আন্দোলনের গ্রিনলিপি

১৯৭ পঠিত ... ১৮:১৫, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

12

জুলাই মনসুনের শেষের দিকে, ২৭-২৮ তারিখ হবে বোধহয়। সাধারণত শাহবাগের দিকেই জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মিরপুর হইতে রোজ শাহবাগের দিকে যাওয়ার যে ধকল, পথিমধ্যে যে পুলিশের হয়রানি, তাতে অন্তরের বিদ্রোহের জয্‌বা অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু হয়। তাই সেদিন ভাবলাম মিরপুর দশের দিকেই যাই। রওনা দিলাম, সাথে দুইজন বন্ধুরে নিয়ে। তাদের মধ্যে একজন ছিল বকর।

এই বকর টেকনোলজি, গ্যাজেট খুব ভালো বুঝে। আমরা কেউ কোনো ডিভাইস কিনতে গেলেই সে আইসা অ্যামোলেড ডিসপ্লে, অমুক প্রসেসর, তমুক ব্যাটারি বলতে বলতে হেচকি তুলত। আমরা তো আর এতশত বুঝতাম না, ভাবতাম ইংরেজি শব্দ যেহেতু বলেছে, ঠিকই হবে। শেষকালে বকর নিজে যখন একটা ফোন কিনল, সেই ফোন ২ মাস চালানোর পরেই সেইটাতে ফোনেদের প্লেগ, গ্রিন লাইন পড়ে গেল। সেইটা তখন কমনই ছিল। কিন্তু কয়েকদিন যাইতে না যাইতেই ওর ফোনের অবস্থা এমন হইল যে আমরা বুঝতাম না ফোনে গ্রিন লাইন পড়সে, নাকি গ্রিন লাইনের ফাঁকে একটুখানি ফোন। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমার বন্ধু ইনস্টায় সুন্দরীদের স্টক করা বন্ধ করে নাই। যদিও তার সেই ফোন থেকে তাদের দেখতে লাগত নানান রঙের গারদওয়ালা একটা কারাগারের ভেতর থেকে তাকায়ে আছে।

যাকগে, সেদিন আন্দোলনে বকরও ছিল আমার সাথে। দশ নাম্বার যেয়ে দেখি কোনো জমায়েত নাই, পুলিশ আগেই দখল করে বসে আছে। আমরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকলাম। এরমধ্যে সিভিলে ২-৪ জন, এবং তাদের পিছে ইউনিফর্মে আরও কয়েকজন পুলিশ মিলে আমাদের ধরল। জিজ্ঞেস করল আমরা রাস্তায় কেন, কী করতে আসছি? তারপর আমাদের মাস্ক টেনে রাস্তায় ফালায়ে দিয়ে ব্যাগ চেক করল। ভাগ্যক্রমে আমার ব্যাগে শুধু কিছু বই ছিল। হুমায়ূন আহমেদের 'ওপেনটি বায়োস্কোপ' নাটকে জাহিদ হাসানের শার্টের তলে বই থাকায় ছিনতাইকারীরা ভুড়ি গ্যালায়ে দিতে গেলেও সেই ছুরি হার্ডবাউন্ড বইতে লেগে বাঁকায়ে যায়। সেইখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ব্যাগে বই ভরে রাখছিলাম, যাতে পুলিশ বা ছাত্রলীগের ডান্ডার বাড়ি একটু কম লাগে, বা গুলি করলেও যদি বিদ্যার উপর দিয়ে যায়। ফলে, ব্যাগে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না। এরপর তারা ফোন চেক করা শুরু করল। আমার বন্ধু বকরের ফোনটাই আগে নিল। ফোন খুলে তারা দেখল গ্রিন লাইনের সাজানো সারি। অত্যন্ত বিরক্তির সাথে জিগাইলো, এগ্লা কী? গোবেচারার মতো বকর উত্তর দিল, গ্রিনলাইন। সম্ভবত ফোনের এই দশা দেখে বেচারার আর ফোন চেক করার রুচিই চলে গেল। আমার ফোন আর চেকও করল না, করলে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। তারপর থেকে বন্ধুর ফোনের গ্রিন লাইন নিয়ে আর জিন্দেগিতে মজা করি নাই, করবও না।

১৯৭ পঠিত ... ১৮:১৫, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top