জন্ম থেকে মৃত্যু: দুর্নীতি যখন আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী

২৮৮ পঠিত ... ১৮:০৪, জুলাই ১৩, ২০২৪

34

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটা কতটা ভাগ্যের তা নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তা করি না। অনেকেই বলে থাকেন, বিপদে পড়লে নিজের ছায়ারও খোঁজ থাকে না। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে একটা জিনিস আছে যা আমাদের কখনোই ছেড়ে যাবে না। একটা শিশুর জন্মের পর থেকে কৈশোর , যৌবন থেকে মৃত্যুর পর পর্যন্ত দুর্নীতি নামক এক আজব বস্তু ছায়ার চেয়ে দৃঢ় ভাবে আটকে রাখে এদেশের নাগরিকদের।

দুর্নীতি খুবই মজার একটা বিষয়। আপনি যেখানেই যাবেন সেখানেই দুর্নীতি করতে কিংবা দুর্নীতিতে সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। অর্থনীতিতে একটা কথা প্রচলিত আছে, ভোগ বাড়ার সাথে সাথে যেকোনো পন্যের উপযোগীতা কমতে থাকে। কিন্তু দুর্নীতি এমন একটা অর্থনৈতিক বিষয় যেটা কেউ যতই ভোগ করুক না কেন, উপযোগীতা কমার কোনো ধরনের সম্ভাবনা নেই।   

একটা শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তার প্রথম পরিচয় হিসেবে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ করার দরকার হয়ে থাকে। দেশের ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলোতে জন্ম সনদ ইস্যু করার জন্য যারা কাজ করে থাকেন তারা প্রত্যেকটা সনদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়ে থাকেন।

এরপর শিশু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ছোটো ছোটো রোগবালাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে কিংবা কেবিনে থেকে চিকিৎসা করার প্রয়োজন পড়লে হাসপাতালের ক্ষমতাধর ডাক্তারের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেওয়ার পরই কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায়।

একটু বড় হওয়ার পর নামী স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয় স্কুলের পরিচলানা পরিষদের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যের হাতে। স্কুল থেকে কলেজে কিংবা কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে ভাল ফলাফল কিংবা ভালো জায়গায় চান্স পাওয়ার মোক্ষম অস্ত্র হলো দুর্নীতি।

দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে চাকরির বাজারের সুনামের কথা এদেশের কারোরই অজানা নয়। লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে কিংবা লাখ টাকা খরচ করে প্রিলি রিটেন ভাইভা পার হয়ে যাওয়ার উদাহরণ বেশ অহরহই আমাদের সামনে চলে আসে।  

চাকরিরবাজের দুর্নীতি করে ঢোকার পরে যেকোনো মানুষের সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো দুর্নীতি। এটা এমন একটা কাজ যা তাকে তার জীবন কতটা বোরিং তার বিন্দুমাত্র অনুভূতি জাগতে দেয় না। ফাইলের প্রতিটা স্বাক্ষর তার নিজের দুর্নীতিমাখা হাতের একেকটা মহান শিল্পকর্ম।

ফাইলের গতি আর দুর্নীতির পরিমান খুব সমানুপাতিক বেগে কাজ করে। যত গতিতে আপনি আপনার ফাইলকে এক টেবিল পাস করে আরেক টেবিলে নিয়ে যেতে চান, আপনাকে তত বেশি পরিমাণে ঘুষ দেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।

বিদ্যুৎ, পানির মিটারের কোনো সমস্যার কারণে ভূতুড়ে বিল আসলে সেটার সমাধানে মহৌষধ হিসেবে কাজ করে ঘুষ। এই জিনিসে যেকোনো কাজ করা সম্ভব এ দেশে। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র দ্রুত হাতে পাওয়া কিংবা যেকোনো ধরনের ত্রুটি হলে অব্যর্থ অস্ত্র ঘুষ। ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রেও এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু বলা যায় না।

একজন চাকুরীজীবি তার জীবনের শেষের দিকে এসে পেনশনের টাকা তুলতে গেলে তাকে শুনতে হবে কত পার্সেন্ট টাকা তিনি অফিসে দিতে পারবেন কিংবা কোনো জমি জমার কেইসে কত পার্সেন্ট দিতে পারবেন সেটার ওপর নির্ভর করে কেইসটা কত দ্রুত সমাধান হবে। শেষে কেউ মারা গেলে তার ডেথ সার্টিফিকেট তোলার জন্য ঘুষ দিয়ে একটা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্থ জীবন শেষ করতে হয়।

ঘুষ দুর্নীতি এদেশের মানুষের জন্য আলাদিনের সেই জাদুর জ্বীন, যার কাছে চাহিবামাত্র ঘুষ দিয়ে যেকোনো কাজ হাসিল করে নেওয়া সম্ভব।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

২৮৮ পঠিত ... ১৮:০৪, জুলাই ১৩, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top