৈয়ার করেছে eআরকি। অশ্রু-ভারাক্রান্ত হাতে মানপত্রটি রচনা করেছেন ভিসির পদত্যাগের শোকে এ পর্যন্ত চারবার মূর্ছা যাওয়া নাজমুল হক।
হে বহিষ্কার-অন্তঃপ্রাণ সাধক,
বশেমুরপ্রবির রাজ্যে আপনি নিজেকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক বহিষ্কার বাবা হিসেবে। বাবার শাসন আর রাগী সত্বার আলোকোজ্জল নিদর্শন সর্বদা প্রদর্শন করতে আপনার কর্মযজ্ঞের বিশাল অংশ জুড়ে রেখেছেন বহিষ্কারের ঝান্ডাযজ্ঞ। সেখানে স্নেহের ছিটেফোঁটাটিও ছিলো না। কথায় কথায় বহিষ্কারের নিদর্শন আপনার মাঝে ফুঁটিয়ে তুলেছে সন্তানকে তেজ্য করে দেয়া এক বাংলা সিনেমার চোধুরী সাহেবকে। নিজেকে একজন সফল বহিষ্কার বাবা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে নিজেই বহিষ্কার হয়ে আপনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সেই উচ্চতায় আপনার স্থায়ী বসবাসের জন্য আমাদের শুভকামনা থাকবে সর্বদা।
হে নিরলস দুর্নীতিতাপস
দুর্নীতির পথে যে কোনো বাধার সঙ্গে আপনি কখনও আপোস করেন নি। অতি বিচক্ষণ বিবেচকের মতো আপনি আপনার আত্মিয় স্বজনদের মালি, পিয়নের চাকরি দিয়েছেন। আপনার একাধিক আত্মীয়কে ডিপার্টম্যান্টের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক বানিয়েছেন তাদের যোগ্যতা না থাকা সত্বেও। আপনি চাইলেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় আপনার পরিবার পরিজন দিয়ে এভাবে টইটুম্বুর করতে পারতেন। হাতে এমন সুযোগ থাকা সত্বেও আপনি তা করেননি। আপনার এই মহান বিবেচনাবোধের 'শিক্ষা' অন্যকেও পথ দেখাবে।
হে অভূতপূর্ব মিতব্যয়ী,
মিতব্যয়িতার নিদারুণ ও সময়োপযোগী শিক্ষাও আমরা আপনার কাছ থেকে পেয়েছি। চা-পানের ক্ষেত্রে আপনি ছিলেন অনন্য মিতব্যয়ী। রূপপুরের বালিশের কভারের দামই যেখানে আটাশ হাজার টাকা, সেখানে আপনার একদিনের চায়ের বিল মাত্র চল্লিশ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য বিল তুলে নিলেও আপনি সেসব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেননি। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রোজেক্ট শুরুই করেননি। আপনি সকল কাজকে যক্ষের ধনের মতো সঞ্চয় করেছেন, ভবিষ্যতে করবেন বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকে এর আগে কেউ এভাবে ভবিষ্যৎ বিপদের সময়ে করার জন্য সঞ্চয় করেনি। এহেনও কর্মের জন্য আপনি আমাদের কাছে আদর্শ উদাহরণ হিসেবে তো থাকবেনই, একই সাথে আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকবেন দেশের আরো আরো প্রোজেক্টখোরদের কাছেও।
হে জলবায়ু পরিবর্তনের নেপথ্য নায়ক,
দেশের অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যখন গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করছে ঠিক তখন, ঠিক সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, পরিবেশ ও বশেমুরপ্রবির মাটিকে উর্বর করার জন্য আপনার প্রচেষ্টা ছিলো প্রশংসনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিকে উর্বর করে সেই মাটিতে গাছ জন্মিয়ে সেই গাছ ছুঁয়ে আসা বাতাস গায়ে লাগিয়ে সুন্দর স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পড়ালেখা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ককে উর্বর করার জন্য আপনার এই সুদূরপ্রসারী প্রচেষ্টা গোবরাক্ষরে লেখা থাকবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে। অথচ হায়, মানুষ ২ কোটি টাকার গোবরই দেখলো, পরিবেশের প্রতি আপনার ভালোবাসাটি তারা দেখলো না।
হে ধৈর্যশীলতার প্রতিমূর্তি,
শত ঝড়-ঝাপ্টার পরেও চেয়ার কামড়ে পড়ে থেকে আপনি ধৈর্যশীলতার নতুন মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আপনার চরিত্রের এই অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিশ্বের সকল প্রেমিক সমাজকে প্রেমিকার পেছনে বছরের পর বছর লেগে থাকার সাহস যোগাবে। একই সাথে সাহস যোগাবে আর্টসেলের নতুন অ্যালবামের জন্য অপেক্ষায় থাকা আর্টসেল ফ্যানদেরও।
হে সাবধানী সাধু,
পরিস্থিতি পড়তে পারার মতো গুণ যদিও আপনার ভেতরে ছিলো না। কিন্তু আপনি ছিলেন এক সাবধানী সাধু। উপরের সুপারিশ জারি সাপেক্ষে আপনি ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন ভোর রাত। আপনি শিক্ষার্থীদের সাথে যা যা করেছেন, আপনার সাথে তারা তেমন আচরণ করবে না জেনেও আপনি নিয়েছেন পুলিশি নিরাপত্তা। যদিও এক্ষেত্রেও আপনি পরিস্থিতি পড়তে পারেননি। কিন্তু "সাবধানের মার নেই" ভেবে আপনি নিরাপদে প্রস্থান করার জন্য সকল নিরাপত্তা নিয়েছেন। ভবিষ্যতে যেখানেই যান, এমন সাবধানী সাধনায় আপনার জীবন কানায় কানায় পূর্ণ থাকুক।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন